Dhaka মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন বানচাল করতেই আগুন সন্ত্রাস করছে করছে বিএনপি-জামায়াত : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অবরোধ ও অগ্নি-সন্ত্রাস করে কেউ যাতে পার না পায় সেদিকে সতর্ক থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যেই অগ্নি-সন্ত্রাস করছে বিএনপি-জামায়াত। আগুন সন্ত্রাসীদের যেখানে পাওয়া যাবে প্রতিহত করতে হবে। আগুন সন্ত্রাসীরা যে হাত দিয়ে আগুন দেবে; সে হাতে আগুন ধরিয়ে দিতে হবে।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, অবরোধের নামে আগুন দিয়ে যাতে দেশের কোথাও কেউ ছাড় না পায় সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। যেসব এলাকায় আগুন সন্ত্রাস হবে সে এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের খুঁজে বের করতে হবে। নির্বাচন বানচাল করতে আবারও আগের মতো আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে বিএনপি। সুষ্ঠু নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে হবে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাইকে যার যার এলাকায় এমনভাবে সংগঠিত হতে হবে যেন ওই অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস করে একটাও পার না পায়। আর যদি কোনোটা ধরা পড়ে হাতেনাতে যে আগুন দিচ্ছে ওইটাকে ধরে সঙ্গে সঙ্গে ওই আগুনেই ফেলতে হবে। তার হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। যে হাত আগুন দেবে, ওই হাতই পোড়াতে হবে। তাহলেই তারা সোজা হবে, না হলে সোজা হবে না। যে যেমন, তেমন করতে হয়। ‘যেমন কুকুর, তেমন মুগুর’ দিতে হয়। তখন ওদের শিক্ষা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর সেই সঙ্গে আমি বলব, ওদের (বিএনপি-জামায়াত) চক্রান্ত হচ্ছে নির্বাচনটা বানচাল করা। আর এই নির্বাচন বানচাল করার পেছনে অনেকেরই হাত আছে। কিন্তু আমাদের শক্তি জনগণ। বাংলাদেশের মানুষ। ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করে অনেক অত্যাচার নির্যাতন জেল জুলুম বারবার মৃত্যুর মুখে গেছি। সবকিছু অতিক্রম করেই কিন্তু আজকে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, আজকে ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যেন বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে আমাদের যে নেতাদের আমরা হারিয়েছি তাদের কাছে আমাদের এটাই ওয়াদা, যে আপনাদের জীবন নিয়ে গেছে সত্যি। কিন্তু যে বাংলাদেশ আজকে জাতির পিতা রেখে গেছেন, জাতীয় চারনেতা। আমরা এটুকু বলব, এই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। ওই সমস্ত দুষ্কৃতকারী কয়েকজনের লাফালাফিতে এ দেশে কখনো নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না, এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার অনুরোধ থাকবে, সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে নানাভাবে গোলমাল করার চেষ্টা করবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং মানুষের ভোটের অধিকার যেটা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা আদায় করেছি, সেই অধিকার যাতে নিশ্চিত থাকে, মানুষ যেন তার ভোট শান্তিপূর্ণভাবে দিতে পারে- সেই পরিবেশ রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি ওরা আসলেই সিট পাবে কিনা- নির্বাচন করবে কিনা সন্দেহ। আর নির্বাচনে আসলেও আসবে ওই নমিনেশন বাণিজ্য করার জন্য। সেই ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকে নমিনেশন সেটাতো আমি দেব। কারণ আমি বসে থাকি না। প্রতি ছয় মাস পরপর আমার একটা হিসাব থাকে। কেউ যদি আবার মনে করে যে ও এখন তো ওরা (বিএনপি) নাই আমরা দাঁড়ালে তো আমরা জিতেই যাব। আর একটা কথা একটা সিট না পেলে কী হবে, বাকি সিট তো পাবে, সরকার গঠন করবে। এই চিন্তা যেন কারও মাথায় না থাকে। কারণ, এই চিন্তাই কিন্তু সর্বনাশ ডেকে আনবে। কাজেই আমি যেই সিদ্ধান্ত দেব, সেই সিদ্ধান্ত মানতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আর এখন এই অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রত্যেক এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক এলাকায়, শুধু এই ঢাকা শহর বলে না। যেখানে যেখানে তারা এই ধরনের অগ্নিসন্ত্রাস করবে সেই এলাকায় কত বিএনপি আছে খুজে বের করতে হবে বা জামায়াত খুজে বের করতে হবে। ওইগুলোকে ধরিয়ে দিতে হবে। আর মানুষের জানমালের যেন ক্ষতি করতে না পারবে তাদেরকে সুরক্ষা দিতে হবে। এটা হলো আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। কারণ, আমাদের আর কিছু নাই। আমাদের মুরব্বি নাই। আমাদের আছে জনগণ। সেই জনগণ নিয়েই আমাদের চলতে হবে।

