নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নিরাপদ প্রস্থান চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। দেশে শুধু প্রাকৃতিক ঝড়ই আসছে না, রাজনৈতিক ঝড়ও আসছে।
শনিবার (১৩ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ৪ পর্বের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শুক্রবার (১৯ মে) ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ২৮ জেলায় ও মহানগরে জন সমাবেশ। শনিবার (২০ মে) ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ২১ জেলা ও মহানগর জন সমাবেশ। রোববার (২৬ মে) ঢাকা উত্তর মহানগরসহ ১৯ জেলা ও মহানগর জন সমাবেশ এবং সোমবার (২৭ মে) ঢাকা দক্ষিণ মহানগরসহ ১৫ জেলায় ও মহানগরে শান্তিপূর্ণভাবে এ জনসমাবেশ পালন করা হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে পিটিয়ে মানুষও হত্যা করেছিল এই আওয়ামী লীগ।
মির্জা ফখরুল বলেন, যেটা প্রতিষ্ঠিত সত্য দেশে-বিদেশে, সবখানে যে, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। সাফকথা আপনারা কি হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন দেখতে চান? তাহলে নির্বাচনকে রুখে দিতে হবে।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে শুধু সমুদ্রে ঝড় নয়, রাজনীতিতেও ঝড় উঠেছে। আপনারা মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে শিখুন। যদি সেভ এক্সিট চান, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই আপনাদের (আওয়ামী লীগ) বাঁচার পথ। আমরা অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।
৪৭ বছর পর জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মূল কারণ হলো, জনগণের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা। একই কায়দায় তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে করেছিল। এভাবে নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তবে কোনো ধানাই-পানাই করে বা কেরিকাটা করে লাভ হবে না। ইনশাআল্লাহ জনগণের বিজয় হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই দেশে উচ্চ আদালত জামিন দেয়, কিন্তু নিম্ন আদালত তা বাতিল করে দেয়। যেখানে কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সেখানে ককটেল ফাটানোর মামলা দেওয়া হয়। এসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা। সেজন্যই আবারও গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের সমাবেশ। আজকে রিকশাওয়ালা সারা দিন পরিশ্রম করে বাসায় গিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। দিন আনে দিন খায় এমন লোকেরা আজকে অসহায়। এই সরকার শুধু দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের পকেট ভরছে। সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা কেটে বিদেশে পাচার করছে। প্রত্যেকটি খাতে সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। হজের বিমান ভাড়াও তারা বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারপ্রধান তিনটি দেশ সফর করেছেন। কিন্তু কোনো অর্জন নেই। সবার সঙ্গে মিটিংয়ে নির্বাচনের প্রসঙ্গটি এসেছে। কারণ বিদেশিরা দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন দেখতে চায়। দেশে-বিদেশে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তারা নির্বাচন করতে গেলে রুখে দেওয়া হবে। আমরা সত্যিকার অর্থেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় দেখতে চাই। এই দাবিতেই আমরা দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন করছি। আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। ৩৯ লাখ মানুষকে আসামি করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি সবকিছু ধ্বংস করা হয়েছে। ৭১ সালের মতো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দুর্নীতির মাধ্যমে শুধু নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করছে। মানুষের জন্য কোনোকিছু করেনি এ সরকার। আমাদের পকেটের টাকা কেটে নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন। উনারা কি দেশের জনগণের জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন? না। উনারা নিজেদের জন্য, আর ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশিডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং দশ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে জনসমাবেশ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক ও আধুনিক বাংলাদেশে গড়ার রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে মামলা দিয়েছে। কেন মামলা দিয়েছে? জনগণের চাওয়াকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। কোনো লাভ হবে না। আগামী দিনে আমাদের বিজয় অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মো. আমিনুল হক এবং দক্ষিণের সদস্যসচিব মো. রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি মো. আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, শিরিন সুলতানা, আব্দুল খালেক, সেলিমুজ্জামান সেলিম, অঙ্গসংগঠনের সাদেক আহমেদ খান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এসএম জিলানী, হাসান জাফির তুহিন, সুলতানা আহম্মেদ, আনোয়ার হোসাইন, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, আবুল কালাম আজাদ, মো. আব্দুর রহিম, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।