নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি দেশে গণতন্ত্র চায় না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি সব সময় পানি ঘোলা করতে চায় এবং ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। তারা দেশে গণতন্ত্র চায় না।
সোমবার (৮ মে) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকে প্রতিহত করার ঘোষণা বা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা এটি গণতন্ত্রকে প্রতিহত করা বা গণতন্ত্রকে ঠেকিয়ে দেওয়ার ঘোষণার মত। আসলে বিএনপি দেশে গণতন্ত্র চায় না। আমরা চাই বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। বিএনপি অতীতের মতো পালিয়ে বেড়াক, সেটা আমরা চাই না। আমরা বিএনপির সঙ্গে খেলতে চাই। কিন্তু বিএনপি খেলা থেকে বার বার পালিয়ে যায়, এটি দুঃখজনক।
নির্বাচনের আগেই আসনসংখ্যা ভাগ বাটোয়ারা করতে চাচ্ছে বিএনপির শরিকরা। এ বিষয়টি কীভাবে দেখেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, শরিকরা আসন চাইবে, স্বাভাবিক। কিন্তু বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা নির্বাচনে যাবে কিনা। আসন বণ্টন নিয়ে শরিকরা আলোচনা করছে, তার অর্থ হচ্ছে তার নির্বাচনে যেতে চায়। বিএনপি নির্বাচন থেকে পালিয়ে গেলে তারাও বিএনপি থেকে পালিয়ে যাবে।
বিএনপি আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে, সে আন্দোলনে অংশ নিতে আসনের বণ্টন চাচ্ছে দলটির শরিক দলগুলো। এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শরিকরা আসন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বিএনপিকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ কি না।
তিনি বলেন, শরিকরা আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা করছে, তার মানে বিএনপি নির্বাচন না চাইলেও শরিকরা নির্বাচন চায়। বিএনপি নির্বাচন থেকে পালিয়ে গেলে শরিকরাও বিএনপি থেকে পালিয়ে যাবে। সেটিরই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এটি।
নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা অবশ্যই চাই বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। বিএনপি অতীতের মতো পালিয়ে বেড়াক সেটা আমরা চাই না। আমরা বিএনপির সঙ্গে খেলতে চাই। কিন্তু বিএনপি খেলা থেকে বার বার পালিয় যায়। এটিই হচ্ছে দুঃখজনক।
বিএনপির দাবি মেনে নিয়ে তাদের নির্বাচনে আনা সম্ভব কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির আবদারটা হচ্ছে মূলত, তারা নানা ভাষায় বলে, নানা ছুতোয় বলে, নানা কৌশলে বলে। কিন্তু তাদের সব কথার সারমর্ম হচ্ছে- তারা এমন একটি ব্যবস্থা চায়, যে ব্যবস্থার মাধ্যমে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানো হবে। সে নিশ্চয়তা দরকার। সেটিতো নির্বাচন কমিশন ও জনগণ দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হয় সেভাবেই আমাদের দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে নির্বাচনে আশা করব বিএনপি অংশগ্রহণ করবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের যখন একটি সুন্দর নির্বাচন করার ইচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ঠিক তখন বিএনপির নেতৃবৃন্দ তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের বলেছেন- আমরা বাংলাদেশে এমন একটি নির্বাচন করতে চাই, যা হবে ব্রিটেনের মত সুন্দর নির্বাচন। এ নির্বাচনে তিনি সব ধরণের পর্যবেক্ষককে স্বাগত জানিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে গেছেন দেশটির নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সেখানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক দেখা করে তাকে বলেছেন, শেখ হাসিনা আমাদের আইডল। কেবল তারই না, তার মেয়েদেরও আইডল। এরপরেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মির্জা ফখরুল কী বললেন, তাতে কিছু যায়-আসে না। বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন, তাতে আসে-যায়। বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী যে শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন, তা শুনে বিএনপি নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সে কারণে আবোল-তাবোল বকা শুরু করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর ও আগামী নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববাসীর মনে যে প্রশ্ন সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ বা সরকারের অবস্থান কী জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগের মনোভাব যখন ব্যক্ত করেছেন, তখন সরকারের মনোভাবও ব্যক্ত করেছেন। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দুটি বিষয়ই পরিষ্কার হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করতে পারে, কিন্তু নির্বাচন বন্ধ কিংবা ঠেকিয়ে দেওয়ার ধৃষ্টতার সুযোগ নেই। দেশের মানুষ বিএনপিকে সেই সুযোগ দেবে না। বিশ্বাঙ্গণে শেখ হাসিনার উচ্চতা কোন জায়গায়— এ সফরের মাধ্যমে বিএনপির অনুধাবন করার দরকার বলে আমি মনে করি। তার সরকারের প্রতি বিশ্বাঙ্গণের সমর্থন কোন জায়গায়, তা নিশ্চয়ই বিএনপি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে।
শ্রমিকদের পাওনা না দেওয়ার কারণে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, আদালত বলেছে, মামলা চলবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, একজন নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে শ্রমিকরা মামলা করেছেন। আর কেউ করেননি। বারবার তাগাদা দেওয়ার পারেও একজন নোবেল জয়ী শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেননি, বরং অসৎ উপায়ে সেটির সমাধান করার চেষ্টা চালিয়েছেন। এমন অভিযোগও রয়েছে। এগুলো অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ ঘটনা নোবেল পুরস্কারকে কলঙ্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী। ড. হাছান বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। যারা মামলা করেছেন, তারা নিশ্চয়ই মামলা চালাবেন। আশা করব, মামলা নিষ্পত্তির আগেই পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হবে।