নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, বই মেলাকে ঘিরে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। মেলাকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। মেলার জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই মেলায় আইনশৃঙ্খলার জন্য ক্ষতিকর বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে- এমন কোনো বিতর্কিত বই প্রকাশে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।’
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর শাহবাগের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একুশে বইমেলায় ডিএমপির গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করতে এসে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অমর একুশে বই মেলা বাঙালির বড় ঐতিহ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন। এ জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বইমেলাকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে তল্লাশি দল থাকবে, সন্দেহভাজন কিছু দেখলে তারা তল্লাশি করবেন। মূল মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। এছাড়া কাউকে সন্দেহ হলে তাকে পৃথক কক্ষে নিয়ে তল্লাশি করা হবে। মেলা প্রাঙ্গণসহ আশেপাশের এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকধারী সদস্য মোতায়েন থাকবেন। মেলার আশপাশে মোটরসাইকেল ও গাড়ি টহল থাকবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বইমেলা অসাম্প্রদায়িক আয়োজন। আমদের এই আয়োজনকে ঘিরে বিভিন্ন সময় হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। এখানে নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতার অতীত ঘটনা রয়েছে। এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে মাথায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। তবে এই আয়োজন ঘিরে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই।
বিভিন্ন সময় বেশ কিছু বইয়ের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে পুলিশ। এবার এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বইয়ের বিষয়টি সবসময় বাংলা একাডেমি দেখে থাকে। তবে এমন কোনো লেখা বা বিষয় পাঠকের নজরে আসে বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং সেটি নিয়ে যদি কোনো সমালোচনা হয় তখন পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা ও প্রয়োজন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
হাবিবুর রহমান বলেন, বইমেলায় ডিএমপি পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলায় একটি পুলিশ কন্ট্রোলরুম বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে মেলা ও এর আশপাশ পর্যবেক্ষণ করা হবে। নিয়মিত গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি মেলার প্রবেশপথে কয়েক ধাপে তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার ভেতর ও বাইরে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ওয়াচ টাওয়ারসহ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
হাবিবুর রহমান বলেন, মেলায় মানুষের ব্যাগ তল্লাশিসহ যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ তৎপর থাকবে। ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল টিম থাকবে। পুলিশি নিরাপত্তার বাইরেও পুলিশের ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার (স্তন্যপান কেন্দ্র) থাকবে, ব্লাড ব্যাংক, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা এবং শিশু হারিয়ে গেলে তা খুঁজে দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে মেলায়।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, এবারের বইমেলার প্রতিবাদ্য ‘পড়ো বই গড়ো দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। এই মেলায় গড়ে প্রতিদিন এক লাখ মানুষের সমাগম হবেও বলে উল্লেখ করেন ডিএমপি কমিশনার।
এবার মেট্রোরেলের জন্য মেলায় দর্শনার্থী বাড়বে বলে মন্তব্য করে হাবিবুর রহমান আরও বলেন, এবারের মেলায় বিশেষ একটি সুবিধা যুক্ত হয়েছে। মেট্রোরেলের একটি স্টেশন মেলার গাঁ ঘেঁষে। তাই দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের দিকের গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে দর্শনার্থীদের মেলায় প্রবেশ সহজ হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোট পাঁচটি গেট থাকবে। প্রত্যেকটি গেট থেকেই মেলায় প্রবেশ এবং বের হওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া নারী-পুরুষের জন্য আলাদা গেটের ব্যবস্থা থাকবে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টলগুলো পরিদর্শন করেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।