নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (৩০ মে) বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) রেজওয়ানুর রহমান। মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার।

এর আগে ড. ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের চার সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রামীণ টেলিকমের বেশিরভাগ লেনদেনই সন্দেহজনক। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতর গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনে গিয়ে অধিদফতর গ্রামীণ টেলিকমে শ্রম আইন লঙ্ঘনের তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে ১০১ শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিককে দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।

ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান শুনানিতে বলেন, আয়কর পরিশোধ করেই টাকা দান করেছেন তিনি। আর দান করার কারণে আইন অনুযায়ী তিনি পাবেন কর অব্যাহতির সুবিধা।

আইনজীবী আরও জানান, ইউনূসের উপার্জনের মূল উৎস বক্তৃতা দেয়া। এতে প্রতি বক্তব্যের জন্য তিনি নেন ৫০ হাজার ডলার। ডলারের বর্তমান দাম অনুযায়ী বাংলাদেশি টাকায় ৫৪ লাখ টাকা। যদিও পরে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি ড. ইউনূস।

এই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে দুদক। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই ২০২২ সালের ২৮ জুলাই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানান দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

অভিযোগগুলো হলো অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন, শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ। এছাড়া কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ।

অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দুদক। কমিটিতে দুদকের তৎকালীন পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন— দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও নূরে আলম সিদ্দিকী।

অভিযোগ অনুসন্ধানে গত বছরের আগস্টের বিভিন্ন সময়ে এমডিসহ ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। অনুসন্ধান পর্যায়ে বারবার নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ আসে।

গত বছরের ২৩ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগতভাবে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

এ সময় গ্রামীণ টেলিকমের এমডি বলেন, বোর্ডের মাধ্যমে সব সিদ্ধান্ত হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে কোনো কিছুর সঙ্গে ড. ইউনূস জড়িত নন। এছাড়া নিয়ম মেনেই শ্রমিকদের অর্থ ছাড় করা হয়েছে।