আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
দুই সপ্তাহের অপেক্ষা শেষ। রোববার (২৮ মে) তুরস্কে হবে রান-অফ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আর এ নির্বাচনের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে আরও পাঁচ বছর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান থাকতে পারবেন কিনা। নাকি কেমাল কিলিচদারোগলো নতুন শুরু করবেন।
তবে নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মধ্যে তেমন কোন আগ্রহ নেই। নেই শঙ্কাও। তাদের কাছে ফলাফল অনেকটাই স্পষ্ট। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ফের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর এ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনমত নিয়ে আরও পাঁচ বছর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেট পেতে যাচ্ছেন ৬৯ বছর বয়সী এরদোয়ান।
জয়ের পথে এরদোগানকে আরও এগিয়ে দেয় প্রথম ধাপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষে তৃতীয় স্থান পাওয়া প্রার্থী সিনান ওগানের সমর্থন।
সোমবার (২২ মে) ২০ বছর ক্ষমতায় থাকা রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানকে সমর্থনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন সিনান। ফলে রোববার (২৮ মে) দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের পাল্লা অনেক ভারী এবং বিরোধী প্রার্থী কামাল কিলিচদারোলুর জয়ের সম্ভাবনা এখন প্রায় তলানিতে।
তুরস্কে গত ১৪ মে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন হয়। এতে মোট ভোটের ৪৯ দশমিক ৫১ শতাংশ ভোট পান এরদোয়ান। অপরদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলো পান ৪৪ দশমিক ৫১ শতাংশ ভোট। যেহেতু তাদের কেউই এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পাননি ফলে এ নির্বাচন রান-অফে গড়ায়।
তবে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা শনিবার (২৭ মে) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রান-অফ নির্বাচন নিয়ে দেশটিতে তেমন উত্তাপ লক্ষ্য করে যাচ্ছে না। যেমনটি দেখা গিয়েছিল দুই সপ্তাহ। যদিও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট শাসন প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো (রান-অফ) ভোট দিতে যাচ্ছেন দেশটির ভোটাররা।
ইস্তাম্বুলের তোফানের ৪৯ বছর বয়সী বাসিন্দা সোনার ওগোরলু বলেছেন, এটি অন্যরকম অনুভূতি। আমার মনে হচ্ছে নির্বাচন শেষ। কিন্তু রোববার আরেকটি নির্বাচন আছে। আমি অবশ্যই ভোট দেব। কিন্তু বিষয়টি উদ্ভুত লাগছে, কারণ দুই সপ্তাহ আগে পরিবেশ যে রকম ছিল। সে তুলনায় সবকিছু বেশ শান্ত।
দেশটির বেশিরভাগ ভোটার মনে করছেন ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ানই আবারও প্রেসিডেন্ট হবেন।
অথচ ১৪ মে প্রথম ধাপের নির্বাচনের আগে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন এরদায়ান হয়ত এবার হেরে যাবেন। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে কেমালের চেয়ে বেশি ভোট পান তিনি।
নির্বাচনের প্রথম ধাপে এরদোয়ানকে ‘ক্ষমতাচ্যুত’ করতে না পারার বিষয়টি বিরোধীদলীয় সমর্থকদের জন্য বেশ বড় একটি ধাক্কা হিসেবে এসেছে। তাদের অনেকেই এখন বেশ হতাশ। তাদেরই একজন সিহাঙ্গিরের কাপরের দোকানের ব্যবসায়ী ওলকে। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, ১৪ মের আগে আমি অনেক আশাবাদী ছিলাম। কারণ ভেবেছিলাম অবশেষে এরদোয়ানের কাছ থেকে মুক্তি পাব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে অপ্রতিরোধ্য। এসব (অর্থনৈতিক) সমস্যায় সবাই বেশ ক্লান্ত। আবার উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেওয়ার বিষয়টি খুবই কঠিন হবে। কারণ মনে হচ্ছে বিষয়টি শেষ। কিন্তু আমি অবশ্যই ভোট দেব। এটি আমার দায়িত্ব।
তবে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন দলের জোট পিপলস অ্যালায়েন্স। এতে এরদোয়ান সুবিধা পাবেন। কারণ তিনি তুরস্কের সবচেয়ে ফলপ্রসূ নির্বাচনের মাধ্যমে তার দুই দশকের শাসনের মেয়াদ আরও পাঁচ বছরে মেয়াদের জন্য বাড়াতে চাইছেন।
ইতোমধ্যে রানঅফ নিয়ে একাধিক জরিপের ফলাফলও প্রকাশ পেয়েছে সংবাদমাধ্যমে। যেখানে ক্ষমতাসীন নেতার বিজয়ের সম্ভাবনাই বেশি দেখা যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি সূত্রে জানা যায়, তুরস্কের দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচন নিয়ে একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে ইউরেশিয়া গ্রুপ কনসালটেন্সি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা দেখিয়েছে, রোববারের রানঅফ নির্বাচনে এরদোগানের জয়ের সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ।
এ বিষয়ে ভেরিস্ক ম্যাপলক্রফ্ট নামক পরামর্শক সংস্থার হামিশ কিনয়ার মনে করছেন, দ্বিতীয় রাউন্ডে কিলিচদারোগলোর জন্য জয়লাভ করা একটি কঠিন লড়াই হবে। সূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি।