স্পোর্টস ডেস্ক :
হংকংয়ের বিপক্ষে দাপুটে জয়ে উড়ছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচেই তাদের মাটিতে নামিয়ে আনল শ্রীলংকা। আবুধাবিতে টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বড় ধাক্কা খেল লিটন দাসের দল। শ্রীলংকান ব্যাটারদের তাণ্ডবে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ। ১৪০ রান তাড়া করতে নেমে ৩২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের দারুণ এক জয় নিয়ে টুর্নামেন্টের শুভ সূচনা করল লংকানরা।
মাস দুয়েক আগে দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কা টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশকে। সেই দলকেই ৬ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপ অভিযান শুরু করল লঙ্কানরা।
বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে যায় মূলত ম্যাচের প্রথম ভাগেই। শূন্য রানে ২ উইকেট ও ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসা দলকে ১৩৯ রান পর্যন্ত নিয়ে যান জাকের আলি ও শামীম হোসেন।
৬১ বলে ৮৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন দুজন, ষষ্ঠ উইকেটে যা বাংলাদেশের রেকর্ড। তবে সেই লক্ষ্য তাড়ায় খুব একটা বেগ পেতে হয়নি লঙ্কানদের। ম্যাচ শেষ করে ফেলে তারা ৩২ বল বাকি রেখেই।
ওপেনিংয়ে ফিফটি করেন পাথুম নিসাঙ্কা। তিনে নামা কামিল মিশারা আউট হতে পারতেন ৭ বলে ১ রান করে। কিন্তু জীবন পেয়ে তরুণ ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৪৬ রান করে।দ্বিতীয় উইকেটে দুজন জুটি গড়েন ৫২ বলে ৯৫ রানে। শেষ দিকে দ্রুত তিনটি উইকেট হারানোয় লঙ্কানদের জয়ের ব্যবধান আরও বড় হয়নি। তবে জয় তাদের নিশ্চিত হয়ে যায় আগেই।
শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে লিটন দাস বলেন, “উইকেট ভালো মনে হচ্ছে। আগে ব্যাটিং করতে সমস্যা নেই।” কিন্তু প্রবল সমস্যায় পড়ে যান তারা শুরুতেই।
প্রথম ওভারে বোলিংয়ে আসা নুয়ান থুসারা অনুমিতভাবেই একের পর এক ফুল লেংথ ডেলিভারি করতে থাকেন। তানজিদ হাসান পড়ে যান অস্বস্তিতে। দুটি ফুল টস পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। পাঁচটি ডট ডেলিভারির পর খেই হারিয়ে শেষ বলে দৃষ্টিকটূভাবে ক্রস ব্যাটে খেলেন তিনি, ডিগবাজি খায় তার স্টাম্প।
পরের ওভারে দুশমান্থা চামিরার সামনেও একইরকম নড়বড়ে পারভেজ হোসেন ইমন। টানা তিন বলে রান না পেয়ে চতুর্থ বলে বিদায় নেন খোঁচা মেরে।
দুই ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে রান দুই উইকেটে শূন্য। লিটন দাসের সিঙ্গল থেকে দলের প্রথম রান আসে ম্যাচের ১৪তম ডেলিভারিতে। চারে নেমে তাওহিদ হৃদয়ও হাঁসফাঁস করতে থাকেন। চার ওভার শেষে দলের রান ছিল দুই উইকেটে চার।
পঞ্চম ওভারে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়ার পরের ডেলিভারিতে তৃতীয় রানের চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান হৃদয় (৯ বলে ৮)। সীমানা থেকে সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্পে আঘাত করেন কামিল মিশারা।
ওই ওভারেই প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় বাংলাদেশ লিটনের ব্যাট থেকে। পরের ওভারে দাসুন শানাকাকে সামনে পেয়ে তিনটি বাউন্ডারিতে পাওয়ার প্লে শেষ করেন বাংলাদশ অধিনায়ক।
ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামা শেখ মেহেদি হাসান (৭ বলে ৯) আউট হয়ে যান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার প্রথম ওভারেই গুগলিতে পড়তে না পেরে।
হাসারাঙ্গা নিজের পরের ওভারে আরেকটি বড় ধাক্কা দেন বাংলাদেশকে। অবশ্য রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বিপদ নিজেই ডেকে আনেন লিটন। ২৬ বলে ২৮ করে আউট হন অধিনায়ক। বাংলাদেশ তখন ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে।
সেখান থেকেই জাকের ও শামীমের জুটি। শানাকার বলে ব্যাটের কানায় লেগে একটি বাউন্ডারি পান জাকের। জুটিতে রান বাড়ানোর তাড়না বেশি দেখা যায় যদিও শামীমের ব্যাটে। তবে বিপর্যয় ভালোভাবে সামলাতে পারলেও পরে সেভাবে ঝড় তুলতে পারেননি দুজন। ১৫ ওভারের পর টানা তিন ওভারে বাউন্ডারি মারতে পারেননি কেউ। দলের রান তাই পায়নি প্রত্যাশিত গতি।
অবশেষে ১৯তম ওভারের প্রথমবলে মাথিশা পাথিরানার বল ছক্কায় ওড়াতে পারেন শামীম। তিনটি ওয়াইডসহ ওভার থেকে আসে ১৮ রান। একাদশ ওভারের পর জাকের আবার বাউন্ডারির দেখা পান শেষ ওভারে। কোনোরকমে ১৪০ রানের কাছে যেতে পারে দল। ৩৪ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন জাকের, সমান বল খেলে এক রান বেশি করেন শামীম।
এই পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ে বাংলাদেশের জরুরি ছিল শুরুতে দ্রুত উইকেট। নতুন বল হাতে পেয়ে দলকে সেই উইকেট এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসে ছক্কা হজম করেন তিনি পাথুম নিসাঙ্কার ব্যাটে। তবে এক বল পরই তিনি বিদায় করেন দেন কুসাল মেন্ডিসকে।
আঁটসাঁট বোলিংয়ে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের নিয়ন্ত্রণে রাখে বাংলাদেশ। চার ওভারে রান ওঠে ২৬। সেই চাপ আরও বাড়তে পারত পঞ্চম ওভারে, যদি শরিফুল ইসলামের বলে মিশারার ক্যাচ না পড়ত। মিড অনে ক্যাচটি নিতে পারেননি মেহেদি। এরপরই যেন ভোজবাজির মতো বদলে যায় সব। খেসারত বুঝিয়ে দিয়ে ওই ওভারেই একটি ছক্কা ও দুটি চার মারেন মিশারা।
সেই স্রোতে যেন ভেসে যায় বাংলাদেশের প্রতিরোধের বাধ। পরের ওভারে মেহেদিকে লং অন দিয়ে উড়িয়ে দেন মিশারা। পাওয়ার প্লেতে শ্রীলঙ্কা তোলে ৫৫ রান। পাওয়ার প্লে শেষ হলেও রানের ধারা বইতেই থাকে। আক্রমণে ফেরা মুস্তাফিজকে দুটি চার মারেন নিসাঙ্কা। রিশাদ হোসেনের প্রথম ওভারে আসে ১৮ রান। ক্রমে বাংলাদেশের আশা মাড়িয়ে দশম ওভারেই একশ পেরিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সপ্তম ম্যাচে প্রথম ফিফটির দেখা পান নিসাঙ্কা ৩১ বল খেলে। তৃতীয় লঙ্কান ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২ হাজার রানও পূর্ণ করেন তিনি।
মেহেদির বলে শরিফুলের ক্যাচে নিসাঙ্কার পথ শেষ হয় সেখানেই। এই অফ স্পিনার পরে ফেরান শ্রীলঙ্কার সফলতম টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান কুসাল পেরেরাকেও। দাসুন শানাকা বিদায় নেন মুস্তাফিজের দুর্দান্ত ক্যাচে।
তবে তাদের জয় ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার। অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা গিয়ে বিশাল এক ছক্কা মারেন। জয় ধরা দেয় ১৫ ওভারের আগেই।