নিজস্ব প্রতিবেদক :
সারাদেশে রোববার (১৮ জুন) ভিটামিন ‘এ প্লাস’ ক্যাম্পেইন কর্মসূচি পরিচালিত হবে বলে জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এই কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে ২ কোটি ২০ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। তবে দুর্গম এলাকায় এই ক্যাম্পেইন চলবে টানা চার দিন।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেল্টালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই কর্মসূচির আওতায় ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী ২৫ লাখ শিশুকে নীল রঙের ক্যাপুসল খাওয়ানো হবে। আর ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী প্রায় ১ কোটি ৯৫ লাখ শিশুকে খাওয়ানো হবে লাল রঙের ক্যাপুসল। মোট ২ কোটি ২০ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। ক্যাম্পেইনে কাজ করবেন এক লাখ ২০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী আছেন দুই লাখ ৪০ হাজার।
তিনি বলেন, শিশুদের ভরা পেটে ভিটামিন ‘এ প্লাস’ খাওয়াতে হবে। কান্নারত বা অসুস্থ শিশুকে খাওয়ানো যাবে না। ক্যাম্পেইন চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
দিনব্যাপী কর্মসূচিতে দেশের সব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। তবে পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় এই কর্মসূচি চার দিন চলবে।
ক্যাপসুল খাওয়ানোর বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে শিশুদের ভরা পেটে কেন্দ্রে আনতে হবে। ছয় মাসের কম বয়সী এবং পাঁচ বছরের বেশি বয়সী এবং অসুস্থ শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে না।
ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের উপকারিতা তুলে ধরে মন্ত্রী জানান, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর মাধ্যমে শিশুদের অন্ধত্ব প্রতিরোধসহ বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচানো সম্ভব। ভিটামিন ‘এ’ দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। সব ধরনের শিশু মৃত্যুহার ২৪ ভাগ কমায়। হাম, ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দেশে অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুদের মধ্যে রাতকানা রোগের হার ৪ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম গ্রহণ করে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো শুরু করে। পরবর্তীতে বর্তমান সরকার ২০১০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে বছরে দুইবার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো অব্যাহত রাখার ফলে বর্তমানে ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত রাতকানা রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা (০.০৪%) প্রায় নাই বললেই চলে।
তিনি জানান, জোর করে বা কান্নারত অবস্থায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে না, ৬ মাসের কম, ৫ বছরের বেশি বয়সী এবং অসুস্থ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে না।
জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ পাস ক্যাম্পেইন চলাকালে যাতে কোন মহল নেতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে এ কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে না পারে, সেজন্য সব কর্মী এবং সাংবাদিকদের জনগণের পাশে থেকে মিথ্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
মায়েদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা খালি পেটে শিশুদের কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন না। খালি পেটে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে না। এছাড়া অসুস্থ হলে কিংবা কান্নারত অবস্থায় শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো যাবে না। ভিটামিন ‘এ’ নিয়ে অনেক মহল থেকে অনেক কথা বলা হয়। আপনারা এতে কান দেবেন না। আপনারা শিশুদের কেন্দ্রে নিয়ে এসে টিকা খাওয়াবেন। আমরা আশা করবো, একটি শিশুও যেন এই ক্যাম্পেইনের বাইরে না থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো খুরশিদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, জাতিসংঘের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. জার্দান জাং রানা প্রমুখ।