Dhaka শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সারের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই : কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এ বছরও সারের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, গত চার বছরে প্রধানমন্ত্রী সারের দাম এক টাকাও বাড়াননি। অর্থ মন্ত্রণালয় বারবার আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে যে, সারের দাম বাড়ান, আমরা অর্থ যোগাড় করতে পারছি না, আমরা আপনাদের অর্থ দিতে পারছি না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী অনড়, তিনি কিছুতেই সারের দাম বাড়াবেন না।

সোমবার (৩ এপ্রিল) সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা শেষে তিনি এ কথা জানান।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে আজকেও আমরা আলোচনা করেছি। আমি আপনাদের বলতে চাই, আশা করি আপনারা জাতির সামনে তুলে ধরবেন। এ বছরও আমাদের সারের দাম বৃদ্ধির কোন পরিকল্পনা নেই। সারের দাম বাড়ানো হবে না।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, সারের দাম বাড়বে না। কৃষক যাতে পর্যাপ্ত সার পায়, সে জন্য আমরা চাহিদা নির্ধারণ করেছি। মার্চে ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি ছিল, তবুও আমরা একটু কমিয়ে চাহিদা নির্ধারণ করেছি। এই সারের চাহিদা ২৭ লাখ টন। ডিএপি লাগে ৫ থেকে ৬ লাখ টন, এটির দাম কমানোর জন্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ লাখ টন। টিএসপি সাড়ে সাত লাখ টন, এমএপি ও এমওপির চাহিদা ধরা হয়েছে ৯ লাখ টন।

এখন কী পরিমাণ সার মজুত আছে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, চার লাখ টন ইউরিয়া মজুত আছে। টিএসপি দুই লাখ টন, ডিএপি আড়াই লাখ টন, এমওপি সোয়া দুই লাখ টন মজুত আছে। গত বছরের তুলনায় সবগুলোই কিছু কিছু কম আছে।

তিনি বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সার নিয়ে কোনো সংকট সৃষ্টি হতে দেব না। সার নিয়ে কৃষকদের ভোগান্তি হলে আমাদের উৎপাদন কমে যাবে। প্রতিবছরই পেঁয়াজ সংকট হতো। কিন্তু এবার তা হয়নি।

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দেশে ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হবে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে চাই। সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, সার উপকরণ হিসেবে আমাদের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আমরা প্রতিবছরই আগামী অর্থবছরে কী পরিমাণ সার লাগবে সেটি নির্ধারণ করি। আমরা সেই সার কীভাবে সংগ্রহ করব, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন কত হবে, বিদেশ থেকে কত আমদানি করব- সেটিও নির্ধারণ করা হয়। আরেকটি বিষয় আলোচনা হয়েছে যে, যে কোনো পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আমরা সার নিয়ে কোন সংকট সৃষ্টি হতে দেব না। সার নিয়ে যাতে কোন কৃষককে ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।

করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরে বিশ্ববাজারে সার পরিস্থিতি তুলে ধরতে তিনি আরও জানান, আগে ২৫০ ডলার প্রতিটনে আমরা পটাসিয়াম সার কিনতাম। সেই সার আমরা এক হাজার ২০০ ডলারেও কিনেছি। এখনও তা ৭০০ থেকে ৮০০ ডলারে কিনতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কমে আসছে। কিন্তু যেভাবে কমছে, তাতে আগের অবস্থায় যাচ্ছে না।

স্থানীয়ভাবে সার উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন বিসিআইসির (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন) সার কারখানাগুলো যে সক্ষমতা আছে, যদি গ্যাস সরবরাহ করা যায় তাহলে খুব কম পরিমাণে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। বা করতে হবেই না, আমরা এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি। গত দু-তিন বছর ধরে ঠিক মতো গ্যাসের সরবরাহ হচ্ছে না। মাঝে মাঝেই সার কারখানাগুলো বন্ধ রাখতে হয়। তবে ইউরিয়া সার যতটা সম্ভব স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে আমরা উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করবো। জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবো, তারা যাতে সার কারখানাগুলো সচল রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ রাখে। গ্যাসের দাম বাংলাদেশে কম হওয়াতে স্থানীয়ভাবে সার উৎপাদন খরচও বেশি না। তা সত্ত্বেও যদি একেবারে আন্তর্জাতিক দামে যদি বিসিআইসি মন্ত্রণালয়কে দেয়, তাতেও দাম আমাদের অনেক কম পড়বে।

কামরুল আশরাফ খান পোটন নামের নরসিংদীর সাবেক একজন সংসদ সদস্য ৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, তাকে আমরা কালো তালিকাভুক্ত করেছি। তিনি আমাদের এখানের কোনো দরপত্রে অংশ নিতে পারবেন না। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। উল্টো তিনি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কীভাবে যেন আদালত তাদের পক্ষেই রায় দিয়েছেন।

