কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি :
নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘প্রস্তাবিত মহেশখালী মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ হবে। ২০৩০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক মাদার ভেসেল জাহাজ চলাচল শুরু করবে। এ কারণে বন্দরকে ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।’
সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকালে মহেশখালী মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে কক্সবাজারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা উপরোক্ত কথা বলেন।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বন্দরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা যেমন দরকার তেমনি বাইরেরও নিরাপত্তা দরকার বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কারণ, বিশাল সাগরে এই বন্দরের সক্ষমতা অনেক বেশি। সাগরে অনেকের যাতায়াত, তাই বন্দরের ভেতরের ও বাইরের নিরাপত্তার কথা ভাবা হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, মাতারবাড়িতে এক সঙ্গে চারটি মাদার ভেসেল নোঙ্গর করতে সক্ষম হবে। তখন দ্রুতই করা সম্ভব হবে লোড-আনলোডের কার্যক্রম। এখন চট্টগ্রাম বন্দরে মাদার ভেসেল বহিঃনোঙ্গর করে ছোট জাহাজে মালামাল বন্দরে নিতে হয়। এতে খরচ ও সময় দুটোই বেশি যায়। মাতারবাড়ি হতে চকরিয়া পর্যন্ত নতুন সংযোগ সড়ক তৈরি হচ্ছে। মাতারবাড়ি কার্যক্রম চালু হলে, মাল আনলোড করে এ সড়কদিয়ে দ্রুত দেশের সবখানে মালামাল ডেলিভারি দেওয়া যাবে। তখন সবদিক দিয়ে এগিয়ে যাবে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম।
উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশে সাতটি লাইট হাউজ নির্মাণ কাজ চলছে। এগুলোও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর ফলে সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলে সুফল পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারসহ দেশে ৭টি লাইট হাউস নির্মাণের কাজ চলছে। এগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। এগুলো দিয়ে ২৬ কিলোমিটার পর্যন্ত জাহাজের অবস্থান নির্ণয় করে সংকেত পাঠানো যাবে। সেইসঙ্গে থাকবে রেডিও সিগন্যালও।
কিছুদিনের মধ্যে পর্যটন মৌসুম শুরু হচ্ছে। কিন্তু সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ যেতে হলে নাফনদীর মিয়ানমার অংশের পাশ দিয়ে যেতে হয়। নাফনদীর ভরাট হয়ে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নাফনদীর ড্রেজিং করার কোন পরিকল্পনা সরকারের আছে কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আগামী একবছরের মধ্যে এটা সম্ভব নয়। ড্রেজিং করলেও ওই রুট দিয়ে এই মুহূর্তে জাহাজ চালানো যাবে না।
এই উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলে এখনও যুদ্ধ চলছে। ভেতরে কী হচ্ছে আমি জানি না। তবে আশা করা যাচ্ছে, আগামী একবছরের মধ্যে ওই অঞ্চলে হয়তো আরকান আর্মি থাকবে, না হয় মিয়ানমার বাহিনী থাকবে। হতে পারে দুটো বাহিনীই থাকবে। তখন হয়তো শান্ত পরিস্থিতিতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চালানো যাবে। তবে তিনি বিকল্প রুটে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন বলেও নিশ্চয়তা দেন।
কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৪ বছর ধরে এই ঘাট নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মধ্যে ঝগড়া চলছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, এটার যতদ্রুত সম্ভব সমাধান করে ফেলার।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ওই ঘাট চালু করার জন্য আমরা প্রস্তুত হয়ে আছি। সমস্যার সমাধান হলে কক্সবাজারের কস্তুরাঘাট থেকে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া রুটে নৌ চলাচল শুরু করা যাবে।
তিনি নৌবাহিনীর তারকা হোটেল ‘স্বপ্নীল সিন্ধু’তে এই ব্রিফিং করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুকসহ নৌবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন রোববার (২০ অক্টোবর) কক্সবাজার আসেন। দুইদিনের এই সফরে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রস্তাবিত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি চ্যানেল ও ব্রেক ওয়াটার পরিদর্শন করেন।
এর আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর এবং কোল পাওয়ার কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। পরে মহেশখালীতে অবস্থিত এসপিএম প্রকল্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান ও সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।