নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে যাওয়া এবং আমরা নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো কিছুতে বিশ্বাস করি না। গোটা জাতি মনে করে, অতি দ্রুত একটি নির্বাচন একমাত্র এখন পথ, যা দিয়ে আমরা বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ করে গণতন্ত্রের দিকে যাবো।
বুধবার (৬ আগস্ট) গুলশান বিএনপির চেয়ারপারসন অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ও নির্বাচনী ঘোষণার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি বলেন, আমাদের (নির্বাচনী) প্রক্রিয়া চলছেই। আমাদের রাজনৈতিক মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, একটা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে যাওয়া। সুতরাং, নির্বাচনের যে কার্যক্রম-প্রক্রিয়া, এটা সবসময় আমাদের মধ্যে আছে।
একটা দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, দেশের যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাতে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্ভব না। সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তাদের নিজস্ব মত। আমরা এবং গোটা জাতি মনে করি, অতিদ্রুত একটা নির্বাচন একমাত্র পথ যা দিয়ে আমরা বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ করে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটাতে পারি।
এসময় নির্বাচন নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ৯১-তে তিন মাসে নির্বাচন হয়েছে। তখনও একটা ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের পরে সেই নির্বাচন হয়েছিল। পরবর্তীতে সমস্ত নির্বাচন তিন মাসের মধ্যে সম্ভব হয়েছে। এখন আরও বেশি করে সম্ভব, কেননা জনগণ এই নির্বাচন চায়। জনগণই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বড় প্রহরী হয়ে দাঁড়াবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, যারা হতাশ হয়েছে, তারা সারাজীবন হতাশ থাকে। আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া হয়তো তারা এখনও দেয়নি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছে, আমরা আশা করবো তারা একটা পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই জাতীয় এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে পরিষ্কার করবে।
তিনি বলেন, নিশ্চয়ই এখন পর্যন্ত যতগুলো কাজ করে এসেছেন প্রফেসর ড মুহাম্মদ ইউনূস। তাতে প্রমাণ করেছেন, ভবিষ্যতেও তিনি নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করার জন্য এমন কিছু করবেন না, যেটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর দেশের মানুষ এক ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, প্রাণ দিয়েছে, শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে, গুম হয়েছে, গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পরিকল্পিতভাবে এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে তিনটি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জন্য সব নির্যাতনমূলক পন্থা বেছে নিয়েছে। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করেছিল। রাষ্ট্রযন্ত্রকে সেই লক্ষ্যে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছে। অর্থনীতিকে লুট-পাট, বিদেশে টাকা পাচার, ব্যাংক লুট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। শেয়ার বাজার লুট করেছিল, মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি শুরু থেকেই এর বিরোধীতা করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, গুম, খুনের মধ্য দিয়ে সেই সংগ্রাম ও আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় সাজা, নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। খালেদা জিয়াকে সাজানো মিথ্যা মামলায় ১০ বছর সাজা দিয়ে, ৬ বছর কারাগারে আটক করে রেখেছিল। ৫ আগস্ট মুক্তি পেয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতাকে আজীবন কারাদণ্ড প্রদান করে বিরোধী নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেছে। মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, কারাগারেই অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে। বিএনপিকে নেতৃত্ব শূন্য করে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। নির্যাতিত, শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রতিটি নেতাকর্মী লড়াই করেছে।
মানুষের সেই সংঘবদ্ধ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূত আন্দোলনের মধ্যে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ফ্যসিস্ট হাসিনা। এই অভ্যুত্থানের ফলে মানুষের মনে নতুন আশা আবারো সৃষ্টি হয় এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুসের নেতৃত্বে সরকার সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজনৈতিক কাঠামো ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তুলার লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রফেসর ইউনূস ৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করেন।
বিএনপি এই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানায়। বিএনপি বিশ্বাস করে এই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যে অঙ্গীকার করেছে তা পালনের মধ্যদিয়ে এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের কাজ শুরু হবে। সুযোগ সৃষ্টি হবে একটি সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সত্যিকারের প্রগতিশীল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের। বিএনপি যে সব রাজনৈতিক দল, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণ এই সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে তাদের জানাচ্ছে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।