তিনি বলেন, আগুনসন্ত্রাসীদের হাতেনাতে ধরে আগুনে ফেলে দিন। যে হাতে আগুন দিতে আসবে সে হাত পুড়িয়ে দিন। যে যেমন তার সঙ্গে তেমন করতে হয়। যেমন কুকুর তেমন মুগুর।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপির যেই অগ্নিসন্ত্রাস, তাদের যে বীভৎস চেহারা, তারা যে পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করে। একটা নিরীহ পুলিশ চাকরি করে, তার কী অপরাধ ছিল যে তাকে এত অমানবিকভাবে হত্যা করল? এবং এটা শুধু একবারই না, ২০১৩ সালে একই ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচাল করার জন্য একই ঘটনা ঘটিয়েছে, এরপর ২০১৫-তেও একই ঘটনা। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা, আগুনে পোড়ানো, গাড়ি, অফিস-আদালত, রেল-লঞ্চ কী বাদ দিয়েছে তারা, সবই আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে।

বিএনপি কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচন করলে তাদের নেতা কে? কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? কাকে দিয়ে মন্ত্রিসভা করবে? বিএনপি চেয়ারপারসন, সে তো এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আর এখন তো অসুস্থ। ওরা (বিএনপি) জানে নির্বাচন করলে ওরা কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালেও তারা নির্বাচন বানচাল করতে ৫২৫টি স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছিল। যেখানে নির্বাচনী কেন্দ্র ছিল। তার পরও কিন্তু নির্বাচন থামাতে পারেনি। আর এখন তাদের অপকর্মের জন্য মানুষ তো আরো তাদের প্রতি বিমুখ।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি-মর্যাদা পাচ্ছে। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, উৎপাদন বেড়েছে। যখন মানুষের জীবনে একটু স্বস্তির সময় এসেছে তখনি তারা অস্বস্তিতে ভোগে। অর্থ্যাৎ মানুষ ভালো থাকলে ওদের মনে জ্বালা হয়। ওই বিএনপি-জামায়াত; এদের যন্ত্রণা হয়। মানুষ শান্তিতে স্বস্তিতে থাকলে ওদের পছন্দ হয় না। ওদের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। যে কারণে এরা জ্বালাও-পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে। তাদের হাত থেকে নারী-শিশু রেহাই পায় না। পুলিশ রেহাই পায় না। হাসপাতাল রেহাই পায় না। রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে সেখানেও হামলা করে। কতবড় জঘন্য চরিত্রের এরা। তার ওপর যুবদলের এক নেতা বুকের ওপর প্রেস লিখে নিয়ে গিয়ে আগুন দিচ্ছে। এটি মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। কাজেই ওদের ওই ভাওতাবাজি-সন্ত্রাস এগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে এই প্রতিবাদ জানাতে হবে।

মনোনয়ন নিয়ে বিভাজন না করার জন্য সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ কথা ভাবলে চলবে না, ওরা (বিএনপি) তো আসবে না। একটা সিট না পেলে কী হবে! এ চিন্তা যেন কারো মাথায় না থাকে। আমরা মনোনয়নে যে সিদ্ধান্ত দেবো, সেটা মানতে হবে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আবারও ভোটের মাধ্যমে সরকারে আসতে হবে।

