আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যদি গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান পরিচালনা করে, সেক্ষেত্রে বেসামরিক নিহতের সংখ্যা ‘অগ্রহণযোগ্য’ পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) কিরগিজস্থানে এক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এক সরকারি সফরে বর্তমানে সাবেক সোভিয়েত অঙ্গরাজ্য কিরগিজিস্তানের রাজধানী বিশকেকে রয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। সেখানে এক আলোচনা সভায় ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল অভিযান সম্পর্কে তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায় ভারী অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার খুবই জটিল একটি ব্যাপার এবং তার পরিণতিও হবে মারাত্মক। কারণ এই পরিস্থিতি (গাজায়) স্থল অভিযান পরিচালিত হলে সাধারণ বেসামরিক নিহতদের সংখ্যা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছাবে এবং তা কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
পুতিন বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি স্থল অভিযানের ফলে বেসামরিকদের মৃত্যু হলে তা হবে একেবারে অগ্রহণযোগ্য। আবাসিক এলাকায় ভারী অস্ত্র নিয়ে লড়াই করলে সব পক্ষের জন্য পরিণতি ভয়াবহ হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বেসামরিকদের হতাহত একেবারে অগ্রহণযোগ্য হবে। এখন মূল বিষয় হলো রক্তপাত বন্ধ করা।
তিনি বলেছেন, নজিরবিহীন নৃশংস হামলার শিকার হওয়ার পর ইসরায়েলের নিজেকে রক্ষার অধিকার রয়েছে।
দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, গঠনমূলক মানসিকতার অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয়ে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া।
তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বন্ধে আলোচনা হওয়া উচিত দুই রাষ্ট্র সমাধান ঘিরে। যার মাধ্যমে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের রাষ্ট্র পাবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট আবারও চলমান সংঘাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির ব্যর্থতার ফল এই ট্র্যাজেডি।
হামাসসহ ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে রাশিয়ার। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন বিরাজ করছে।
পুতিন বলেন, আমরা বুঝি এটার মানে কি। আধা-পেশাদারভাবে বলা যেতেই পারে। তবে আবাসিক এলাকায় ভারী সরঞ্জাম ব্যবহার করা একটি কঠিন কাজ। এটি সব পক্ষের জন্য গুরুতর পরিণতি নিয়ে আসবে। সরঞ্জাম ছাড়া এই ধরনের অভিযান চালানো আরও কঠিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বেসামরিক ক্ষতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। প্রায় ২০ লাখ মানুষ এখানে বাস করে।
পুতিনের এই মন্তব্যকে রাশিয়ার নিজস্ব কাজের বিপরীত বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। কেননা ইউক্রেনে দেশটি পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন চালাচ্ছে। মস্কোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের অসংখ্য লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে যেমন বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা। মস্কো অনেক সময় বেসামরিক এলাকায় ভারী সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে বলে উঠে এসেছে একাধিক তদন্তে।
রাশিয়া বারবার বেসামরিক নাগরিক বা বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করেছে এবং বিপরীতে অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনে তার আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতে মস্কো মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পুতিন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের শত শত বন্দুকধারী গাজা উপত্যকার চারপাশে সীমান্ত বাধা ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালায়। এতে ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় ১৫০ মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে। অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জানিয়েছে, গাজায় লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যার মধ্যে ৫০০ শিশুও রয়েছে।
রাশিয়া এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষের সহিংসতার নিন্দা করেছে এবং সংঘাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। পুতিন বলেছেন, ‘এখানে একটি বড় মাপের ট্র্যাজেডি ঘটেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ নীতির ফল।’
প্রসঙ্গত, পুতিন চেচনিয়ায় দ্বিতীয় যুদ্ধের তত্ত্বাবধান করেছিলেন, যা ১৯৯৯ সালে চেচনিয়া থেকে ইসলামপন্থীদের রাশিয়ার দাগেস্তান অঞ্চলে অভিযান চালানোর পর শুরু হয়েছিল। ১০ বছরের যুদ্ধে হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছিল।