নিজস্ব প্রতিবেদক :
সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সোমবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় বিএনপি মিডিয়া সেল আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভাচ তিনি এ কথা বলেন।
সোমবার (২৪ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর লেডিস ক্লাবে সাংবাদিকদের সম্মানে বিএনপি মিডিয়া সেল আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশে একটি অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মানুষ চায় দেশে স্থিরতা ফিরে আসুক। কেউ চায় না আগের অবস্থা ফিরে আসুক। সবাইকে এক প্ল্যাটফরমে দাঁড়িয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো মূল্যে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, এই মাত্র মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) উনার বক্তব্যে যে কথাটি বলেছেন, কোথাও কেউ কিছু একটা হয়তো করার চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনী ও জনগণকে মুখোমুখি করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এতটুকু বুঝি, এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র আছে। আমরা সবাই মিলে যদি সচেতন হই তাহলে অবশ্যই আমরা এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।
তিনি বলেন, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, ১৬ বছর রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, তাদের ত্যাগকে বৃথা যেতে দেয়া যাবে না।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ে এবং বিগত ১৬-১৭ বছরের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লড়াইয়ে যাঁরা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের ত্যাগ যেন বৃথা না যায়, তা নিয়ে কাজ করি।’ তিনি সব বিষয়ে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি সূক্ষ্মভাবে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিএনপির পক্ষ থেকে উত্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, সে সময়ে যেভাবে সাংবাদিকেরা আমাদের পাশে ছিলেন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে বাংলাদেশের পাশে ছিলেন, তাঁদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আগামী দিনেও তিনি সাংবাদিকদের বিএনপির পাশে থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যে বিষয়গুলো আমাদের আশেপাশে দেখেছি, প্রত্যেকটি মানুষ বাংলাদেশে চায়- এর একটা পরিবর্তন হোক। আমাদের আহ্বান থাকবে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষকে রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যা করার, সেই সহযোগিতা করতে সক্ষমতা হবে। আমাদের এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, আমি মনে করি, এখানে আপনাদের (সাংবাদিক) বিরাট ভূমিকা আছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন বিষয় বিতর্কিত করা হচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিক) যদি এই বিষয়গুলো আপনাদের অবস্থান থেকে সত্যভাবে জাতির সামনে তুলে ধরেন, তাহলে আমরা এই ষড়যন্ত্র থেকে। আর জুলাই-আগস্ট মাসে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক স্বৈরাচারকে বিদায় করার জন্য, গণতন্ত্র ও নিজেদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছেন—তাদের এই প্রতিটি মানুষের এই উৎসর্গ যেন স্বার্থক হয়, তার জন্য আমাদের সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াতে হবে। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইফতার মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল ও বিপদে ফেলার জন্য সুচতুরভাবে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যেন বিপন্ন হয়, আমরা যেন আবার অরক্ষিত হয়ে পড়ি, আমাদের সেই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যারা দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে জাতির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তাদের আবার বিতর্কিত করার হীন প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে একটি নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে। চক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশকে আবার অস্থিতিশীল করার, আবার বিপদে নিমজ্জিত করার জন্য। বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাদেরকেও বিতর্কিত করে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনী কে বিতর্কিত করে ফেলা হচ্ছে। এটার পিছনে কোন মহান উদ্দেশ্য থাকতে পারে না, এটার উদ্দেশ্য একটাই, ঠিক অতীতে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যেভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করা হয়েছে।
বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন পাভেলের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানসহ সাংবাদিকরা।