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনে হাসপাতালে বোমা মেরেছে। ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতাল, যেখানে মা ভেবেছে তার সন্তান নিয়ে নিরাপদ থাকবে সেখানে ইসরাইলি সেনারা বোমা মেরেছে। আর আমাদের দেশে দেখলাম বিএনপি-জামায়াত পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে আগুন দেয়, অ্যাম্বুলেন্স পোড়ায়, ভাঙচুর করে। এরা কোথা থেকে কী শিক্ষা পাচ্ছে? সেটাই তো আমাদের প্রশ্ন।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুল শেখ হাসিনা বলেন, সরা বিশ্বে কোথায় কেউ নির্যাতিত হলে আমরা পাশে দাঁড়াই। ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমরা পাঠিয়েছি। কিন্তু সেখানে ঢুকতে দিচ্ছে না। মিশরে আমরা সেগুলো রেখেছি। ধীরে ধীরে সেগুলো যাবে। আমরা যেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াই তখন এদের মুখে কিন্তু কোনো কথা নাই! ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচার, শিশু হত্যা, নারী হত্যা, এগুলো নিয়ে তারা কি একটা প্রতিবাদ করেছে? তারা কাদের তাঁবেদারি করে, কাদের পদলেহন করে সেটাই বড় প্রশ্ন।

শেখ হাসিনা বলেন, পর্যাপ্ত উৎপাদন এবং আমদানির পরও পণ্য মজুদ রেখে বাজারে যারা সংকট তৈরি করছে তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়া চক্রের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলির পেছনে কারা আছে? (পণ্য) রেখে দেবে কিন্তু বাজারে আনবে না। না এনে দাম বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। এটাই তারা করে যাচ্ছে।

দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, এই ধরনের মজুতদারি যারা করে, তারা মালপত্র থাকার পরেও বাজারে না এনে জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করে। এদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কোনো কিছুর উৎপাদনই কমেনি। চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজ সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে। আমাদের দেশে যে জিনিসগুলো উৎপাদন হয় না সেগুলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অতিরিক্ত দাম দিয়েই আমরা কিনে আনছি। কিন্তু সেটা মানুষের কাছে পৌঁছবে না কেন? সেটাই আমার প্রশ্ন।

তিনি বলেন, এখন আবার অবরোধ দিয়েছে। এর আগেও তারা অবরোধ দিয়েছিলো। অবরোধ দিয়ে খালেদা জিয়া তার অফিসে বসে থাকতেন, নেতাদের সঙ্গে নিয়ে। তারাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে ছিলে। মানুষে সেই অবরোধ মানেনি।

১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড থেকেই হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্বংস শুরু। জিয়াউর রহমান মুখে বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তিনি যদি মুক্তিযোদ্ধা হবেন, তাহলে তার আমলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ হয় কীভাবে?

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতীয় চার নেতা, যারা জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মিলে বাংলাদেশ সরকার গঠন করে। ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরে শপথ নেয়। মন্ত্রিপরিষদ গঠন হয়। সেখানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এরপরই যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। যারা জাতির পিতার নেতৃত্বে এই যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন বা মন্ত্রিসভায় ছিলেন, বেছে বেছে তাদের হত্যা করা হয়।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল আমাদের জাতীয় চার নেতাকে। আজকে তার স্মরণ সভা। কারাগার সব থেকে নিরাপদ যায়গা, সেখানে গিয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়। এ হত্যার পেছনে চক্রান্তকারী খুনি মোশতাক। মোশতাকের মূল শক্তি ছিল জিয়াউর রহমান। তিনি ছিলেন এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত। মোশতাক-জিয়া চক্রান্ত করে যেমন জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছেন, তারা চার নেতাকেও হত্যা করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডে মোশতাকের সব থেকে নির্ভরযোগ্য লোক ছিলেন জিয়াউর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেল গেটে যে কেউ ঢুকতে পারে না। রাষ্ট্রপতি যখন হুকুম দেন, তখন খোলে। তারা বলেছিলেন, আলোচনা করবে। আলোচনার কথা বলে জেলে ঢুকেছিল। পরে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিবরণ দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কারণ আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। আজকে আমরা চার নেতাকে হারিয়েছি। জাতির পিতাকে হারিয়েছি। আমি তো আমার পরিবারকে হারিয়েছি। কিন্তু একটি কারণেই তো আমাদের রাজনীতি। যে আদর্শ নিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তারা ভেবেছিল ১৫ আগস্ট আর ৩রা নভেম্বর ঘটিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশকে আবার বিচ্যুত করবে। সেটি তারা পারে নাই। আজকে বাংলাদেশ উঠে এসেছে সারাবিশ্বে একটা মর্যাদার আসন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে। সেটিকেই তারা ধ্বংস করতে চায়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলী সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, জাতীয় নেতা শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি এমপি এবং জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নির্বাচন বানচাল করতেই আগুন সন্ত্রাস করছে করছে বিএনপি-জামায়াত : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৭:১৪:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অবরোধ ও অগ্নি-সন্ত্রাস করে কেউ যাতে পার না পায় সেদিকে সতর্ক থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যেই অগ্নি-সন্ত্রাস করছে বিএনপি-জামায়াত। আগুন সন্ত্রাসীদের যেখানে পাওয়া যাবে প্রতিহত করতে হবে। আগুন সন্ত্রাসীরা যে হাত দিয়ে আগুন দেবে; সে হাতে আগুন ধরিয়ে দিতে হবে।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, অবরোধের নামে আগুন দিয়ে যাতে দেশের কোথাও কেউ ছাড় না পায় সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। যেসব এলাকায় আগুন সন্ত্রাস হবে সে এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের খুঁজে বের করতে হবে। নির্বাচন বানচাল করতে আবারও আগের মতো আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে বিএনপি। সুষ্ঠু নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে হবে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাইকে যার যার এলাকায় এমনভাবে সংগঠিত হতে হবে যেন ওই অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস করে একটাও পার না পায়। আর যদি কোনোটা ধরা পড়ে হাতেনাতে যে আগুন দিচ্ছে ওইটাকে ধরে সঙ্গে সঙ্গে ওই আগুনেই ফেলতে হবে। তার হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। যে হাত আগুন দেবে, ওই হাতই পোড়াতে হবে। তাহলেই তারা সোজা হবে, না হলে সোজা হবে না। যে যেমন, তেমন করতে হয়। ‘যেমন কুকুর, তেমন মুগুর’ দিতে হয়। তখন ওদের শিক্ষা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর সেই সঙ্গে আমি বলব, ওদের (বিএনপি-জামায়াত) চক্রান্ত হচ্ছে নির্বাচনটা বানচাল করা। আর এই নির্বাচন বানচাল করার পেছনে অনেকেরই হাত আছে। কিন্তু আমাদের শক্তি জনগণ। বাংলাদেশের মানুষ। ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করে অনেক অত্যাচার নির্যাতন জেল জুলুম বারবার মৃত্যুর মুখে গেছি। সবকিছু অতিক্রম করেই কিন্তু আজকে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, আজকে ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যেন বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে আমাদের যে নেতাদের আমরা হারিয়েছি তাদের কাছে আমাদের এটাই ওয়াদা, যে আপনাদের জীবন নিয়ে গেছে সত্যি। কিন্তু যে বাংলাদেশ আজকে জাতির পিতা রেখে গেছেন, জাতীয় চারনেতা। আমরা এটুকু বলব, এই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। ওই সমস্ত দুষ্কৃতকারী কয়েকজনের লাফালাফিতে এ দেশে কখনো নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না, এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার অনুরোধ থাকবে, সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে নানাভাবে গোলমাল করার চেষ্টা করবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং মানুষের ভোটের অধিকার যেটা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা আদায় করেছি, সেই অধিকার যাতে নিশ্চিত থাকে, মানুষ যেন তার ভোট শান্তিপূর্ণভাবে দিতে পারে- সেই পরিবেশ রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি ওরা আসলেই সিট পাবে কিনা- নির্বাচন করবে কিনা সন্দেহ। আর নির্বাচনে আসলেও আসবে ওই নমিনেশন বাণিজ্য করার জন্য। সেই ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকে নমিনেশন সেটাতো আমি দেব। কারণ আমি বসে থাকি না। প্রতি ছয় মাস পরপর আমার একটা হিসাব থাকে। কেউ যদি আবার মনে করে যে ও এখন তো ওরা (বিএনপি) নাই আমরা দাঁড়ালে তো আমরা জিতেই যাব। আর একটা কথা একটা সিট না পেলে কী হবে, বাকি সিট তো পাবে, সরকার গঠন করবে। এই চিন্তা যেন কারও মাথায় না থাকে। কারণ, এই চিন্তাই কিন্তু সর্বনাশ ডেকে আনবে। কাজেই আমি যেই সিদ্ধান্ত দেব, সেই সিদ্ধান্ত মানতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আর এখন এই অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রত্যেক এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক এলাকায়, শুধু এই ঢাকা শহর বলে না। যেখানে যেখানে তারা এই ধরনের অগ্নিসন্ত্রাস করবে সেই এলাকায় কত বিএনপি আছে খুজে বের করতে হবে বা জামায়াত খুজে বের করতে হবে। ওইগুলোকে ধরিয়ে দিতে হবে। আর মানুষের জানমালের যেন ক্ষতি করতে না পারবে তাদেরকে সুরক্ষা দিতে হবে। এটা হলো আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। কারণ, আমাদের আর কিছু নাই। আমাদের মুরব্বি নাই। আমাদের আছে জনগণ। সেই জনগণ নিয়েই আমাদের চলতে হবে।

তিনি বলেন, আগুনসন্ত্রাসীদের হাতেনাতে ধরে আগুনে ফেলে দিন। যে হাতে আগুন দিতে আসবে সে হাত পুড়িয়ে দিন। যে যেমন তার সঙ্গে তেমন করতে হয়। যেমন কুকুর তেমন মুগুর।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপির যেই অগ্নিসন্ত্রাস, তাদের যে বীভৎস চেহারা, তারা যে পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করে। একটা নিরীহ পুলিশ চাকরি করে, তার কী অপরাধ ছিল যে তাকে এত অমানবিকভাবে হত্যা করল? এবং এটা শুধু একবারই না, ২০১৩ সালে একই ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচাল করার জন্য একই ঘটনা ঘটিয়েছে, এরপর ২০১৫-তেও একই ঘটনা। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা, আগুনে পোড়ানো, গাড়ি, অফিস-আদালত, রেল-লঞ্চ কী বাদ দিয়েছে তারা, সবই আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে।

বিএনপি কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচন করলে তাদের নেতা কে? কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? কাকে দিয়ে মন্ত্রিসভা করবে? বিএনপি চেয়ারপারসন, সে তো এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আর এখন তো অসুস্থ। ওরা (বিএনপি) জানে নির্বাচন করলে ওরা কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালেও তারা নির্বাচন বানচাল করতে ৫২৫টি স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছিল। যেখানে নির্বাচনী কেন্দ্র ছিল। তার পরও কিন্তু নির্বাচন থামাতে পারেনি। আর এখন তাদের অপকর্মের জন্য মানুষ তো আরো তাদের প্রতি বিমুখ।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি-মর্যাদা পাচ্ছে। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, উৎপাদন বেড়েছে। যখন মানুষের জীবনে একটু স্বস্তির সময় এসেছে তখনি তারা অস্বস্তিতে ভোগে। অর্থ্যাৎ মানুষ ভালো থাকলে ওদের মনে জ্বালা হয়। ওই বিএনপি-জামায়াত; এদের যন্ত্রণা হয়। মানুষ শান্তিতে স্বস্তিতে থাকলে ওদের পছন্দ হয় না। ওদের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। যে কারণে এরা জ্বালাও-পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে। তাদের হাত থেকে নারী-শিশু রেহাই পায় না। পুলিশ রেহাই পায় না। হাসপাতাল রেহাই পায় না। রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে সেখানেও হামলা করে। কতবড় জঘন্য চরিত্রের এরা। তার ওপর যুবদলের এক নেতা বুকের ওপর প্রেস লিখে নিয়ে গিয়ে আগুন দিচ্ছে। এটি মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। কাজেই ওদের ওই ভাওতাবাজি-সন্ত্রাস এগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে এই প্রতিবাদ জানাতে হবে।

মনোনয়ন নিয়ে বিভাজন না করার জন্য সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ কথা ভাবলে চলবে না, ওরা (বিএনপি) তো আসবে না। একটা সিট না পেলে কী হবে! এ চিন্তা যেন কারো মাথায় না থাকে। আমরা মনোনয়নে যে সিদ্ধান্ত দেবো, সেটা মানতে হবে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আবারও ভোটের মাধ্যমে সরকারে আসতে হবে।

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনে হাসপাতালে বোমা মেরেছে। ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতাল, যেখানে মা ভেবেছে তার সন্তান নিয়ে নিরাপদ থাকবে সেখানে ইসরাইলি সেনারা বোমা মেরেছে। আর আমাদের দেশে দেখলাম বিএনপি-জামায়াত পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে আগুন দেয়, অ্যাম্বুলেন্স পোড়ায়, ভাঙচুর করে। এরা কোথা থেকে কী শিক্ষা পাচ্ছে? সেটাই তো আমাদের প্রশ্ন।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুল শেখ হাসিনা বলেন, সরা বিশ্বে কোথায় কেউ নির্যাতিত হলে আমরা পাশে দাঁড়াই। ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমরা পাঠিয়েছি। কিন্তু সেখানে ঢুকতে দিচ্ছে না। মিশরে আমরা সেগুলো রেখেছি। ধীরে ধীরে সেগুলো যাবে। আমরা যেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াই তখন এদের মুখে কিন্তু কোনো কথা নাই! ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচার, শিশু হত্যা, নারী হত্যা, এগুলো নিয়ে তারা কি একটা প্রতিবাদ করেছে? তারা কাদের তাঁবেদারি করে, কাদের পদলেহন করে সেটাই বড় প্রশ্ন।

শেখ হাসিনা বলেন, পর্যাপ্ত উৎপাদন এবং আমদানির পরও পণ্য মজুদ রেখে বাজারে যারা সংকট তৈরি করছে তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়া চক্রের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলির পেছনে কারা আছে? (পণ্য) রেখে দেবে কিন্তু বাজারে আনবে না। না এনে দাম বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। এটাই তারা করে যাচ্ছে।

দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, এই ধরনের মজুতদারি যারা করে, তারা মালপত্র থাকার পরেও বাজারে না এনে জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করে। এদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কোনো কিছুর উৎপাদনই কমেনি। চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজ সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে। আমাদের দেশে যে জিনিসগুলো উৎপাদন হয় না সেগুলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অতিরিক্ত দাম দিয়েই আমরা কিনে আনছি। কিন্তু সেটা মানুষের কাছে পৌঁছবে না কেন? সেটাই আমার প্রশ্ন।

তিনি বলেন, এখন আবার অবরোধ দিয়েছে। এর আগেও তারা অবরোধ দিয়েছিলো। অবরোধ দিয়ে খালেদা জিয়া তার অফিসে বসে থাকতেন, নেতাদের সঙ্গে নিয়ে। তারাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে ছিলে। মানুষে সেই অবরোধ মানেনি।

১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড থেকেই হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধ্বংস শুরু। জিয়াউর রহমান মুখে বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তিনি যদি মুক্তিযোদ্ধা হবেন, তাহলে তার আমলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ হয় কীভাবে?

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতীয় চার নেতা, যারা জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মিলে বাংলাদেশ সরকার গঠন করে। ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরে শপথ নেয়। মন্ত্রিপরিষদ গঠন হয়। সেখানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এরপরই যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। যারা জাতির পিতার নেতৃত্বে এই যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন বা মন্ত্রিসভায় ছিলেন, বেছে বেছে তাদের হত্যা করা হয়।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল আমাদের জাতীয় চার নেতাকে। আজকে তার স্মরণ সভা। কারাগার সব থেকে নিরাপদ যায়গা, সেখানে গিয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়। এ হত্যার পেছনে চক্রান্তকারী খুনি মোশতাক। মোশতাকের মূল শক্তি ছিল জিয়াউর রহমান। তিনি ছিলেন এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত। মোশতাক-জিয়া চক্রান্ত করে যেমন জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছেন, তারা চার নেতাকেও হত্যা করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডে মোশতাকের সব থেকে নির্ভরযোগ্য লোক ছিলেন জিয়াউর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেল গেটে যে কেউ ঢুকতে পারে না। রাষ্ট্রপতি যখন হুকুম দেন, তখন খোলে। তারা বলেছিলেন, আলোচনা করবে। আলোচনার কথা বলে জেলে ঢুকেছিল। পরে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিবরণ দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কারণ আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। আজকে আমরা চার নেতাকে হারিয়েছি। জাতির পিতাকে হারিয়েছি। আমি তো আমার পরিবারকে হারিয়েছি। কিন্তু একটি কারণেই তো আমাদের রাজনীতি। যে আদর্শ নিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তারা ভেবেছিল ১৫ আগস্ট আর ৩রা নভেম্বর ঘটিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশকে আবার বিচ্যুত করবে। সেটি তারা পারে নাই। আজকে বাংলাদেশ উঠে এসেছে সারাবিশ্বে একটা মর্যাদার আসন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে। সেটিকেই তারা ধ্বংস করতে চায়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলী সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, জাতীয় নেতা শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি এমপি এবং জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন।