নিজস্ব প্রতিবেদক :
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিদেশি নাগরিকদের হুমকি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে ভালো নির্বাচনের কথা বললেও নির্বাচন শুরুর আগেই বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার শুরু করেছে, পুলিশের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগ হামলা চালাচ্ছে। বর্তমান সরকারের হাতে যে বিদেশিরাও নিরাপদ না সেটাই এখন প্রমাণিত হলো।
সোমবার (২২ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) ‘দেশের জ্বালানি খাতে অমানিশা: লুটপাট আর অরাজকতার চালচিত্র’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এক বিদ্যুৎ খাতকে তারা লুটপাটের জন্য আলাদা করে নিয়েছে। শুধুমাত্র এ খাতের জন্য তিন দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার গচ্ছা দিতে হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় দেশকে ফোকলা করে দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি অতি দ্রুত রসাতলে যাচ্ছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, শুধু মাত্র সরকার গলার জোরে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো আছে। দেশে তারা একটা উন্নয়ন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
পাতানো নির্বাচনে দেশের মানুষ আর পা দেবে না বলে মন্তব্য কওে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ নব্য বর্গী, তারা সব লুটপাট করে নিচ্ছে। এদের উদ্দেশ্য যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থাকা। তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। দেশের মানুষকে বোকা বানানোর জন্য তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিন্তু নির্বাচন শুরুই হয়নি অথচ গতকাল রাতে বিএনপি নেতা মজনুকে তুলে নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ ওবায়দুল কাদের স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছেন, পুলিশ দিয়ে প্রতিরোধ করছেন। জনগণ যখন প্রতিবাদ করতে যান তখন পুলিশ ব্যবহার করে তাদের দমন করছেন। ভয়ের রাজত্ব কায়েম করছেন। অগ্নিসন্ত্রাসের নামে তারাই আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছেন। এখন আবার সেই একই ষড়যন্ত্র করছে এবং প্রচার করছে সরকার। তাই দেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দূতাবাস সেই ভয়ে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে দেশের। দেশকে ফোকলা করে দিচ্ছে সরকার। ঋণের বোঝা এতটাই বেশি যে আগামীতে তা পূরণ করা যাবে কি না সন্দেহ আছে। এর ফলে গ্রোথ এত নিচে নেমে আসবে যে দেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এটা আমার কথা না, এটা দেশের নামকরা অর্থনীতিবিদদের কথা।
ফখরুল বলেন, লুটপাট করতে (আওয়ামী লীগ) আবার ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু তা আর হবে না। পাতানো নির্বাচনে দেশের মানুষ আর পা দেবে না। এ লুটেরাদের ও ভোট চোরদের সরাতে না পারলে দেশের অস্তিত্ব থাকবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে নির্বাচন হবে না। সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সব দেশপ্রেমিক দল এক হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, দেশের অর্থনীতি দ্রুত রসাতলে যাচ্ছে, ক্ষমতাসীনরা শুধু উন্নয়নের নামে মিথ্যা কথার মাধ্যমে জনগণকে ধোকা দিচ্ছে। ঋণের টাকা পরিশোধ শুরু হলে সংকট আরও তীব্র হবে। গোটা রাষ্ট্রকে তারা পরিকল্পিতভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে। এটাই মূলত এ সরকারের উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, উন্নয়নের রেখাগুলো দেখলে বোঝা যায়, তারা কিভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। গোটা বিশ্বকে বোকা বানাচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল! আগামী বছর থেকে যখন ঋণ পরিশোধ শুরু হবে তখন এটা এত দ্রুত নিচের দিকে নামবে যে, তখন এটা হয়ে যাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রের রোল মডেল।
তিনি আরো বলেন, এই সরকার বিদ্যুৎ খাতকে আলাদা করে নিয়েছে, কারণ এখানে লুটপাটের সুবিধা বেশি। কুইক রেন্টালের চার্জ দিতে গিয়ে বাংলাদেশকে আগামী বছর থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ করতে হবে। ক্যাপাসিটি চার্জ তো আছেই, এটার জন্য প্রতি বছর সম্ভবত ৭৮ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হয়। এটা একটা ভয়াবহ প্রক্রিয়া যেটা, বাংলাদেশকে এতো বেশি ঋণের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে, যেটা আমাদের পক্ষে বহন করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কথা নয়, গতকাল ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আরেকটি রিপোর্ট বেরিয়েছে- সেখানে তারা পরিষ্কার করে বলছে, মধ্য আয়ের দেশ বলে সরকার যে বাহবা নিচ্ছে যে, ‘আমরা মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছে গেছি। বিশ্বব্যাংক তার রিপোর্টে বলছে, এটি মধ্য আয়ের দেশ থাকবে না, যদি তার পলিসিগত পরিবর্তন করা না যায়। দুর্নীতি বন্ধ করা না যায় এবং সংস্কার না করা যায়। দুর্ভাগ্যজনক গত ১২ বছরে অর্থনীতি খাতে কোনো সংস্কার হয়নি। যেটা হয়েছে, লুটপাটের জন্য বিভিন্ন আইন, নিয়ম ও নীতি তারা করেছে। যার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে লুটপাট করা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ছোটবেলায় মায়ের কাছে শুনতাম- ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গী এলো দেশে। বর্গী কারা? যারা বার্মা থেকে এসে সেই সময়ে বাংলাদেশে ঢুকতো, গ্রামের পর গ্রাম লুট করে নিয়ে যেতো। এই বর্গীর মতো আওয়ামী লীগ দেশে লুটপাটতন্ত্র কায়েম করছে। এটা শুধু আমাদের কথা নয়, প্রত্যেক অর্থনীতিবিধ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যারা লগ্নি কিংবা ঋণ দিয়ে থাকে তারা প্রত্যেকে বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যদি লুটপাঠ বন্ধ না হয়, নীতিগত পরিবর্তন না হয় তাহলে অতি শিগগিরই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ থেকে পড়ে যাবে।
বর্তমানে ঋণের বোঝা দেশ বইতে পারবে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো অর্থনীতিবিদ বলছে না, বর্তমানে ঋণের বোঝা দেশ বইতে পারবে। মধ্য আয়ের দেশ থাকবে না যদি দুর্নীতি বন্ধ করা না যায়। সরকারের মাফিয়ারা দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগ করছে, কিন্তু দেশে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি অতি দ্রুত গতিতে রসাতলে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি ভালো আছে- সরকার গলার জোরে এটি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও কোনো কাজ হবে না জানিয়ে ফখরুল বলেন, আগামী বছর থেকে ঋণ শোধ করা শুরু করলে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সরকারে অর্থনীতির দিকে নজর না দিয়ে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসার পর দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে, এরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে। কারণ নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। তাই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে।
এ্যাবের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে ও কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নুর পরিচালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এ্যাবের মহাসচিব আলমগীর হাসিন আহমেদ।