Dhaka শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জেলেনস্কির সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গত ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর এই প্রথম ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে টেলিফোন করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) এক টুইটবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন জেলেনস্কি।

টুইটবার্তায় জেলেনস্কি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং টেলিফোন করেছেন। তার এই ফোনকল দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চীনের রাষ্ট্রপতির দপ্তরও এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে, চীন সবসময় শান্তির পক্ষে।

তবে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ফোনে কী কী প্রসঙ্গে কথা হয়েছে, সে সম্পর্কে ইউক্রেন বা চীন— কোনো পক্ষ থেকেই বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

জেলেনস্কি বলেন, এটি ছিল একটি দীর্ঘ ও অর্থপূর্ণ আলাপ। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট শি জোর দিয়ে বলেছেন, বেইজিং সবসময়ই শান্তির পক্ষে। ‘সংলাপ ও আলোচনাই’ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ।

ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরুর পর এই দুই নেতার মধ্যে সরাসরি কথার খবর এবারই প্রথম জানা গেলো।

চীনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, কিয়েভ সবগুলো যুক্তিসংগত উদ্যোগকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে এবং অবাস্তব দাবি তুলে আল্টিমেটাম দিয়ে যাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি টুইটারে এক বার্তায় বলেছেন, এই ফোনালাপ এবং বেইজিংএ ইউক্রেনের একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের গতি জোরালো করবে।

জেলেনস্কির সঙ্গে শি জিনপিং এর ফোনালাপের পর চীনের বিবৃতিতে বলা হয়, চীন ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের অংশ হিসেবে কিয়েভ ও অন্যান্য রাজধানীতে একজন বিশেষ প্রতিনিধি পাঠাবে। যার লক্ষ্য হবে একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রুশ অভিযানের ব্যাপারে চীন বরাবরই দেখানোর চেষ্টা করেছে যে তারা এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু চীন কখনো মস্কোর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে লুকানোর চেষ্টা করেনি বা রুশ অভিযানের নিন্দাও করেনি।

এক খবরে সিসিটিভি জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে শি জিনপিংয়ের ফোনালাপ হয়েছে। এ সময় শি জিনপিং জেলেনস্কিকে বলেছিলেন যে, যুদ্ধ বন্ধের একমাত্র পথ হলো আলোচনা। রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে চীন নিজেদের নিরপেক্ষ দাবি করে আসছে। কিন্তু কখনোই চীন রাশিয়ার হামলার নিন্দা করেনি।

জেলেনস্কি বারবার বলেছেন যে, তিনি তার চীনা প্রতিপক্ষ শির সাথে আলোচনার জন্য সবসময় প্রস্তুত। ফেব্রুয়ারিতে বেইজিং ইউক্রেনের সঙ্কটের ‘রাজনৈতিক নিষ্পত্তি’ করার জন্য ১২ দফা প্রস্তাব পেশ করেছিল।

এতে (রাশিয়ার ওপর) নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বা রাশিয়ার দখল করা এলাকাগুলোর ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা ছিল না।

সেই সফরের কয়েকদিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চীনা নেতাকে আলোচনার জন্য কিয়েভ সফরে আসার আমন্ত্রণ জানান।

ইউক্রেনের সংঘাতের অবসানের লক্ষ্যে চীন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে কতগুলো নীতিমালা ঘোষণা করে। এই নীতিমালায় দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা, দু’দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখানো এবং হানাহানি বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।

তবে দেশটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, চীন একদিকে মস্কোকে সমর্থন করছে এবং অন্যদিকে নিজেকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে এক প্রস্তাবের ওপর জাতিসংঘে ভোটে চীন ভোটদানে বিরত ছিল।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, যুদ্ধের আগে চীন-ইউক্রেন সম্পর্ক জোরদার হচ্ছিল। ২০১৯ সালে চীন ছিল ইউক্রেনের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। ইউক্রেনীয় বার্লি ও লৌহ আকরিকের শীর্ষ আমদানিকারক ছিল চীন। ইউক্রেন ছিল চীনের বৃহত্তম ভুট্টা সরবরাহকারী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী। চীনের প্রথম বিমানবাহী রণতরি, লিয়াওনিং ছিল ইউক্রেন থেকে কেনা একটি বাতিল সোভিয়েত জাহাজ যা চীনা নৌবাহিনী সংস্কার করেছে।

শি ও জেলেনস্কির মধ্যে সর্বশেষ ফোনালাপ হয়েছিল দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য ২০২২ সালের জানুয়ারিতে।

বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন ও অপর দেশগুলোতে বিশেষ চীনা দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন লি হুই। তিনি চীনা সরকারের ইউরেশিয়ান বিষয়ক বিশেষ দূত।

এর আগে লি রাশিয়ায় চীনা রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান সিইসির

