ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি :
ঝালকাঠিতে ট্রাক, অটোরিকশা ও প্রাইভেট কারের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরের দিকে ঝালকাঠি গাবখান সেতু এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন – ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাংগর গ্রামের বারেক হাওলাদারের মেয়ে নাহিদা আক্তার (২৭), জামাতা হাসিবুর রহমান (৩২), নাতি-নাতনি তাকিয়া (৪) ও তাহমিদ (৮ মাস), সদ্য বিবাহিত মেয়ে নিপা (২২), জামাতা বিমানবাহিনীর সদস্য ইমরান হোসেন (২৬), গাবখানের সেলিম হাওলাদারের ছেলে নজরুল (৩৫), ওস্তাখান গ্রামের মান্নান মাঝির ছেলে শফিকুল মাঝি (৫০), শেখেরহাট নওপাড়ার আব্দুল হাকিমের ছেলে আতিকু রহমান সাদি (১১), কাঠালিয়ার তালগাছিয়ার ইব্রাহিমের মেয়ে নুরজাহান (৭) ও স্ত্রী তাহমিনা (২৫), রাজাপুরের উত্তর সাউথপুরের হাসিবুর রহমানের স্ত্রী সনিয়া বেগম (৩০), স্বরূপকাঠির রুহুল আমীন ও টোলপ্লাজার সামনের প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক শহিদুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে পৌর এলাকার পশ্চিম প্রান্তে পঞ্চম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেপরোয়া গতিতে একটি ট্রাক টোল দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা তিনটি অটোরিকশা, একটি মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যান এবং টোল আদায়কারী ও পথচারীকে চাপা দিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে ওই পাঁচটি গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে ঘটনাস্থলে সাতজনের মৃত্যু হয়। আর আহত হন অন্তত ২০ জন। পরে তাদের হাসপাতালে নিলে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়। ট্রাকটি রাজাপুর থেকে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. জহিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ১২ জন ও বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন রয়েছেন।
ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, ১৭ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ১০ জন বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ ও ৭ জন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকটি যে গাড়িগুলোকে চাপা দিয়েছে তাদের বেশিরভাগই বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ কামাল হোসেন বলেন, দুর্ঘটনায় আমার ছোট ভাই দশম শ্রেণির ছাত্র আতিকুর রহমান সাদি নিহত হয়েছেন। আমার ভাই চোখের সামনেই মারা গেল। আমি কিছুই করতে পারিনি।
এ সময় কান্নারত অবস্থায় কামাল বলেন, ব্যাটারিচালিত চারটি ইজিবাইক ও একটি মাইক্রোবাস যোগে প্রায় ২৫ জন নিয়ে গাবখান ইউনিয়নের ওস্তাখাল গ্রামে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। আমার শ্যালিকার বিয়ের বউভাতের আয়োজন করা হয়েছিল। যাওয়ার পথে দুপুর দেড়টার দিকে গাবখান টোলে আমাদের গাড়িগুলো টোল দিচ্ছিল। এ সময় সেতুর দিক থেকে সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক এসে আমাদের গাড়ি, পথচারী ও টোল আদায় কর্মীদের চাপা দেয়। আমাদের আনন্দ মুহূর্তে বিষাদে রূপ হয়।
শেখেরহাট ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আতফি আহম্মেদ বলেন, আমার ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ কামাল হোসেনের শ্যালিকার বৌভাতে সবাই যাচ্ছিল। কামাল হোসেন আমাকে জানিয়েছে, মোট ১৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১০ জন কামালের নিজের ও শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজন।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার কাজ শেষ করা হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িগুলোকে চাপা দেয়।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক তারাহ গুল নিঝুম জানান, ঝালকাঠির গাবখান সেতু টোলপ্লাজায় সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি প্রাইভেটকারকে পেছন থেকে চাপা দেয়। দুর্ঘটনার তদন্তে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।