স্পোর্টস ডেস্ক :
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের এ যুগে ওয়ানডেতে ২ উইকেটে ৩০৪ রান বেশ ভালো সংগ্রহ। কিন্তু এই সংগ্রহই যদি দেখা যায় টি-টোয়েন্টিতে? অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য, তাই না!
এমন না যে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ন্যূনতম তিন শ রানের দলীয় সংগ্রহ দেখা যায়নি। ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আফ্রিকান উপ-আঞ্চলিক বাছাই পর্বে গত বছর অক্টোবরে গাম্বিয়ার বিপক্ষে ৪ উইকেটে ৩৪৪ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। শুধু আন্তর্জাতিক নয়, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতেই এটি সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে নেপালের ৩ উইকেটে ৩১৪ রানের রেকর্ড ভেঙে সেই নতুন রেকর্ড গড়েছিল জিম্বাবুয়ে।
কিন্তু ম্যানচেস্টারে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে যা ঘটেছে, সেটার মহিমা জিম্বাবুয়ে ও নেপালের ইনিংস দুটির চেয়েও অনেক বেশি। সিরিজে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছিল দুই টেস্ট খেলুড়ে দেশ। অন্য চোখে, ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি—ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
এমন ম্যাচে ইংল্যান্ড আগে ব্যাটিংয়ে নেমে তুলেছে ২ উইকেটে ৩০৪! দক্ষিণ আফ্রিকা এই রান তাড়া করতে নেমে হেরেছে ১৪৬ রানে। সিরিজে দুই দল ১-১-এ সমতায় ফেরায় আগামীকাল নটিংহামে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি হয়ে দাঁড়াল সিরিজ নির্ধারণী।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তিনশ রানের তৃতীয় স্কোর এটি। তবে আইসিসি পূর্ণ সদস্য দুই দেশের লড়াইয়ে এটিই প্রথম। পেছনে পড়ে যায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের ২৯৭। রেকর্ড ছোঁয়া ৩০ বাউন্ডারির সঙ্গে ইংলিশদের ইনিংসে ছক্কা ছিল ১৮টি। ৩০ বলে ৮৩ রান করে আউট হন বাটলার। ৩৯ বলে সেঞ্চুরিতে পা রাখেন সল্ট, ইংল্যান্ডের হয়ে যা দ্রুততম।
ইনিংস শুরু করতে নেমে সল্ট শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১৫ চার ও ৮ ছক্কায় ৬০ বলে ১৪১ রান করে। ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডে তিনি ছাড়িয়ে যান নিজেকেই। আগের সেরা ছিল ১১৯।
দক্ষিণ আফ্রিকার তিন বোলার রান হজম করেন ৬০ বা এর বেশি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এমন নজির এটিই প্রথম। রান তাড়ায় প্রোটিয়াদের ইনিংস শেষ হয় ১৫৮ রানে। ১৪৬ রানের জয় এই সংস্করণে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় জয়। তেমনি দক্ষিণ আফ্রিকার এটি সবচেয়ে বড় পরাজয়। ম্যাচজুড়ে রেকর্ড হয়েছে আরও একগাদা।
ম্যাচের শুরুটাই ছিল বিস্ফোরক। দুই অধিনায়ককে ভুল প্রমাণ করে উইকেট ছিল ব্যাটিং স্বর্গ। মার্কো ইয়ানসেনের করা প্রথম ওভারের প্রথম তিন বলই বাউন্ডারিতে পাঠান সল্ট, ওভারের শেষ বল উড়িয়ে দেন ছক্কায়। পরের ওভারে বাটলারও শুরু করেন প্রথম বলে বাউন্ডারিতে। ব্যস, ছুটতে থাকে ইংল্যান্ডের রানের রথ। ৩.২ ওভারেই পঞ্চাশে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রান আসে ১০০!
