নিজস্ব প্রতিবেদক :
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দমনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই র্যাব বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১৯ মার্চ) র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদক, অগ্নিসন্ত্রাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জঙ্গিবাদ দমনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে র্যাবের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। পাহাড়েও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে র্যাব দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ধরতে সক্ষম হয়েছে। সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধেও আমাদের যথাযথ সতর্ক থাকতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। র্যাবসহ আমাদের সকল গোয়েন্দা সংস্থাকে যথাযথ ভূমিকা নিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান ছিলো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকায় এ দেশ জঙ্গিবাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর জঙ্গিবাদকে জিরো টলারেন্স হিসেবে ঘোষণা করে। মানুষ খুন, আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার পর গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা আমরা দেখেছি। জঙ্গিবাদ কখনো কোনো দেশের উন্নতি করতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদক, অগ্নিসন্ত্রাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জঙ্গিবাদ দমন, চরমপন্থী দমন ভেজালবিরোধী অভিযানসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে র্যাবের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। ডাকাতি লুটপাট বন্ধ করাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে র্যাব সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। র্যাবের ভূমিকায় আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেমন উন্নত হচ্ছি, ঠিক তার পাশাপাশি মাদকের প্রভাবও বেশি বেড়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে র্যাব যে অভিযান চালাচ্ছে তাকে আমরা সামাজিক আন্দোলন হিসেবেই গড়ে তুলছি। ইতোমধ্যে আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। তবে এ ক্ষেত্রে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে।
কিশোর গ্যাং দমনে র্যাবকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া মাদক নির্মূলে র্যাবের ভূমিকাও উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, মাদকাসক্তি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ধনিক শ্রেণি থেকে শুরু করে দরিদ্র পর্যন্ত সবখানে এর প্রভাব। একটা পরিবারে একজন মাদকাসক্ত থাকলে অশান্তির কোনো সীমা থাকে না। র্যাব মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান চালাচ্ছে তাকে সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিতে হবে। সবাইকে মাদক নির্মূলে আরও সক্রিয় হতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, কিশোর গ্যাং অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এখানে বাবা-মা’রও দায়িত্ব আছে। পাশাপাশি স্কুল, কলেজের শিক্ষকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। সেই সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদেরও এ নিয়ে কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। এতে যেমন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তার পাশাপাশি সাইবার ক্রাইমও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যপারেও সতর্ক থাকতে হবে। শুধু র্যাব নয়, সকল গোয়েন্দা সংস্থাকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে রমজান মাস। সাধারণ মানুষের যেন কষ্ট না হয় সেদিকে সবার দৃষ্টি দেয়া উচিত। রমজান হলো কৃচ্ছ্রতার মাস। আমাদের দেশে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো রমজানে কিছু মানুষের মুনাফা লাভের অভিলাস বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের যেন কষ্ট না হয় সেদিকে সবাই নজর না দিয়ে এর উল্টোটা ঘটে। অথচ এই মাস হলো কৃচ্ছ্বতার মাস। আরেকটি হলো খাদ্যে ভেজাল দেওয়া। এই বিষয়গুলো প্রতিরোধেও র্যাব ভূমিকা রাখছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের অনেক দেশই হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখনো সে পর্যায়ে যায়নি, যাবেও না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবিলা করে স্থিতিশীলতা ধরে রাখার কারণেই আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এই বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে (নিষেধাজ্ঞা) আমি বলব, এই ক্ষেত্রে কারো মনোকষ্ট হওয়া উচিত না। আমরা জানি, কিছুদিন আগে একটি দেশ যেহেতু র্যাবের ওপর একটি স্যাংশন দিয়েছিল বলে অনেকেই প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, এখানে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কারণ এটি আমাদের দেশ। আমরা রক্ত দিয়ে এর স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই আমার দেশে যারা কাজ করে, তারা কে কী করে না করে, তা আমরা জানি। বিচারটা আমরা করব, সেই আত্মবিশ্বাস রেখেই কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই, প্রথমে বোধ হয় সবার একটু মনটা খারাপ ছিল। এখন সেই চিন্তা আর নেই। আমি এটা বলতে পারি, যারা এই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করে, বাংলাদেশের একেকটা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা কেন কোন উদ্দেশ্যে করছে, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
ভালো মন্দের বিচার বাংলাদেশ সরকার করতে পারে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমি সরকারে আছি, আমি একটা কথা বলতে পারি, কে ভালো করল, কে মন্দ করল, সেটার বিচার তো আমরাই করতে পারি, করে যাচ্ছি। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ করে না, কিন্তু বাংলাদেশ করে। যে কোনো অপরাধের কিন্তু বিচার হয়।
সবাইকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, অবশ্যই সেটা আমরা নিজেরাই বলব। পরের কথা শুনে কেউ মন খারাপ করবেন না। নিজের আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে চলতে হবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।
বিরোধী কিছু শক্তি বিদেশে দেশের বদনাম করছে মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা জানি যে, দেশবিরোধী কিছু শক্তি আছে যারা বাংলাদেশ যত ভালো কাজই করুক না কেন, তারা কিছুই চোখে দেখে না। আরেকটা শ্রেণি আছে, তাদের অভ্যাসটাই হলো বিদেশিদের কাছে গিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করা।
বদনাম করার জন্য বদনামকারীরা সুবিধা পায় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এই বদনাম করে বোধ হয় তারা কিছু সুবিধা পায়। কিছু আর্থিক সুবিধাও পায় বা অন্যান্য সুবিধা কিছু একটা পায় তারা। আমাদের যারা খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে, সফলতার সঙ্গে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে তারা বদনাম করে বেড়ায়। বাংলাদেশের কোনো উন্নতি তো তাদের চোখেই পড়ে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আজ সারা বাংলাদেশে ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা করেছি। এটা সুযোগও যেমন সৃষ্টি করে আবার সাইবার ক্রাইমও বৃদ্ধি করেছে। সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধেও আমাদের যথাযথ সতর্ক থাকতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। র্যাবসহ আমাদের সকল গোয়েন্দা সংস্থাকে যথাযথ ভূমিকা নিতে হবে। এটা অনেক মানুষের ক্ষতি করে ফেলে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি মানুষের কল্যাণের জন্য, অকল্যাণের জন্য নয়। এই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছি, উন্নত হচ্ছি, আবার পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে মাদকের প্রভাব অনেক বেড়ে যাচ্ছে। মাদকাসক্ত হচ্ছে অনেকেই। এটা ধনী শ্রেণি থেকে একেবারে নিম্ন শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, একটা পরিবারে কেউ মাদকাসক্ত থাকলে সেই পরিবারের কষ্টের সীমা থাকে না। এমনটাও দেখা যাচ্ছে, মাদকাসক্ত সন্তান তার বাবা-মাকে মেরে ফেলে। মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান র্যাব চালাচ্ছে, এটা একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এই ক্ষেত্রে সবাইকে আরও সক্রিয় হতে হবে।