নিজস্ব প্রতিবেদক :
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়া ছুটছেই। বিশেষত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত দামে নাভিশ্বাস উঠেছে সীমিত আয়ের মানুষের। অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন। কেউ কেউ দামের নাগাল না পেয়ে ফিরছেন খালি হাতেই। তবে কিছুটা স্বস্তি ফিরছে রাজধানীর সবজির বাজারগুলোতে। নানা রকম গ্রীষ্মকালীন সবজিতে ভরে গেছে রাজধানীর বাজারগুলো। গেল সপ্তাহের থেকে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। তবে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ-মাংস।
শুক্রবার (১৬ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সবজি বাজারে দেখা গেছে, বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, ঝিঙা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া আদা ৩০০ টাকা, দেশি রসুন ১৫০-১৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান রসুন ১৬০-১৭০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা, আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা হাসান মিয়া জানান, টানা বেশি থাকার পরে সবজির দাম কিছুটা কমেছিল। এ সপ্তাহে আবার অল্প অল্প করে বাড়ছে। কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহ কমায় দাম বাড়তি। সবজির দাম এবার মৌসুমজুড়েই বেশি ছিল। এখনো কমেনি। নতুন যেসব সবজি আসছে, সেগুলোর দাম সামান্য কম।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, চাষের কই ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ (ছোট) প্রতি কেজি ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা, গুড়া মাছ (কাচকি) ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, ট্যাংরা ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, সিলভার কার্ভ (ছোট) ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, বড় কাতল প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস মানভেদে প্রতি কেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার ২০০ টাকা, সোনালী প্রতি কেজি ২৮০ এবং লাল লেয়ার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী নাজমুল হক মাছের দাম প্রসঙ্গে বলেন, বাজারে সবজি, মাংস, পেঁয়াজসহ সব জিনিসের দাম হঠাৎ বেড়ে যায় কিন্তু তা আবার কমে এক সময়। তবে মাছের বাজারের ক্ষেত্রে এটা উল্টো। দীর্ঘ দিন ধরে বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে কিন্তু এটা কমার কোন নাম নেই। সাধারণ ক্রেতাদের এতে সমস্যা হচ্ছে, এসব দেখার কি কেউ নেই? বাজার মনিটরিং করে বাড়তি দাম কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে মহাখালী বাজারে মাছ কিনতে আসা গার্মেন্টস কর্মী আক্ষেপ করে বলেন, গরিবের মাছ পাঙাশ, তেলাপিয়া, চাষের কই, রুই মাছের দামও অনেক বেশি। আগে যা কিনেছি এখন একই মাছ বাড়তি দামে কিনতে হয়। পাঙাশ মাছও কিনতে হচ্ছে ২০০/২২০ টাকায়। আগে এটাই কিনেছি ১৬০/১৮০ টাকা কেজিতে। দীর্ঘ দিন ধরে এই মাছের দাম আর কমছে না। আর এসব মাছের দামও যদি এতটা বেড়ে যায় তাহলে আমরা নিম্নআয়ের ক্রেতারা কীভাবে কিনব?
অন্যদিকে মাছের দাম কেন এত বাড়তি- এই প্রসঙ্গে মহাখালী বাজারের মাছ বিক্রেতা আলমগির হোসেন বলেন, আসলে বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে। মাছের খাবারের দাম বাড়ার পর থেকে মাছের দামও বেড়েছে। এছাড়া পরিবহন খরচও এখন বাড়তি। সব মিলিয়ে পাইকারি আড়ত থেকেই আমাদের আগের চেয়ে বাড়তি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে। যার প্রভাব খুচরা বাজারগুলোতেও পড়েছে।
এই ক্রেতা বলেন, আগে আধা কেজি কাচকি মাছ ২০০ টাকায় হয়ে যেত। না হয় এ টাকায় এক কেজি সাইজের তেলাপিয়া বা পাঙাশ কিনতাম। এখন সেটাও হচ্ছে না। এতো দাম হলে তো আমাদের পক্ষে মাছ কিনে খাওয়া কঠিন।
গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ২০৭-২১৫ টাকা, কক মুরগি ২৩০-২৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
মুরগির বিক্রেতা মঈন বলেন, আজকে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। তবে ঈদের আগে আবার দাম বেড়ে যাবে।
মুরগি কিনতে এসে হৃদয় বলেন, এদের কাজ একটাই, শুধু দাম বাড়াবে। ঈদের আগে নাকি আবার দাম বাড়বে। ঈদের কথা শুনলেই সব কিছুর দাম বেড়ে যায়।
বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর এখনও বাড়েনি গরু ও খাসির দাম। এ ছাড়া বাজারে প্রতি ডজন সাদা ডিম ১৩৫ টাকা ও লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়।
দীর্ঘদিন পর সয়াবিন তেলের দাম কমেছে। আগের চেয়ে লিটারে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দামও গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে কমেছে ৩০ টাকা। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগে দাম আবার বাড়তে পারে। আর কোরবানির ঈদ আসার আগে থেকেই বেড়ে চলেছে জিরার দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা।
এছাড়া মুদি দোকান ঘুরে জানা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আজকের দাম দর। সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ১০ টাকা কেজিতে। আগে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের (প্যাকেট) দাম ছিল ১৯৯ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ছিল ১৭৮ টাকা। দাম কমে তা হয়েছে লিটারপ্রতি প্যাকেট সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা আর খোলা সয়াবিন তেল ১৭০ টাকা।
সয়াবিন তেলের দাম কমলেও বেড়েছে জিরার দাম। খুচরা জিরার কেজি ৮৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০০ টাকা কেজি।
আল্লাহর দান জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা আরিফ বলেন, জিরার দাম বেড়েই যাচ্ছে। ঈদ আসতে আসতে আরও দাম বাড়বে। গত সপ্তাহে আমার জিরার কেনা দাম ছিল ৭৮০ টাকা, বিক্রি করেছি ৮০০ টাকায়। আজকে আমার জিরা কেনা ৮৩০ টাকা আর বিক্রি করছি ৮৫০ টাকায়।
এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই। মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা, চিনি ১৩০ টাকা, আটা ১৩০ টাকা (২ কেজির প্যাকেটে), খোলা ময়দা ৬৩ টাকা, খোলা সরিষার তেল ২৫০ টাকা লিটার।