পাওয়ার প্লেতে এই প্রথম তিন অঙ্ক ছুঁতে পারল ইংল্যান্ড। ১১৬ রানের রেকর্ড সার্বিয়ার বিপক্ষে রুমানিয়ার। কাগিসো রাবাদার চার বলে এক ছক্কা ও টানা তিন চারে বাটলারের ফিফটি হয়ে যায় ১৮ বলেই। সল্টের ফিফটিতে বল লাগে একটি বেশি। ৮ চার ও ৭ ছক্কায় ৮৩ করে বাটলার আউট হয়ে যান অষ্টম ওভারে। জুটি থামে ৪৭ বলে ১২৬ রানে।
তবে ইংল্যান্ডের রানের উৎসব থামেনি। পরের জুটিতে জ্যাকব বেথেলকে নিয়ে সল্ট তোলেন ৪১ বলে ৯৫ রান। ১০ ওভারে ইংল্যান্ড তোলে ১৬৬ রান। এই সংস্করণে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ১৬৭ রান তুলে রেকর্ডটি তুরস্কের। গাম্বিয়ার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের ৩৪৪ রানের বিশ্বরেকর্ড তখন হুমকিতেই মনে হচ্ছিল।
যদিও পরের ১০ ওভারে ইংল্যান্ড পারেনি প্রথম ১০ ওভারকে ছাড়িয়ে যেতে। তবে যা পেরেছে, সেখানে কোনো আক্ষেপ থাকার কথা নয়! ১৪ বলে ২৬ রান করে আউট হন বেথেল। ৩৯ বলে সেঞ্চুরি করে সল্ট পেছনে ফেলেন লিয়াম লিভিংস্টোনের ৪২ বলে শতরানের ইংলিশ রেকর্ড।
অবিশ্বাস্যভাবে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪২ ইনিংসেই চারটি সেঞ্চুরি হয়ে গেল সল্টের। ইংল্যান্ডের অন্য সব ব্যাটসম্যান মিলিয়ে করেছেন চার সেঞ্চুরি!
শতরানের পর ২১ বলে ৪০ রান করেন সল্ট, বেশ মন্থরই বলতে হবে! ক্লান্তির ছাপ কিছুটা ছিল তার ব্যাটিংয়ে। অধিনায়ক হ্যারি ব্রুক অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ৪১ রান করে। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এই আসে ৩৭ বলে ৮৩ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো বোলারের মার কম পড়েনি। তবে সবচেয়ে তরুণ কোয়েনা মাফাকা ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন সবচেয়ে কম (১০.২৫)।
বোলিং আক্রমণের নেতা রাবাদা চার ওভারে গুনেছেন ৭০ রান। আগে কখনও ৫৭ রানের বেশি দেননি তিনি। এক বছর পর দেশের হয়ে খেলতে নেমে ইংল্যান্ডের দুটি উইকেটই নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার বিয়র্ন ফোরটান।
দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়ার শুরুতে ছিল ম্যাচ জমিয়ে তোলার ইঙ্গিত। ৩.৩ ওভারে ৫০ তুলে ফেলে তারাও। এরপরই রায়ান রিকেলটন আউট হন ১০ বলে ২০ রান করে। জফ্রা আর্চারের ওই ওভারে বল আকাশে তুলে বিদায় নেন লুয়ান-ড্রে প্রিটোরিয়াস।
স্যাম কারান আক্রমণে এসে প্রথম ওভারেই বিদায় করেন বিপজ্জনক ডেওয়াল্ড ব্রেভিসকে। পাওয়ার প্লে শেষে আদিল রাশিদ যখন ফেরান মার্করামকে (১৯ বলে ৪১), দক্ষিণ আফ্রিকার বড় রানের আশাও শেষ হয়ে যায়।
পরে ১১ বলে ২৩ রান করেন ডনোভান ফেরেইরা, ২৩ রান করতেই ২৫ বল খেলে ফেলেন ট্রিস্টান স্টাবস। পরের দিকে ১৬ বলে ৩২ রান করেন ফোরটান, যা তার ১৬৪ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সামগ্রিক ক্যারিয়ারের সেরা। প্রোটিয়াদের ইনিংস শেষ হয় ২৩ বল আগেই।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ ট্রেন্ট ব্রিজে রোববার।
ম্যাচসেরা সল্ট জয়ের পর বলেছেন, ‘ক্রিজে সময়টা উপভোগ করেছি, ম্যাচেও প্রভাব ফেলতে চেয়েছিলাম। ভালো স্ট্রাইক রেটে নিজের খেলাকে আমি যতটা গভীরে সম্ভব টেনে নিতে চাই। এ দুটো কাজ একসঙ্গে সব সময় করা যায় না, কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে আমি এটাই করতে চাই। লক্ষ্য আসলে এটাই। আমি এই কাজে বিশ্বের সেরা হতে চাই।’