জেলেনস্কির সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ

প্রকাশের সময় : ০২:০৩:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গত ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর এই প্রথম ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে টেলিফোন করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) এক টুইটবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন জেলেনস্কি।

টুইটবার্তায় জেলেনস্কি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং টেলিফোন করেছেন। তার এই ফোনকল দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চীনের রাষ্ট্রপতির দপ্তরও এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে, চীন সবসময় শান্তির পক্ষে।

তবে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ফোনে কী কী প্রসঙ্গে কথা হয়েছে, সে সম্পর্কে ইউক্রেন বা চীন— কোনো পক্ষ থেকেই বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

জেলেনস্কি বলেন, এটি ছিল একটি দীর্ঘ ও অর্থপূর্ণ আলাপ। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট শি জোর দিয়ে বলেছেন, বেইজিং সবসময়ই শান্তির পক্ষে। ‘সংলাপ ও আলোচনাই’ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ।

ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরুর পর এই দুই নেতার মধ্যে সরাসরি কথার খবর এবারই প্রথম জানা গেলো।

চীনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, কিয়েভ সবগুলো যুক্তিসংগত উদ্যোগকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে এবং অবাস্তব দাবি তুলে আল্টিমেটাম দিয়ে যাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি টুইটারে এক বার্তায় বলেছেন, এই ফোনালাপ এবং বেইজিংএ ইউক্রেনের একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের গতি জোরালো করবে।

জেলেনস্কির সঙ্গে শি জিনপিং এর ফোনালাপের পর চীনের বিবৃতিতে বলা হয়, চীন ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের অংশ হিসেবে কিয়েভ ও অন্যান্য রাজধানীতে একজন বিশেষ প্রতিনিধি পাঠাবে। যার লক্ষ্য হবে একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রুশ অভিযানের ব্যাপারে চীন বরাবরই দেখানোর চেষ্টা করেছে যে তারা এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু চীন কখনো মস্কোর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে লুকানোর চেষ্টা করেনি বা রুশ অভিযানের নিন্দাও করেনি।

এক খবরে সিসিটিভি জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে শি জিনপিংয়ের ফোনালাপ হয়েছে। এ সময় শি জিনপিং জেলেনস্কিকে বলেছিলেন যে, যুদ্ধ বন্ধের একমাত্র পথ হলো আলোচনা। রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে চীন নিজেদের নিরপেক্ষ দাবি করে আসছে। কিন্তু কখনোই চীন রাশিয়ার হামলার নিন্দা করেনি।

জেলেনস্কি বারবার বলেছেন যে, তিনি তার চীনা প্রতিপক্ষ শির সাথে আলোচনার জন্য সবসময় প্রস্তুত। ফেব্রুয়ারিতে বেইজিং ইউক্রেনের সঙ্কটের ‘রাজনৈতিক নিষ্পত্তি’ করার জন্য ১২ দফা প্রস্তাব পেশ করেছিল।

এতে (রাশিয়ার ওপর) নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বা রাশিয়ার দখল করা এলাকাগুলোর ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা ছিল না।

সেই সফরের কয়েকদিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চীনা নেতাকে আলোচনার জন্য কিয়েভ সফরে আসার আমন্ত্রণ জানান।

ইউক্রেনের সংঘাতের অবসানের লক্ষ্যে চীন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে কতগুলো নীতিমালা ঘোষণা করে। এই নীতিমালায় দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা, দু’দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখানো এবং হানাহানি বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।

তবে দেশটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, চীন একদিকে মস্কোকে সমর্থন করছে এবং অন্যদিকে নিজেকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে এক প্রস্তাবের ওপর জাতিসংঘে ভোটে চীন ভোটদানে বিরত ছিল।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, যুদ্ধের আগে চীন-ইউক্রেন সম্পর্ক জোরদার হচ্ছিল। ২০১৯ সালে চীন ছিল ইউক্রেনের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। ইউক্রেনীয় বার্লি ও লৌহ আকরিকের শীর্ষ আমদানিকারক ছিল চীন। ইউক্রেন ছিল চীনের বৃহত্তম ভুট্টা সরবরাহকারী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী। চীনের প্রথম বিমানবাহী রণতরি, লিয়াওনিং ছিল ইউক্রেন থেকে কেনা একটি বাতিল সোভিয়েত জাহাজ যা চীনা নৌবাহিনী সংস্কার করেছে।

শি ও জেলেনস্কির মধ্যে সর্বশেষ ফোনালাপ হয়েছিল দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য ২০২২ সালের জানুয়ারিতে।

বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন ও অপর দেশগুলোতে বিশেষ চীনা দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন লি হুই। তিনি চীনা সরকারের ইউরেশিয়ান বিষয়ক বিশেষ দূত।

এর আগে লি রাশিয়ায় চীনা রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন।