চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় এক ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের ছবিসংবলিত ব্যানার অপসারণ নিয়ে বিএনপির দু’পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে মারধর ও ছুরিকাঘাতে কমর উদ্দিন (৩৬) নামে এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টায় হলদিয়া ইউনিয়নের আমীরহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত কমর উদ্দিন হলদিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সর্তা গ্রামের বাসিন্দা। আহতরা হলেন- জামাল উদ্দিন তালুকদার (৪০), ওসমান গণি (৩৯) ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (৪১)। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহত কমর উদ্দিন সৌদি আরব প্রবাসী। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে ফিরে যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। কমর উদ্দিন হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর সর্তা গ্রামের মনু পাঠান তালুকদার বাড়ির মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জামাল উদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের আমীরহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে যান। সেখানে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর ছবিসংবলিত ব্যানার টানানো দেখে তা সরাতে সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে বলেন জামাল উদ্দিন তালুকদার। ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয় থেকে বের হয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর বিএনপির আরেকটি পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কি হয়। এ সময় অপর পক্ষের ২০-৩০ জন নেতাকর্মী জামাল উদ্দিন তালুকদার, কমর উদ্দিনসহ সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর ধারালো অস্ত্র, লাঠি নিয়ে হামলা করে। এসময় কমর উদ্দিনসহ চার জন আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসক কমর উদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি তিন জন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হলদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম বলেন, শনিবার রাতে কমর উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। তিনি যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিল। একসময় আওয়ামী লীগের মামলা-হামলার ভয়ে বিদেশে চলে যান। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে এলে তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসে পুনরায় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
স্থানীয়রা জানান, হলদিয়া ইউনিয়নে বিএনপি দুই গ্রুপে বিভক্ত। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়লে খাল থেকে বালু উত্তোলন, পাহাড় কাটা, মাটি বিক্রিসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের এসআই আলাউদ্দিন বলেন, শনিবার রাত ১২টা ৫ মিনিটে গুরুতর আহত অবস্থায় রাউজান থেকে কমর উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, শনিবার রাতে রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের আমিরহাট বাজার অফিস কক্ষের ভেতর রাজনৈতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত কমর উদ্দিন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত বলে হাসপাতালে আনয়নকারীরা জানিয়েছেন।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, রাউজানে দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একজন খুন হয়েছে। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত দুই মাসে রাউজান উপজেলায় রাজনৈতিক বিরোধ এবং চাঁদার জন্য তিন জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে ২৪ জানুয়ারি উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দিনদুপুরে গুলি করে খুন করা হয় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে (৫৫)। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকায় যুবলীগের এক কর্মীকে নিজ ঘর থেকে ধরে এসে পিটিয়ে খুন করা হয়। সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ দলীয় কোন্দলে খুন হয়েছেন কমর উদ্দিন নামে যুবদল কর্মী।
তবে ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে রাউজান উপজেলায়। গত সাত মাসে অন্তত ৩০ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। রাউজান থানায় এক ডজনের মতো মামলা হলেও অধিকাংশ ঘটনায় জড়িতরা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে।