নিজস্ব প্রতিবেদক :
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের জন্য বাণিজ্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাত। তবে অতীতে ভুল নীতির কারণে অনেক বিনিয়োগকারী চলে গেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সৌদি আরবের আরামকো, দক্ষিণ কোরিয়ার সামসাং কোম্পানি। সেটা ছিল ভুল নীতি। এখন এসব শুধরে নিতে হবে।
রোববার (৫ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘সৌদি-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি : প্রবণতা, মূল চ্যালেঞ্জ এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা সংস্কারের লক্ষ্যে এক-দেড় বছরের জন্য এসেছি। সে লক্ষ্যে ফুটপ্রিন্ট রেখে যেতে চাই। স্বল্প সময়ের জন্য এলেও আমরা একটি মেঠোপথ রেখে যাব, অন্যরা যেন সে পথে এগিয়ে যেতে পারেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এখন ভর্তুকি, সস্তা অর্থ এবং কম সুদের দিন শেষ। এগুলো প্রতিযোগিমূলক অর্থনীতির চিহ্ন নয়। আমরা আর কতদিন শিশু থাকবো। তৈরি পোশাক শিল্প ১৯৮০ -এর দশকে চালু হয়েছে এবং ৪৫ বছর পরেও এটি শিশু অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে আমরা ১৬০ কোটি ডলার পেয়েছি এবং অল্প দিনের মধ্যে আরও ৭০ কোটি ডলার পাবো।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তবে অর্থ সংগ্রহ করা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হচ্ছে কোথায় অর্থ ব্যয় হচ্ছে এবং কীভাবে অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সহায়তা বা অনুদান বড় বিষয় নয়, বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যবসা। সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য আছে এবং এটি বৃদ্ধির সুযোগ আছে বলে তিনি জানান।
সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক বিবেচনায় সৌদির গুরত্ব অনেক। অনেক দেশ আমাদের মুক্ত বাণিজ্য করার কথা বলছে। আমরা মুক্ত বাণিজ্য করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সরকারের একার পক্ষে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের সহায়তা দরকার।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত সরকারের সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান স্যামসাং কোম্পানিকে বিমানবন্দর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সৌদি কোম্পানি আরামকোকে বিমানবন্দর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল।
শেয়ার মার্কেটের সমালোচনা করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শেয়ার মার্কেটে অনেক কোম্পানি বিনিয়োগ করছেন। তবে দেখছি, কিছু কোম্পানির ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের শেয়ারের দাম বাড়ছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের দেশে অর্থনৈতিক সুযোগ আকৃষ্ট করার জন্য অনেক কিছু করতে হবে। এই বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি যে, আমাদের দেশ সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি সবসময় সত্যি নয়।
বর্তমান সরকার অবস্থার পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা ব্যবসা সহজ করার ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখন যদি সৌদি বিনিয়োগকারীরা আসেন তবে ভালো একটি পরিবেশ দেখতে পাবেন বলে তিনি জানান।
সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসেফ ইসা আলদুহাইলান বলেন, আরামকো ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনবার বাংলাদেশে এসেছিল, কিন্তু তাদেরকে কেউ অভ্যর্থনা জানায়নি। কিন্তু আমরা অতীত নিয়ে কথা বলবো না। আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলবো।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানি আরামকো বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী। তারা বঙ্গোপসাগরে একটি তেল শোধনাগার স্থাপন করতে চায়। যদি এখানে একটি তেল শোধনাগার থাকে এবং তেলজাতীয় পণ্য উৎপাদন করে— তবে সেখান থেকে বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে। যদি আমরা চিটাগাং থেকে জেদ্দা বা দাম্মামের মধ্যে একটি সুমদ্রপথ তৈরি করতে পারি, তবে সেটি বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। এই তেল শোধনাগারের পণ্য চীন, ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠানো সম্ভব বলে তিনি জানান।
আমাদের কিছু সফলতার গল্প আছে। আমাদের আন্তর্জাতিক কোম্পানি রেড সী পতেঙ্গা টার্মিনাল অপারেট করছে এবং তারা মাতারবাড়ি গভীর সুমদ্র বন্দরে কাজ করতে চায় বলে জানান সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত।
মানবসম্পদ উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকদিন ধরে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমরা বাংলাদেশ থেকে দুটি ব্যাচ স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়েছি এবং তৃতীয় ব্যাচ ভবিষ্যতে যাবে।