স্পোর্টস ডেস্ক :
রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানকে ‘আমার প্রেসিডেন্ট’ বলে একবার বেজায় বিপাকে পড়েছিলেন ইলকাই গিন্দোয়ান। এবার সেই এরদোয়ানের দেশেই পাড়ি জমালেন এই মিডফিল্ডার, যেখানে মিশে আছে তার শেকড়ও। ম্যানচেস্টার সিটিকে হৃদয়ে ধারণ করে ৩৪ বছর বয়সী ফুটবলারের নতুন ঠিকানা এখন তুরস্কের ক্লাব গ্যালাতাসারাই।
ইউরোপিয়ান ফুটবলে দলবদলের শেষ সময়ে নানা নাটকীয়তার মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে গিন্দোয়ানের ভবিষ্যতও। আন্তর্জাতিক ছাড়পত্রের অপেক্ষা অবশ্য এখনও আছে, তবে সেটি কেবলই আনুষ্ঠানিকতা।
গ্যালাতাসারাইয়ে গিন্দোয়ানের চুক্তি দুই বছরের। প্রতি মৌসুমে তার মোট পারিশ্রমিক হবে সেখানে ৪৫ লাখ ইউরো। গিন্দোয়ানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা জার্মানি। তার নিজের দেশও সেটিই। জার্মানির হয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলেছেন ১৩ বছর। তবে তার পরিবার এসেছে তুরস্ক থেকে।
গিন্দোয়ানের দাদা খনি শ্রমিক হিসেবে তুরস্ক থেকে গিয়েছিলেন জার্মানিতে। তবে তার দাদি তুরস্কেই রয়ে গিয়েছিলেন সন্তানদের নিয়ে। পরে সময়ের পরিক্রমায় একটা পর্যায়ে গোটা পরিবার পাড়ি জমায় জার্মানিতে।
২০১৮ সালে তুর্কি বংশোদ্ভুত আরেক জার্মান তারকা মেসুত ওজিলের সঙ্গে মিলে লন্ডনে এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন গিন্দোয়ান। তখনই এরদোয়ানকে ‘আমার প্রেসিডেন্ট’ বলে উল্লেখ করায় জার্মানিতে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে।
জার্মানিতে বিভিন্ন ক্লাবের একাডেমি ও যুব দল হয়ে পেশাদার ফুটবল শুরুর পর একটা পর্যায়ে পাঁচ বছর ছিলেন তিনি বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে। সেখানে বুন্ডেসলিগা জিতেছেন, কাপ জিতেছেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলেছে। পরে খেলেছন বার্সেলোনাতেও। তবে ক্লাব ফুটবলে তার মূল পরিচিতি ম্যানচেস্টার সিটির গিন্দোয়ান হিসেবেই। তার ক্লাব ক্যারিয়ারের গৌরবময় অধ্যায়জুড়ে আছে এই ইংলিশ ক্লাবই।
পেপ গুয়ার্দিওলা ম্যানচেস্টার সিটির কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার প্রথম সই করানো ফুটবলার ছিলেন গিন্দোয়ান। ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন কোচের ভরসা আর দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০১৬ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ছিলেন তিনি প্রথম দফায়। পরে বার্সেলোনা থেকে আবার খেললেন গত মৌসুমে।
দুই দফায় সিটির হয়ে ৩৫৮ ম্যাচ খেলেছেন এই মিডফিল্ডার। গোল করেছেন ৬৫টি। জিতেছন ১৪টি ট্রফি। ক্লাবের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জয় আর ২০২২-২৩ মৌসুমে স্বপ্নের সেই ট্রেবল জয়ে তিনিই ছিলেন ক্লাবের অধিনায়ক।
তুরস্কে যেতে পেরে যেমন রোমাঞ্চিত গিন্দোয়ান, তেমন সিটির প্রতি আবেগও তাকে স্পর্শ করছে বিদায় বেলায়।
তিনি বলেন, আমার কোনো সংশয়ই নেই যে, ভবিষ্যতেও ম্যানচেস্টার সিটি অনেক সাফল্য পাবে এবং দূর থেকে অবশ্যই আমি তা দেখব ও উপভোগ করব, যখন তুরস্কে নিজের ক্যারিয়ার এগিয়ে নেব আমি, এমন এক দেশ সেটি, যা আমার কাছে অনেক কিছু। ম্যানচেস্টার সিটি আমার হৃদয়ে সবসময়ই বিশেষ জায়গা নিয়ে থাকবে। প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপের ট্রফিগুলো জয় তো অনেক বড় ব্যাপার ছিলই, তবে ক্লাবের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারা, সেটিও ইস্তানবুলে, সেই রোমাঞ্চ আমার সঙ্গী হয়ে রবে আজীবন।