স্পোর্টস ডেস্ক :
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা বাঁহাতি এপ্সার মিচেল স্টার্ক আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। মূলত টেস্ট ও ওয়ানডেতে বেশি মনোযোগ দিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ৩৫ বছর বয়সী এই পেসার শেষবার টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে। আগামী আসর মাঠে গড়াতে আর মাত্র ছয় মাস বাকি থাকলেও ভারতের ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য সেই টুর্নামেন্টের আগেই বিদায় নিলেন এই তারকা।
টি-টোয়েন্টি সংস্করণে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করছেন স্টার্ক। তার ওপরে আছেন শুধু অ্যাডাম জ্যাম্পা। ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক হওয়া স্টার্ক ৬৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৭৯ উইকেট, ইকোনমি রেট ছিল ৭.৭৪। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ছয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মধ্যে তিনি খেলেছেন পাঁচটিতে, কেবল ২০১৬ আসর মিস করেছিলেন ইনজুরির কারণে। ২০২১ সালে দুবাইয়ে শিরোপা জয়ের সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।
অভিজ্ঞ এই পেসার এখনো বাকি দুটি আন্তর্জাতিক ফরম্যাট, আইপিএল ও ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেলা চালিয়ে যেতে চান। তবে তার টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরকে ধরা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সোনালী প্রজন্মের আরেকটি বড় প্রস্থান হিসেবে। গত বছর ডেভিড ওয়ার্নার সব ফরম্যাট থেকে বিদায় নিয়েছেন। এ বছর আবার স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মার্কাস স্টয়নিস ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়েছেন।
বিবৃতিতে স্টার্ক বলেন, টেস্ট ক্রিকেট সবসময়ই আমার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রতিটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আমি উপভোগ করেছি, বিশেষ করে ২০২১ সালের বিশ্বকাপ। শুধু জয়ের জন্য নয়, দারুণ একটি দলের অংশ হওয়া এবং পুরো যাত্রাটা আনন্দময় ছিল। আগামীতে ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ, দ্য অ্যাশেজ ও ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আমি মনে করি এটাই সঠিক সময়, যাতে আমি সতেজ, ফিট এবং সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার মতো অবস্থায় থাকতে পারি। একই সঙ্গে এটি আমাদের বোলিং ইউনিটকে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়ও দেবে।
স্টার্কের অবসর নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান নির্বাচক কমিটির প্রধান জর্জ বেইলি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার নিয়ে মিচের ভীষণ গর্বিত হওয়া উচিত। ২০২১ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। তার উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেওয়ার দুর্দান্ত দক্ষতা ছিল। আমরা সময়মতো তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারকে স্বীকৃতি ও উদযাপন করব। তবে খুশির বিষয় হলো তিনি এখনও টেস্ট ও ওয়ানডে খেলা চালিয়ে যেতে মনোযোগী।
৩৫ বছর বয়সী পেসার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এমনিতেও বেছে বেছে খেলছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। গত বছরের বিশ্বকাপের পর দেশের জার্সিতে তাকে আর দেখা যায়নি এই সংস্করণে। তার পরও টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার সফলতম পেসার হিসেবে তিনি বিদায় নিচ্ছেন। ৬৫ ম্যাচে তার উইকেট ৭৯টি। তার চেয়ে বেশি উইকেট আছে কেবল লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পার (১০৩ ম্যাচে ১৩০ উইকেট)।
আগামী নভেম্বর থেকে জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া ব্যস্ত থাকবে অ্যাশেজ নিয়ে, যেটিকে অনেক সময় বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয় অস্ট্রেলিয়া। এরপর আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকে পরের বছর পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে ঠাসা সূচি তাদের। এই সময়ে দেশের মাঠে আছে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা সফর, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ, ২০২৭ সালের জানুয়ারিতে ভারতে পাঁচ টেস্ট ম্যাচের সফর, দেশের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটের দেড়শ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিশেষ টেস্ট এবং ২০২৭ সালের জুন-জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে অ্যাশেজ।
২০২৭ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর যৌথভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ায়।
ততদিনে তার হবে ৩৮ ছুঁইছুঁই। ধারণা করা যায়, ২০২৭ অ্যাশেজ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট ও ২০২৭ বিশ্বকাপ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর লক্ষ্য তার। সেই পরিকল্পনায় থাকতেই টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেওয়াকে উপযুক্ত মনে করছেন স্টার্ক।