নিজস্ব প্রতিবেদক :
সেনাবাহিনী প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের স্বার্থ ও কৌশলগত অর্জনের জন্য সামরিক কৌশল দরকার এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের অবস্থান ঠিক করি। বিচ্ছিন্নভাবে এটি অর্জন করার সুযোগ নেই। সব দেশই আমাদের বন্ধু। কাজেই একটি বন্ধু রাষ্ট্রকে খুশি করতে গিয়ে অন্য রাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে পারি না।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেনাপ্রধান বলেন, মাঝে মাঝে আমাদের তাই ভাবনা আসে কে নেতৃত্ব দেবে বা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার হাতে থাকবে। এটি কখনও কখনও সমস্যা তৈরি করে। সরকারের সব সংস্থাই দেশের স্বার্থের জন্য কাজ করে। কিন্তু তাদের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থ ও মাতৃভূমি সুরক্ষার জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে। পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আর সামরিক বাহিনী পররাষ্ট্রনীতির উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সবকিছু করছে। সামরিক বাহিনীর মূল কাজ হচ্ছে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং আমরা এটি কখনও ভুলি না। আমরা সবসময় এটির জন্য তৈরি।
মিয়ানমারের নেতৃত্বের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। কিন্তু আপনারা জানেন যে মিয়ানমারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়ার মতো। কারণ সব দেশই আমাদের বন্ধু। কাজেই একটি বন্ধু রাষ্ট্রকে খুশি করতে গিয়ে অন্য রাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে পারি না। এই বাস্তবতা আমাদের বিবেচনায় রাখতে হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে সবকিছু করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে তারা সবকিছু করছেন।
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশে-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, তারা সুযোগ গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করেন।
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ‘আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়, কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন তারা দেশেই তৈরি করেছেন যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো, তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।
সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তাও জানে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হব না।’
একই সঙ্গে জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনো ভুলে যান না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না মন্তব্য করে সেনাপ্রধান বলেন, আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু নাও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান। সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।