Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারে সামরিক বিমান হামলায় নিহত বেড়ে ১৩৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে সামরিক সরকারের (জান্তা) বিমান হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১৩৩ হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নারী ও বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে। দেশটিতে ক্ষমতাচ্যুত প্রশাসনের জাতীয় ঐক্যের সরকারের মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী অং মাও মিন এ তথ্য জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সকালে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাগাইং প্রদেশে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের এক অনুষ্ঠানের সময় এ হামলা চালানো হয়। সকালে পিডিএফ স্থানীয় অফিসের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো।

জাতীয় ঐক্যের সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দুই বছরের বেশি সময় আগে দেশটিতে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থানের পর এটা অন্যতম বড় একটি হামলা ও হতাহতের ঘটনা। এই ‘জঘন্য কর্মকাণ্ড’ যুদ্ধাপরাধের শামিল।

হামলা চালানোর দায় স্বীকার করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক বাসিন্দার আপলোড করা ভিডিওতে দেখা গেছে, মাটিতে খণ্ডিত লাশ পড়ে আছে। বেশ কয়েকটি ভবনে আগুন জ্বলছে। বাসিন্দারা চিৎকার করে বলছেন, যদি কেউ বেঁচে থাকেন তাহলে সাড়া দেন, আমরা আপনাদের সাহায্য করার জন্য আসছি।

সিএনএন’র নিউজে বলা হয়েছে, হামলায় আরও ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিয়ুনহলা গোষ্ঠী জানিয়েছে। এছাড়া হামলায় আরও অন্তত ২০ শিশুও নিহত হয়েছে। এমনকি হামলার পর চিকিৎসাকর্মীদের হামলাস্থলে পৌঁছাতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মানবাধিকার মন্ত্রী অং মিও মিন।

হামলার শিকার এই সাগাইং অঞ্চলটি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের প্রায় ১১০ কিলোমিটার (৭০ মাইল) উত্তরে অবস্থিত। কয়েক মাস ধরে লড়াইয়ের পর এই অঞ্চলটি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

অবশ্য হামলার পর প্রাথমিক রিপোর্টে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫০ বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরে বুধবার দেশটির স্বাধীন মিডিয়ার রিপোর্টে নিহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১০০ জনে উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়। আর এবার সেই সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে ১৩৩ জনে।

দুই বছরেরও বেশি সময় আগে সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারের পতনের পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে অস্থিরতা চলছে। মূলত অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমার অশান্তিতে নিমজ্জিত হয়। আর এর ফলেই দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং সশস্ত্র বিদ্রোহের সূচনা হয়।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তার বিরোধীদের দমন করতে তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিরোধীদের সশস্ত্র সংগ্রাম মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমানভাবে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির জান্তা সরকার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তখন থেকে ৩ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে অনুমান করা হয়।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের কানবালু শহরের পাজিগি গ্রামের বাইরে দেশটির বিরোধী গোষ্ঠীর একটি স্থানীয় কার্যালয় খোলার জন্য মঙ্গলবার সকাল ৮টায় বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। উপস্থিত সেই মানুষের ভিড়েই সরাসরি বিমান হামলা চালায় সেনাবাহিনী।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, হামলার প্রায় আধা ঘণ্টা পরে একটি হেলিকপ্টার সেখানে উপস্থিত হয় এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতার গুলিবর্ষণ করে।

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্যরা এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে এবং সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহি করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর থেকে সাধারণ মানুষের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে জান্তা সরকার। ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০০ বিমান হামলা চালিয়েছে সামরিক বাহিনী।

বিমান হামলার নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে মিয়ানমারের শাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মিয়ানমারে এমন হামলায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

মিয়ানমারে সামরিক বিমান হামলায় নিহত বেড়ে ১৩৩

প্রকাশের সময় : ১২:৫৬:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে সামরিক সরকারের (জান্তা) বিমান হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১৩৩ হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নারী ও বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে। দেশটিতে ক্ষমতাচ্যুত প্রশাসনের জাতীয় ঐক্যের সরকারের মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী অং মাও মিন এ তথ্য জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সকালে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাগাইং প্রদেশে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের এক অনুষ্ঠানের সময় এ হামলা চালানো হয়। সকালে পিডিএফ স্থানীয় অফিসের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো।

জাতীয় ঐক্যের সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দুই বছরের বেশি সময় আগে দেশটিতে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থানের পর এটা অন্যতম বড় একটি হামলা ও হতাহতের ঘটনা। এই ‘জঘন্য কর্মকাণ্ড’ যুদ্ধাপরাধের শামিল।

হামলা চালানোর দায় স্বীকার করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক বাসিন্দার আপলোড করা ভিডিওতে দেখা গেছে, মাটিতে খণ্ডিত লাশ পড়ে আছে। বেশ কয়েকটি ভবনে আগুন জ্বলছে। বাসিন্দারা চিৎকার করে বলছেন, যদি কেউ বেঁচে থাকেন তাহলে সাড়া দেন, আমরা আপনাদের সাহায্য করার জন্য আসছি।

সিএনএন’র নিউজে বলা হয়েছে, হামলায় আরও ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিয়ুনহলা গোষ্ঠী জানিয়েছে। এছাড়া হামলায় আরও অন্তত ২০ শিশুও নিহত হয়েছে। এমনকি হামলার পর চিকিৎসাকর্মীদের হামলাস্থলে পৌঁছাতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মানবাধিকার মন্ত্রী অং মিও মিন।

হামলার শিকার এই সাগাইং অঞ্চলটি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের প্রায় ১১০ কিলোমিটার (৭০ মাইল) উত্তরে অবস্থিত। কয়েক মাস ধরে লড়াইয়ের পর এই অঞ্চলটি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

অবশ্য হামলার পর প্রাথমিক রিপোর্টে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫০ বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরে বুধবার দেশটির স্বাধীন মিডিয়ার রিপোর্টে নিহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১০০ জনে উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়। আর এবার সেই সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে ১৩৩ জনে।

দুই বছরেরও বেশি সময় আগে সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারের পতনের পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে অস্থিরতা চলছে। মূলত অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমার অশান্তিতে নিমজ্জিত হয়। আর এর ফলেই দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং সশস্ত্র বিদ্রোহের সূচনা হয়।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তার বিরোধীদের দমন করতে তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিরোধীদের সশস্ত্র সংগ্রাম মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমানভাবে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির জান্তা সরকার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তখন থেকে ৩ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে অনুমান করা হয়।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের কানবালু শহরের পাজিগি গ্রামের বাইরে দেশটির বিরোধী গোষ্ঠীর একটি স্থানীয় কার্যালয় খোলার জন্য মঙ্গলবার সকাল ৮টায় বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। উপস্থিত সেই মানুষের ভিড়েই সরাসরি বিমান হামলা চালায় সেনাবাহিনী।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, হামলার প্রায় আধা ঘণ্টা পরে একটি হেলিকপ্টার সেখানে উপস্থিত হয় এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতার গুলিবর্ষণ করে।

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্যরা এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে এবং সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহি করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর থেকে সাধারণ মানুষের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে জান্তা সরকার। ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০০ বিমান হামলা চালিয়েছে সামরিক বাহিনী।

বিমান হামলার নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে মিয়ানমারের শাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মিয়ানমারে এমন হামলায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।