নিজস্ব প্রতিবেদক :
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষ। রাজশাহীগামী আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা।
এরপর সকাল ৬টা ২০ মিনিটে পারাবত এক্সপ্রেস, ৬টা ৪০ মিনিটে নীলসাগর এক্সপ্রেস, সকাল ৭টায় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, ৭টা ১৫ মিনিটে এগারো সিন্ধুর প্রভাতী এক্সপ্রেস, ৭টা ৩০ মিনিটে তিস্তা এক্সপ্রেস, ৭টা ৪৫ মিনিটে মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস, ৮টা ১৫ মিনিটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও সকাল ৯টায় রংপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় রংপুর এক্সপ্রেস। এদিকে যথাসময়ে ট্রেন ছাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
ঈদযাত্রার প্রথম দিনে আন্তঃনগর ও লোকাল মিলে ৫৩ জোড়া ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করবে। কমলাপুর স্টেশনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে ঢাকা সেনানিবাস স্টেশন থেকে চলবে তিনজোড়া বিশেষ ট্রেন। গতবারের মতো এবারো টিকিট শতভাগ অনলাইনে বিক্রি করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (২৪ জুন) সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে এই ধূমকেতু এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই স্টেশনে তুলনামূলক ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই অন্যান্য দিনের তুলনায় মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। টিকিট ছাড়া কেউ যাতে ঢুকতে না পারে, সে জন্য স্টেশনে ঢোকার প্রবেশ পথেই বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক যাত্রীকে আলাদাভাবে চেক করা হচ্ছে। যাদের টিকিট আছে, তাদের দেওয়া হচ্ছে স্টেশনের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি।
টিকিট পরীক্ষক বলেন, ঈদযাত্রায় টিকিট ছাড়া কাউকে স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছি রেলের নির্দেশনা পালনের। যার টিকিট তাকেই ভ্রমণ করতে হবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ২৯ হাজার আসনের টিকিট বিক্রি হয়েছে। এবার আসনবিহীন বা স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে মোট আসনের ২৫ শতাংশ। ঢাকা (কমলাপুর), ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর স্টেশন থেকে এসব টিকিট পাওয়া যাবে। যেদিন যাত্রা শুধু সেদিনই আসনবিহীন টিকিট কাউন্টারে মিলবে।
শনিবার (২৪ জুন) রাজধানীর ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারও প্ল্যাটফর্ম এলাকায় যেন কোনো টিকিটবিহীন ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার ফলে ঢাকা স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এলাকায় অবাঞ্ছিত কোনো মানুষকে দেখা যায়নি। এতে করে এ এলাকায় সার্বিক পরিবেশ ভালো রয়েছে।
ঈদযাত্রায় ট্রেনের যাত্রীদের যেন কোনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয় এজন্য প্ল্যাটফর্ম এলাকায় প্রবেশের মুখে র্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোলরুমে আরএনবির সদস্যরা থাকলেও র্যাব এবং পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি।
প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের মুখে ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারদের (টিটিই) দেখা গেছে যাত্রীদের টিকিট এবং এনআইডি মিলিয়ে দেখতে। যাত্রীরা পরিচ্ছন্ন একটি পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্ল্যাটফর্ম হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ট্রেনে উঠছেন। এছাড়া যেসব যাত্রীদের টিকিট নেই, তাদের ১-৬ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আফসার উদ্দিনের তথ্য মতে, সকাল থেকে প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময় ছেড়ে গেছে। তবে দুই/একটি ট্রেনের ১০ থেকে ১৫ মিনিট সাধারণ বিলম্ব হয়েছে।
রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী অবন্তী বলেন, অনলাইনে টিকিট পেতে তেমন ভোগান্তি হয়নি। সহজেই টিকিট পেয়েছি। কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহের চেয়ে এটিই সহজ ছিল। স্টেশনের বাইরে জটলা থাকলেও প্ল্যাটফর্ম এলাকায় কোনো জটলা নেই। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন প্ল্যাটফর্ম পেয়েছি। আমি মোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে নামব।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সারওয়ার বলেন, এবারের ঈদযাত্রার শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করেছে রেলওয়ে। পাশাপাশি মোট আসনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হচ্ছে। অনলাইনে টিকিট বিক্রির ফলে কমেছে ভোগান্তি। তবে ঈদযাত্রায় লাভ-লোকসানের হিসাব নয়, যাত্রীদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য ভ্রমণই রেলওয়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
মাসুদ সারওয়ার বলেন, আজ থেকে ট্রেনের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। সকাল থেকে সবগুলো ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। অনলাইনে আগেই সব টিকিট বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি মোট আসনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হচ্ছে। যাত্রীদের ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে স্টেশনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। টিকিট ছাড়া কাউকে স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার বলেন, আন্তঃনগর ট্রেনে ২৭ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে রেলওয়ে। আন্তঃনগর কমিউটার ট্রেন মিলিয়ে আজ দিনভর ৫০ হাজার যাত্রী তাদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে আজ আন্তঃনগর ৫২ জোড়া ট্রেন ছেড়ে যাবে। আগামীকাল থেকে আরও দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে।
ঢাকা-লালমনি স্পেশাল ও ঢাকা-পঞ্চগড় স্পেশাল ট্রেন দুইটি ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছেড়ে যাবে বলেও জানান মাসুদ সারওয়ার।
১৪ জুন থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জুন দেওয়া হয় ২৪ জুনের টিকিট। একইভাবে ১৫ জুন দেওয়া হয় ২৫ জুনের, ১৬ জুন ২৬ জুনের, ১৭ জুন ২৭ জুনের এবং ২৮ জুনের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হয় ১৮ জুন।
২২ জুন থেকে ঈদযাত্রার ট্রেনের ফিরতি অগ্রিম টিকিট দেওয়া শুরু হয়। সেই হিসাবে ২২ জুন দেওয়া হয় ২ জুলাইয়ের টিকিট। যথাক্রমে ২৩ জুন ৩ জুলাইয়ের, ২৪ জুন ৪ জুলাইয়ের, ২৫ জুন ৫ জুলাইয়ের ও ২৬ জুন ৬ জুলাইয়ের টিকিট দেওয়া হবে ফিরতি ট্রেনের টিকিট।
বিগত বছরের মতো এবারও ঈদযাত্রায় আসনবিহীন বা স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হবে মোট আসনের ২৫ শতাংশ। ঢাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর স্টেশন থেকে এসব টিকিট পাওয়া যাবে। শুধু যাত্রা শুরুর দিন আসনবিহীন টিকিট স্টেশনের কাউন্টার থেকে কেনা যাবে।
ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট শতভাগ অনলাইনে দেওয়া হলেও টিকিট বিক্রিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। অনলাইনে দুই ভাগে দেওয়া হয় অগ্রিম টিকিট। পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করা সব আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অনলাইনে পাওয়া যায় সকাল ৮টা থেকে। আর দুপুর ১২টা থেকে অনলাইনে বিক্রি হয় পূর্বাঞ্চলে চলাচল করা ট্রেনের টিকিট।