Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

কালপুরুষসহ একাধিক কালজয়ী উপন্যাসের লেখক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১।

সোমবার (৮ মে) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রোগে ভুগছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সমরেশ মজুমদারের বড় মেয়ে দোয়েল মজুমদার বলেন, বাবা আর নেই। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। গত দু’তিন দিন তার অবস্থার অনেকটা উন্নতি ঘটে। আমরাও খুব আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু সোমবার তার একটি মেজর কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়। সেখান থেকে আর প্রত্যাবর্তন হয়নি তার।

তিনি আরও বলেন, বাবার মরদেহ কাল সকালে শ্যামপুকুরের বাড়িতে কিছুক্ষণ রাখা হবে। এরপর সেখান থেকে শেষকৃত্যের জন্য বালিঘাটে নেওয়া হবে।

এর আগে, গত ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল বলে হাসপাতাল সূত্রের জানা যায়। এরপর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বাড়তে থাকে। সমরেশ মজুমদারের শ্বাসনালীতে গভীর সংক্রমণ ছিল। গত এক যুগ ধরেই ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। হাসপাতালে ‘ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা’ (স্লিপ অ্যাপমিয়া) বাড়তে থাকে।

সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় আসেন তিনি। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) স্নাতক বিভাগে। এরপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডএর সাথে যুক্ত ছিলেন।

১৯৪২ সালে পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম সমরেশ মজুমদারের। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় আসেন তিনি। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) স্নাতক বিভাগে। এরপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তার প্রচণ্ড আসক্তি ছিল। তার প্রথম গল্প ‘অন্যমাত্রা’ লেখাই হয়েছিলো মঞ্চনাটক হিসাবে, আর সেখান থেকেই তার লেখকজীবনের শুরু। তার লেখা অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিল দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে।

সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ ছাপা হয়েছিল দেশেই ১৯৭৫ সালে। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্য জগতে তাকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে।

দীর্ঘ লেখক জীবনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু পুরস্কারে ভূষিত হন সমরেশ মজুমদার। সমরেশ মজুমদার ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইআইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে জয় করেছেন বিএফজেএ দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির অ্যাওয়ার্ড। সমরেশ মজুমদার পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়।

বাংলাদেশের পাঠকদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক বেশ নিবিড়। কলকাতা ও বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখকদের একজন হিসাবে পাঠক মন জয় করা সমরেশ শেষবার ঢাকায় এসেছিলেন ২০১৯ সালে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই

প্রকাশের সময় : ০৯:৪৮:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ মে ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

কালপুরুষসহ একাধিক কালজয়ী উপন্যাসের লেখক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১।

সোমবার (৮ মে) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রোগে ভুগছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সমরেশ মজুমদারের বড় মেয়ে দোয়েল মজুমদার বলেন, বাবা আর নেই। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। গত দু’তিন দিন তার অবস্থার অনেকটা উন্নতি ঘটে। আমরাও খুব আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু সোমবার তার একটি মেজর কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়। সেখান থেকে আর প্রত্যাবর্তন হয়নি তার।

তিনি আরও বলেন, বাবার মরদেহ কাল সকালে শ্যামপুকুরের বাড়িতে কিছুক্ষণ রাখা হবে। এরপর সেখান থেকে শেষকৃত্যের জন্য বালিঘাটে নেওয়া হবে।

এর আগে, গত ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল বলে হাসপাতাল সূত্রের জানা যায়। এরপর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বাড়তে থাকে। সমরেশ মজুমদারের শ্বাসনালীতে গভীর সংক্রমণ ছিল। গত এক যুগ ধরেই ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। হাসপাতালে ‘ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা’ (স্লিপ অ্যাপমিয়া) বাড়তে থাকে।

সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় আসেন তিনি। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) স্নাতক বিভাগে। এরপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডএর সাথে যুক্ত ছিলেন।

১৯৪২ সালে পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম সমরেশ মজুমদারের। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় আসেন তিনি। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) স্নাতক বিভাগে। এরপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তার প্রচণ্ড আসক্তি ছিল। তার প্রথম গল্প ‘অন্যমাত্রা’ লেখাই হয়েছিলো মঞ্চনাটক হিসাবে, আর সেখান থেকেই তার লেখকজীবনের শুরু। তার লেখা অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিল দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে।

সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ ছাপা হয়েছিল দেশেই ১৯৭৫ সালে। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্য জগতে তাকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে।

দীর্ঘ লেখক জীবনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু পুরস্কারে ভূষিত হন সমরেশ মজুমদার। সমরেশ মজুমদার ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইআইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে জয় করেছেন বিএফজেএ দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির অ্যাওয়ার্ড। সমরেশ মজুমদার পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়।

বাংলাদেশের পাঠকদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক বেশ নিবিড়। কলকাতা ও বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখকদের একজন হিসাবে পাঠক মন জয় করা সমরেশ শেষবার ঢাকায় এসেছিলেন ২০১৯ সালে।