আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারতের কেরালা রাজ্যে তিন দফায় ভয়াবহ ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ জনে। এছাড়া শতাধিক মানুষ এখন আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) ভোরের দিকে ওয়ানাড় জেলার মেপ্পেদির পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে কেরালা রাজ্য সরকারের অধীন দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা কেরালা স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (কেসিডিএমএ)।
কান্নুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিএসসি কেন্দ্র ভিথিরি তালুকে আটকে পড়া মানুষ এবং সরকারি কর্মীদের উদ্ধারের জন্য বন্যা-ত্রাণ কার্যক্রমে দুটি ইউনিট মোতায়েন করেছে। খবর এনডিটিভি, টাইম এন্ড ইন্ডিয়া
কেসিডিএমএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উপদ্রুত এলাকায় ইতোমধ্যে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন কেসিডিএমএ এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা এনডিআরএফের কর্মীরা। এলাকাটিতে ভারী বর্ষণের কারণে উদ্ধার তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের বনমন্ত্রী এ কে শশীন্দ্রন রয়টার্সকে বলেন, এখানকার পরিস্থিতি বেশ গুরুতর। দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের কর্মীদের সহযোগিতা করতে সরকারের সব বাহিনী এগিয়ে এসেছে।
এদিকে ভারী বর্ষণ ও পানির স্রোতে শালিয়ার নদীর সেতু ধ্বসে যাওযায় শুরুর দিকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে উদ্ধার তৎপরতা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অস্থায়ী দড়ির সেতু তৈরি করার পর তৎপরতায় গতি আসে।
মেপ্পেদি গ্রামের পাহাড়ি এলাকার বিশাল জায়গাজুড়ে ঘটেছে এই ভূমিধস। গ্রামের নিকটবর্তী শহর চুরালমালাও এই ভূমিধসে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শশীন্দ্রন।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। এত বড় দুর্ঘটনায় মেপ্পেদিতে শোক নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল এশিয়ানেট টিভিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
কেরালার এই অঞ্চলটি চা এবং এলাচ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। রশিদ পাড়িক্কালপারামবান নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা রয়টার্সকে জানান, সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ভারী বর্ষণের পাশাপাশি মোট তিন দফা ভূমিধস ঘটেছে ওই এলাকায়। ওই সময়ই ভেঙে পড়ে শালিয়ার নদীর সেতুটি। গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি চা ও এলাচ বাগানে কাজ করার জন্য বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক পরিজায়ী শ্রমিক মেপ্পেদিতে আসেন। শালিয়ার নদীর তীরে তাঁবু গেড়ে থাকেন তারা। গতকালের ভূমিধস ও বৃষ্টিতে তাদের অনেকেই নদীতে ভেসে গেছেন।
এছাড়া বিজেপি প্রধান জেপি নাড্ডাকে দলীয় কর্মীদের উদ্ধার কাজে সহায়তা নিশ্চিত করতে বলেছেন তিনি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেশ গোপীর সঙ্গেও কথা বলেছেন মোদী।
দুর্যোগে নিহতদের পরিবারকে ২ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এছাড়া আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
ঠিক কতসংখ্যক মানুষ ঘর-বাড়ি বা অন্য জায়গায় আটকে রয়েছেন, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। এছাড়া নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
যেখানে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে তার কাছেই চালিয়ার নামে একটি নদী রয়েছে। মালাপ্পুরমের নীলাম্বুরের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে নদীটি। স্থানীয়দের আশঙ্কা, অনেকেই খরস্রোতা এই নদীতে ভেসে গেছেন।
ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চার ঘণ্টার মধ্যে ওয়েনাড়ের পাহাড়ি গ্রাম মেপ্পাদির কাছে তিন দফা ভূমিধস আঘাত হানে। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়েছেন, ভূমিধসের পরপরই সব সরকারি সংস্থা উদ্ধারকাজে নেমেছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আটকে থাকা লোকজনকে দ্রুত বের করে আনার জোর প্রচেষ্টা চলছে।
পিনারাই বিজয়ন আরও জানান, কেরালার নিজস্ব বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর ও এনডিআরএফের দল বিপর্যস্ত এলাকায় পৌঁছেছে। এনডিআরএফের আরও বেশি সংখ্যক সদস্য পাঠানো হচ্ছে। ভূমিধসে ৭০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিনা জজ।
কেরালা রাজ্যের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং এনডিআরএফ ছাড়াও কান্নুর প্রতিরক্ষা সুরক্ষা কর্পসও উদ্ধার অভিযানে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার শিগগির উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।
কংগ্রেস নেতা এবং ওয়েনাড়ের সাবেক সাংসদ রাহুল গান্ধী বলেছেন, তিনি এই বিপর্যয়ের ঘটনায় ‘গভীরভাবে শোকাহত’ হয়েছেন। যারা এই দুর্যোগে স্বজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে রাহুল গান্ধী বলেন, আমি আশা করি যারা এখনও আটকা পড়ে আছেন তাদের শিগগির নিরাপদে সরিয়ে আনা সম্ভব হবে।