আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
লোহিত সাগরের জিবুতি উপকূলে অভিবাসী বহনকারী একটি নৌকা ডুবে অন্তত ৩৫ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃত এসব অভিবাসীর মধ্যে শিশুও রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ায় ১৯ অভিসানপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে জিবুতি উপকূলে একটি নৌকাডুবে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও ২৮ জন।
মৎস্যজীবীরা অধিবাসী বহনকারী ওই নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করে উপকূলরক্ষীদের জানান। পরে উদ্ধারকারীরা ২০ জনেরও বেশি লোককে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন। উদ্ধারের পর তাদের জিবুতির উপকূলে গডোরিয়া শহরে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম তাদের ইথিওপিয়ায় প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে।
তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড জানিয়েছে, এরই মধ্যে ১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা ইউরোপের দেশ ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
উদ্ধারের পর জিবুতির উপকূলে গডোরিয়া শহরে নিয়ে আসা জীবিতদের চেহারায় বিপর্যয় এবং ভয় স্পষ্ট ছিল। পরে সেখানে চিকিৎসার জন্য তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম তাদের ইথিওপিয়ায় প্রত্যাবাসন করে।
জিবুতি কোস্টগার্ডের সিনিয়র কর্মকর্তা ইস ইইয়াহ বলেছেন, যারা ডুবে যাওয়া নৌকায় ছিলেন তারা ইয়েমেন ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কারণ তাদের নিজের দেশের তুলনায় সেখানে জীবন আরও বেশি সংগ্রামের ছিল।
এ ঘটনায় জিবুতিতে নিযুক্ত ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রদূত বারহানু সেগায়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে অভিবাসীদের মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জিবুতি থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অবৈধপন্থায় ভ্রমণ অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এতে করে ক্রমাগত আমাদের নাগরিকরা তাদের জীবন হারাচ্ছেন।’
প্রসঙ্গত, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উন্নত জীবনের আশায় প্রতি বছর হাজার হাজার আফ্রিকান অভিবাসনপ্রাত্যাশী লোহিত সাগরের ওপারে সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করেন। নৌকাডুবে মারা যান অনেকে।
আইওএম ও জিবুতিতে অবস্থিত ইথিওপীয় দূতাবাসের মতে, এর আগে ৮ এপ্রিল গোডোরিয়া উপকূলে ৬০ জনেরও বেশি লোক বহনকারী আরেকটি নৌকা ডুবে গিয়েছিল। আইওএম সে সময় বলেছিল, শিশুসহ ৩৮ অভিবাসীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, আর ছয়জন নিখোঁজ রয়েছে। নৌকাটি ইথিওপীয় অভিবাসীদের জিবুতি থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে নিয়ে যাচ্ছিল বলে ইথিওপীয় দূতাবাস জানিয়েছিল।
প্রতিবছর হাজার হাজার আফ্রিকান অভিবাসী লোহিত সাগরের ওপারে এবং ইয়েমেনের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবে পৌঁছনোর চেষ্টা করে। সংঘর্ষ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে বা আরো ভালো অর্থনৈতিক সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করতে তারা এ বিপজ্জনক কাজ করে থাকে।
আইওএমের মতে, গত বছর জিবুতি বা সোমালিয়া থেকে ইয়েমেনে যাওয়া প্রায় এক লাখ অভিবাসীর মধ্যে ৭৯ শতাংশ ইথিওপীয়, বাকিরা সোমালি।
ফেব্রুয়ারিতে সংস্থাটি বলেছিল, গত বছর জিবুতি থেকে ইয়েমেনে যাওয়ার পথে এডেন উপসাগর পাড়ি দিয়ে নারী, শিশুসহ কমপক্ষে ৬৯৮ জন মারা গেছে। আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ ইথিওপিয়া বিভিন্ন সংঘাতে আক্রান্ত এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির বেশ কয়েকটি অঞ্চল মারাত্মক খরার শিকার হয়েছে। এর ১২০ মিলিয়ন বাসিন্দার ১৫ শতাংশেরও বেশি খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।