নিজস্ব প্রতিবেদক :
দ্রুত নির্বাচন আয়োজন এবং সংস্কারের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, জনগণ জানতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন থাকবে এবং কবে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের কথা শুনলেই উপদেষ্টাদের অস্বস্তি হয়। সরকারের উচিত নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করা। কারণ এ পরিস্থিতিতে উপদেষ্টাদের অস্বস্তি দেখানো জনআকাঙ্ক্ষার বিরোধী। সরকার তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের কাছে যত বেশি স্বচ্ছ থাকবে, জনগণ তত বেশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন জন্য সংস্কারের বিকল্প নেই। একই সঙ্গে এটিও মনে রাখা জরুরি, কেউ ফ্যাসিবাদমুক্ত হতে চাইলে সংবিধান বাধা হতে পারে না। ফ্যাসিবাদ রুখতে নাগরিক জীবনের প্রতিদিনের চালচিত্র গণতন্ত্রের রাজনীতির চর্চা থাকা দরকার।
নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বচ্ছতা আসবে জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কী করতে চাইছে, রাষ্ট্র মেরামত করতে আর কত মাস কত সময় লাগবে সেটি জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। সরকার রোডম্যাপ ঘোষণা করলে জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে।
অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের সফলতা দেখতে চায় কি না প্রশ্ন রেখে তারেক রহমান বলেন, জনগণ যথেষ্ট ধৈর্য ধরে আছে। কারণ তারা সরকারকে সফল দেখতে চায়। অন্তর্র্বতী সরকার নিজেরা নিজেদের সফল দেখতে চায় কি না তা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। ৫ আগস্টের পর অভূতপূর্ব ঐক্যর মোহনায় জাতি। এ ঐক্যকে কাজে লাগাতে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চায় বিএনপি।
তারেক রহমান বলেন, মানুষের মাঝে প্রশ্ন উঠতে পারে- সংস্কার আগে, না সংসার আগে? কারণ এখন প্রতিদিন ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে, বাজারে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনগণ দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সর্বোপরি, সংস্কার আগে যদি সংসারের সমস্যা না সমাধান করা হয়, তবে তা জনগণের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠবে। তাই সংস্কারের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, একটি জবাবদিহিমূলক সংসদ থাকলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। যদি কেউ স্বৈরাচারী হতে চায়, তবে তার সামনে কোনো বিধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। রাষ্ট্রকে ফ্যাসিস্টমুক্ত রাখতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে দেশের গণতন্ত্রও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ বা কাজের হিসাব জানতে চাইলে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তি দেখা দেয়। এটি দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীত। এমন পরিস্থিতি দেশের জন্য বড় চিন্তার বিষয়। জনগণকে নির্বাচনমুখী করার জন্য সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত জনগণের কল্যাণে কাজ করা, শুধু নিজেদের আত্মপ্রশংসা না করে জনগণের সমস্যার প্রতি আন্তরিক দৃষ্টি দেওয়া এবং তাদের কষ্ট লাঘব করা। আশা করি সরকার দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে এবং জনগণের সামনে রোডম্যাপ তুলে ধরবে।
দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তিনি বলেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি জনগণের জীবনে চাপ তৈরি করেছে। প্রতিদিনের সংসারের ব্যয় মেটাতে জনগণকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। জনজীবনের নিত্য দুর্ভোগ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে যদি সংস্কারের নামে সময়সংক্ষেপ করে, তাহলে সংস্কার আগে নাকি সংসার আগে- জনগণের কাছে এই প্রশ্ন মুখ্য হয়ে উঠতে পারে।
দুর্ভোগ মেনে নিলেও জনগণ এখনো সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চবাচ্য করছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ বর্তমান সরকারকে সফল দেখতে চায়। কিন্তু অন্তর্র্বতীকালীন সরকার নিজেরা নিজেদের সফল দেখতে চায় কি না তা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।
একটি দেশের জন্য ৫৪ বছর কম সময় নয় মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রক্তের বিনিময়ে দেশের জনগণ আজ এক অভূতপূর্ব ঐক্যের মোহনায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ ঐক্যকে কাজে লাগিয়ে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এ লক্ষ্যে বিএনপি ইতোমধ্যে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই- সব অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনের রোডম্যাপে যাত্রা শুরু করবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। সেই যাত্রায় আপনাদের বিশ্বস্ত সঙ্গী হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ। সুতরাং জনগণের সঙ্গে থাকুন এবং জনগণকে সঙ্গে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।
বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, আমাদের মনে রাখা দরকার জনগণ শক্তিশালী না থাকলে জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী হয় না। রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কারের বিকল্প নেই। তবে একইসঙ্গে এটাও মনে রাখা জরুরি কেউ স্বৈরাচার কিংবা ফ্যাসিস্ট হতে চাইলে সংবিধান বা প্রবিধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র এবং সরকারকে ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার থেকে সুরক্ষিত রাখতে চাইলে সুসংবদ্ধ বিধিবিধানের চেয়ে রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রতিদিনের কার্যক্রমে, নাগরিক জীবনের প্রতিদিনের চাল-চিত্রে গণতান্ত্রিক রাজনীতি সংস্কৃতির চর্চা অত্যন্ত জরুরি। এ চর্চার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে ফ্যাসিবাদের উপাদান দূর করা সম্ভব।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বেগম সেলিমা রহমান, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, কৃষকদল সভাপতি হাসান জাহিদ তুহিন প্রমুখ।