নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর কুড়িল এলাকা থেকে এক ট্রাভেল ব্যবসায়ীকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক পরিচয় দিয়ে অপহরণের অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (উত্তর)।
ডিবি বলছে, গ্রেপ্তার দুই পুলিশ সদস্য সিআইডিতে কর্মরত। তাদের নেতৃত্বে রাজধানী জুড়ে দাপিয়ে বেড়াত একটি অপহরণকারী চক্র। সম্প্রতি এক ভুক্তভোগীর মামলার তদন্তে নেমে এই দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চক্রের সদস্যরা হলেন- এসআই রেজাউল করিম (৩৯), কনস্টেবল আবু সাঈদ (৩২), বরিশালের উজিরপুরের মো. ইমন (২১), একই উপজেলার আব্দুল্লাহ আল ফাহিম (২১) ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার শরীফ হোসেন (২৬)। ফাহিম ও ইমনকে গত ৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি তিনজনকে গতকাল রোববার (২৪ ডিসেম্বর) গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাজ হলো তদন্ত করা। যখন থানায় কোনো মামলা দায়ের হয় তখন সেই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করা হয় বা ছায়া তদন্ত করা হয়। ভাটারা থানায় গত আগস্ট মাসে এক ট্রাভেল ব্যবসায়ী ভুক্তভোগী হিসেবে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন যে, সিআইডি পরিচয় দিয়ে ফোন করে ধরে নিয়ে গিয়ে টাকা-পয়সা আদায় শেষে তাকে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রেখে যেত। এমন বেশকিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (উত্তর) তদন্তের নামে।
তদন্তের একপর্যায়ে বরিশাল থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আদালতের তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে অপহরণ ও টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করেন। এই সময়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন চক্রে একজন পরিদর্শক ও আরেকজন এসআই পদের দুই পুলিশ সদস্য জড়িত। যদিও এই পরিচয় সঠিক নয়। যিনি নিজেকে পরিদর্শক রবিউল পরিচয় দিয়েছেন তিনি আসলে একজন কনস্টেবল। তারা নিজেদের ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে টাকা পয়সা আদায় করত। সিআইডিতে কর্মরত দুই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে অপহরণ চক্রের সদস্যরাও জড়িত।
পরবর্তী সময়ে দুইজনের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয় ডিবি। এরপর অপহরণ ও ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ফোনের কললিস্ট ও লোকেশন ট্রাকিং করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, পুলিশ কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় নেবে না। যেহেতু আমরা অপরাধীকে গ্রেপ্তার করি। সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য যদি অপহরণকারীদের সঙ্গে মিশে অপরাধ করে, তখন তাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অতীতেও ছাড় দেইনি, ভবিষ্যতেও কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যে দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আমরা তাদের রিমান্ডে আনব। তাদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হবে আর কেউ জড়িত আছে কি না। অথবা বর্তমান ও সাবেক কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত আছে কি না আমরা জানার চেষ্টা করব।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে ভুয়া পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। এবারও আমরা সিআইডি পরিচয়ে একটি অপহরণ চক্র ধরতে গিয়ে আসল সিআইডি গ্রেপ্তার করেছি। প্রতি বছর পুলিশ বাহিনীতে খারাপ কর্মকাণ্ডের কারণে যে পরিমাণ শাস্তি পায়, অন্য কেনো সংগঠন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তা পায় না। একদিকে পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেমন মানবিক, তেমনি এসব বিষয়ে অমানবিক ও কঠোর। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও অপহরণের মতো অপরাধ করলে এটা পুলিশ বাহিনী বরদাস্ত করবে না।
কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেলে তদন্তের পর সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।