মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

প্রত্যেকটি গুমের পেছনে আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪
প্রত্যেকটি গুমের পেছনে আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রত্যেকটি গুমের পেছনে আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী। বিভিন্ন সময় তাদের মুখ থেকেই এ কথা বেরিয়ে আসছে। তাদের কেউ কেউ স্বীকারও করেছেন। গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা মানবতার সবচেয়ে ভয়াবহতম অপরাধ। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, প্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলীসহ সরকারের গুমের শিকার নেতা-কর্মীসহ সবাইকে অক্ষত অবস্থায় যার যার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। অন্যথায় একদিন প্রতিটি গুম-খুনের দায়ে বিচারের জন্য তৈরি হন।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ইলিয়াস আলীর গুমের আজ ১২ বছর পূর্ণ হলো। শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানী বনানীর ২ নম্বর সড়কের সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গাড়িচালক আনসার আলীসহ তুলে নিয়ে যায় ইলিয়াস আলীকে। এরপর গাড়িটি পাওয়া গেলেও হদিস মেলেনি তাদের। আজ জনগণের সামনে স্পষ্ট যে, এই সরকারই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম আর টিপাইমুখ বাঁধ ও সীমান্ত আগ্রাসনের প্রতিবাদে সিলেট অঞ্চলে গড়ে উঠা গণ আন্দোলনে নেতৃত্বের কারণে ইলিয়াস আলী রাষ্ট্রযন্ত্র ও দেশি-বিদেশি অপশক্তির গাত্রদাহের প্রধান কারণ ছিল।

তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইলিয়াস আলীর জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতায় ঈর্ষান্বিত সরকার রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে তাকে গুম করে রেখেছে। ইলিয়াস আলীকে গুম করার পর সরকার বহুবিধ নাটক সাজিয়েছে। ওই সময় তার বিরুদ্ধে অশোভন কথা লিখে দেয়ালে পোস্টার সাঁটিয়েছিল সরকারের এজেন্টরা। গুমের ঘটনার পর তার স্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের আয়োজন এবং ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করার আশ্বাস ছিল লোক দেখানো। কারণ ওই সময় বিএনপির পাঁচ দিন হরতাল ছিল। আর বিএনপির সে হরতাল ও আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্যই ছিল ওই মিথ্যা আশ্বাস। গুম হওয়ার পরে থানায় জিডি করা হয়, কোর্টে মামলা করা হয়। এরপরও তাকে ফিরিয়ে দেননি শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর সন্ধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান চালানোর হাস্যকর নাটক করতে দেখা যায়। উচ্চ আদালতে করা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনার রিট আবেদনের শুনানিও আটকে দেয় সরকার। অর্থাৎ অদৃশ্য হওয়া নাগরিককে ফেরত দেয়ার উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে বাধাগ্রস্ত করে সরকার। সুতরাং ইলিয়াস আলীসহ সকল গুম রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে। বেআইনি গুম—খুনের উৎসব পালন করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত গুম হয়েছে ৬৫০ জনের বেশি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে গত ১৫ বছরে ছয় শতাধিক মানুষ গুম হয়েছেন। এরমধ্যে একটা অংশ যাদের লাশ পাওয়া গেছে। দেশী ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং জাতিসঙ্ঘ তাদের বিভিন্ন সেশনে অনবরত বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেও শেখ হাসিনার সরকার এটা নিয়ে তাচ্ছিল্য করে আসছে। এ রকম অসংখ্য পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে রয়েছে।

রিজভী বলেন, গুম-খুন-ক্রসফায়ার বাহিনী র‌্যাব-এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে গুমের মাত্রা কিছুটা কমলেও এখনো গুম হচ্ছে, তবে গুমের প্যাটার্ন চেঞ্জ হচ্ছে। সেটা হলো আগে যারা গুম হতো তারা আর ফেরত আসতো না। তবে এখন যারা গুম হচ্ছেন তারা পাঁচ-সাত দিন এমনকি এক মাস পরেও কেউ কেউ ফেরত আসছে। অথবা লাশ পাওয়া যাচ্ছে। গুম বাহিনী এখন স্বল্প সময়ের জন্য গুম করছেন। এই স্বল্প সময়ের গুম হওয়াটাও খুবই ভয়ঙ্কর। গুম হচ্ছে একদলীয় ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের নমুনা এবং চরমতম মানবতাবিরোধী অপরাধ। বাংলাদেশে বর্তমান শাসকগোষ্ঠি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বিরোধী দল ও মত শূন্য একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্যই গুমকে পথের কাঁটা দূর করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে একের পর এক মানবতাবিরোধী অপরাধ করে যাচ্ছে। এই নৃশংস গুমের শিকার কেবল সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীই নন, সাইফুল ইসলাম হিরু, সাবেক কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, জাহিদুল করিম তানভীর, মো: মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আল আমিন, সাজেদুল ইসলাম সুমন, মোহাম্মদ আবদুল কাদের ভূঁইয়া মাসুম, জাকির হোসেন, মুন্না, মীর আহমদ বিন কাশেম, আবদুল্লাহিল আযমী, ইফতেখার আহমেদ দিনার, সোহেল রানা, মাহফুজুর রহমান সোহেল, জুনায়েদ আহমেদ, আনসার আলী, আল মোকাদ্দাস হোসেন, মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ, কে এম শামীম আখতার, হুমায়ুন কবির পারভেজসহ অসংখ্য বিরোধী নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। এইসব ঘটনা দেশবাসীকে অজানা আতঙ্কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সরকার কোনোভাবেই ইলিয়াস আলীর গুমের দায় এড়াতে পারে না। একজন রাজনীতিবিদকে গুম করার মাধ্যমে তার আদর্শকে শেষ করা যায় না। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করা উচিত।

বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গণমাধ্যমে দেখেছি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বিএনপির কাছে তালিকা চেয়ে চিৎকার করছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেব কিসের তালিকা চাইছেন? এর আগেও তো তালিকা দেওয়া হয়েছিল। আর তালিকা তো আপনাদের কাছেই রয়েছে। আইন, আদালত, থানা, পুলিশ তো আপনাদের কবজায়। ওবায়দুল কাদের সাহেবের স্নায়ু শিথিল, মস্তিষ্ক অলস ও হৃদয় দুর্বল হওয়ার কারণে বেশি বেশি অবান্তর কথা বলেন। বিনা ভোটের সরকার অসংখ্য মানুষকে গুম, খুন, অপহরণ করেছে। এদের মধ্যে জাতিসংঘ গুমের একটি তালিকা দিয়েছিল। আজ পর্যন্ত বিনা ভোটের সরকার এর কোনো জবাব দিতে পারেনি।

তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল। তিনি আজ আদালতে জামিন আবেদন করলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তার মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছি।

বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল আদালতে জামিন আবেদন করলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তার মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানান রিজভী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া