আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী এবং ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করা মার্কিন আর্থিক বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী নাথান অ্যান্ডারসন নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক বার্তায় নাথান অ্যান্ডারসন বলেন, আমি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাইপলাইনে যেসব আইডিয়া ছিল— সেগুলোর সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। আমাদের হাতে আর নতুন কোনো আইডিয়া নেই। মূলত এ কারণেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অ্যান্ডারসন একটি ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, আমি গত বছরের শেষে আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং আমাদের দলের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করি, আমি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পাইপলাইনে যেসব আইডিয়া ছিল—সেগুলোর সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। আমাদের হাতে আর নতুন কোনো আইডিয়া নেই। মূলত এ কারণেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
২০১৭ সালে হিন্ডেনবার্গ প্রতিষ্ঠা করেন নাথান অ্যান্ডারসন। এটি একটি ফরেনসিক আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যেটি সম্পত্তির মালিকানা, আর্থিক চুক্তি এবং আমানত বিশ্লেষণ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা আছে, হিন্ডেনবার্গ ‘মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয়’ যেমন— আর্থিক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং অপ্রকাশিত আর্থিক লেনদেনগুলোর খোঁজ করে থাকে।
হিন্ডেনবার্গ শর্ট সেলিং পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন কম্পানির আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ব্যবস্থাপনার ত্রুটি প্রকাশ করতো। এরপর সংস্থাটি তাদের নিশানা করা কম্পানির শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার পূর্বাভাসে বিনিয়োগ করতো। হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন দেখে অনেক বিনিয়োগকারীও শেয়ার বিক্রি করে দিতেন। শর্ট সেলিং পদ্ধতিতে একজন বিনিয়োগকারী শেয়ার ধার নিয়ে বিক্রি করে এবং ভবিষ্যতে দাম কমে গেলে তা ফের কিনে নিয়ে লাভ করে। তবে দাম বেড়ে গেলে তাদের বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
উল্লেখ্য, হিন্ডেনবার্গের ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদন আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। তাতে বলা হয়, তারা অফশোর ট্যাক্স হ্যাভেন ব্যবহার করেছে। এই প্রতিবেদনের ফলে ভারতীয় সংস্থাটির বাজারমূল্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর ‘নিকোলার’ প্রতিষ্ঠাতা ট্রেভর মিল্টনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। গত বছর বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা বলার এবং জালিয়াতির অভিযোগে ট্রেভরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। শাস্তি হিসেবে বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা ফেরত দিতে হয় তাকে।
হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কোনও ‘প্রভাব’ কাজ করেছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান নাথান অ্যান্ডারসন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যপূরণ হয়েছে।’ সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তার জীবনের একটা অধ্যায়, গোটা জীবন নয়। ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কোনো ‘প্রভাব’ কাজ করছে না বলেও তিনি জানান।