এ সময় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান সিইসির

সারের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই : কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৪:২৫:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এ বছরও সারের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, গত চার বছরে প্রধানমন্ত্রী সারের দাম এক টাকাও বাড়াননি। অর্থ মন্ত্রণালয় বারবার আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে যে, সারের দাম বাড়ান, আমরা অর্থ যোগাড় করতে পারছি না, আমরা আপনাদের অর্থ দিতে পারছি না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী অনড়, তিনি কিছুতেই সারের দাম বাড়াবেন না।

সোমবার (৩ এপ্রিল) সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা শেষে তিনি এ কথা জানান।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে আজকেও আমরা আলোচনা করেছি। আমি আপনাদের বলতে চাই, আশা করি আপনারা জাতির সামনে তুলে ধরবেন। এ বছরও আমাদের সারের দাম বৃদ্ধির কোন পরিকল্পনা নেই। সারের দাম বাড়ানো হবে না।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, সারের দাম বাড়বে না। কৃষক যাতে পর্যাপ্ত সার পায়, সে জন্য আমরা চাহিদা নির্ধারণ করেছি। মার্চে ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি ছিল, তবুও আমরা একটু কমিয়ে চাহিদা নির্ধারণ করেছি। এই সারের চাহিদা ২৭ লাখ টন। ডিএপি লাগে ৫ থেকে ৬ লাখ টন, এটির দাম কমানোর জন্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ লাখ টন। টিএসপি সাড়ে সাত লাখ টন, এমএপি ও এমওপির চাহিদা ধরা হয়েছে ৯ লাখ টন।

এখন কী পরিমাণ সার মজুত আছে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, চার লাখ টন ইউরিয়া মজুত আছে। টিএসপি দুই লাখ টন, ডিএপি আড়াই লাখ টন, এমওপি সোয়া দুই লাখ টন মজুত আছে। গত বছরের তুলনায় সবগুলোই কিছু কিছু কম আছে।

তিনি বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সার নিয়ে কোনো সংকট সৃষ্টি হতে দেব না। সার নিয়ে কৃষকদের ভোগান্তি হলে আমাদের উৎপাদন কমে যাবে। প্রতিবছরই পেঁয়াজ সংকট হতো। কিন্তু এবার তা হয়নি।

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দেশে ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হবে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে চাই। সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, সার উপকরণ হিসেবে আমাদের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আমরা প্রতিবছরই আগামী অর্থবছরে কী পরিমাণ সার লাগবে সেটি নির্ধারণ করি। আমরা সেই সার কীভাবে সংগ্রহ করব, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন কত হবে, বিদেশ থেকে কত আমদানি করব- সেটিও নির্ধারণ করা হয়। আরেকটি বিষয় আলোচনা হয়েছে যে, যে কোনো পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আমরা সার নিয়ে কোন সংকট সৃষ্টি হতে দেব না। সার নিয়ে যাতে কোন কৃষককে ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।

করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরে বিশ্ববাজারে সার পরিস্থিতি তুলে ধরতে তিনি আরও জানান, আগে ২৫০ ডলার প্রতিটনে আমরা পটাসিয়াম সার কিনতাম। সেই সার আমরা এক হাজার ২০০ ডলারেও কিনেছি। এখনও তা ৭০০ থেকে ৮০০ ডলারে কিনতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কমে আসছে। কিন্তু যেভাবে কমছে, তাতে আগের অবস্থায় যাচ্ছে না।

স্থানীয়ভাবে সার উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন বিসিআইসির (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন) সার কারখানাগুলো যে সক্ষমতা আছে, যদি গ্যাস সরবরাহ করা যায় তাহলে খুব কম পরিমাণে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। বা করতে হবেই না, আমরা এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি। গত দু-তিন বছর ধরে ঠিক মতো গ্যাসের সরবরাহ হচ্ছে না। মাঝে মাঝেই সার কারখানাগুলো বন্ধ রাখতে হয়। তবে ইউরিয়া সার যতটা সম্ভব স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে আমরা উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করবো। জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবো, তারা যাতে সার কারখানাগুলো সচল রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ রাখে। গ্যাসের দাম বাংলাদেশে কম হওয়াতে স্থানীয়ভাবে সার উৎপাদন খরচও বেশি না। তা সত্ত্বেও যদি একেবারে আন্তর্জাতিক দামে যদি বিসিআইসি মন্ত্রণালয়কে দেয়, তাতেও দাম আমাদের অনেক কম পড়বে।

কামরুল আশরাফ খান পোটন নামের নরসিংদীর সাবেক একজন সংসদ সদস্য ৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, তাকে আমরা কালো তালিকাভুক্ত করেছি। তিনি আমাদের এখানের কোনো দরপত্রে অংশ নিতে পারবেন না। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। উল্টো তিনি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কীভাবে যেন আদালত তাদের পক্ষেই রায় দিয়েছেন।

এ সময় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।