Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অভিজাত পাড়ার চোর সাবেক সচিবের মেয়ে, ৮০০ মোবাইল চুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জুবায়দা রহমান। বাবা ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক যুগ্ম সচিব। পোশাক-আশাকে সবসময় থাকে অভিজাত্যের ছোঁয়া। এসব পরিচয়কে ছাপিয়ে তিনি একজন নারী চোর। পাঁচ তারকা হোটেল ও রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে চোখের পলকে ব্যাগ, স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা চুরি করাই ছিল তার অভ্যাস। এভাবে গত ১২ বছরে ৮০০ মোবাইল ও ব্যাগ চুরি করেছেন। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য পরিবার থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে। তারপরও এমন কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেননি। অবশেষে শেষ রক্ষা হয়নি। ঢাকা ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে নারী চিকিৎসকের মোবাইল ও ব্যাগ চুরি করে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে জুবায়দাকে।

গত ৩ মার্চ ঢাকা ক্লাবে গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজিবিষয়ক এক সিমিনারে অংশগ্রহণ করে জুবাইদা চুরি করেন ডা. ফারহানা হকের মোবাইল, ব্যাগ ও গয়না। ডা. ফারহানা হক গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক। চুরির জিনিসপত্র বিক্রি করে দিলেও তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি নিজের মোবাইলে হস্তান্তর করে নেন জুবাইদা। সেই থেকে ডা. ফারহানা সেজে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে যাচ্ছিলেন বিভিন্ন রোগীদের এবং হাতিয়ে নিচ্ছিলেন মোটা অংকের টাকা।

এ বিষয়ে গত ১২ মার্চ রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা হওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তের এক পর্যায়ে শুক্রবার জুবাইদা সুলতানাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে নারীদের ১৬টি হ্যান্ডব্যাগ, ৪টি মোবাইল, ৫টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, অলংকার, বিভিন্ন সুপার শপের কার্ড, ৪টি পেনড্রাইভ জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, জুবাইদা সুলতানা গত ১২ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত ক্লাব ও হোটেলে চুরি করে আসছিলেন। এ পর্যন্ত প্রায় সাত থেকে আটশ মোবাইল, ল্যাপটপ ও দামি ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করেছেন অভিজাত এলাকা থেকে।

শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘জুবায়দার বাবা পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন। চুরি করার অভ্যাসের কারণে তার (জুবাইদা) বাবা তাকে বাসা থেকে বের করে দেন।’

হারুন অর রশীদ জানান, মূলত যেসব ক্লাবে কর্মজীবী নারীরা প্রোগ্রাম করেন জুবায়দা সেগুলোতে যান। এরপর সুযোগ বুঝে ব্যাগ, টাকা ও যা যা পায় নিয়ে যান। এসব জিনিসের কিছু নিজে ব্যবহার করেন, আবার কিছু তার দ্বিতীয় স্বামীর মাধ্যমে বিক্রি করতেন।

উইপুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঢাকা ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে জুবায়দা এক নারী চিকিৎসকের ফোন চুরি করেন। এরপর সেই ফোন থেকে ক্যান্সারের রোগীকে ফোন করে কাজ করে দেওয়ার কথা বলে দ্রুত টাকা পাঠাতে বলেন। ওই রোগীর স্বজনরা বিশ্বাস করে দ্রুত টাকা পাঠান। বিষয়টি জানতে পেরে ওই চিকিৎসক পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগে জুবাইদাকে শনাক্ত করতে একজন নারী কনস্টেবলকে নিযুক্ত করা হয়। তিনি নারী ক্যান্সার রোগী সেজে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তার কাছেও জুবায়দা টাকা চায়।’

হারুন অর রশীদ জানান, জুবায়দা ১২ বছরে ৮শ মোবাইল ফোন ও ব্যাগ চুরি করেছেন। তার টার্গেট হলো উত্তরা ক্লাব, শেরাটন হোটেল ও ঢাকা ক্লাবসহ অভিজাত ক্লাবে চুরি করা। তবে এসব ব্যাগ ও মোবাইলের অধিকাংশই তিনি বিক্রি করেছেন। আবার পছন্দের জিনিসগুলো ব্যবহার করতেন। ফলে তার পোশাক ও ব্যবহারকৃত জিনিস দেখে হয়তো অনেকে তাকে সন্দেহ করতেন না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, জুবায়দা কোন কোন হোটেল যান এবং কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া অভিজাত হোটেলের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তার কোনো সখ্যতা আছে কি না তাও তদন্ত ও যাচাই করা হবে। তাকে কারা সহায়তা করতো তাও খতিয়ে দেখা হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

অভিজাত পাড়ার চোর সাবেক সচিবের মেয়ে, ৮০০ মোবাইল চুরি

প্রকাশের সময় : ০৮:০৯:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জুবায়দা রহমান। বাবা ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক যুগ্ম সচিব। পোশাক-আশাকে সবসময় থাকে অভিজাত্যের ছোঁয়া। এসব পরিচয়কে ছাপিয়ে তিনি একজন নারী চোর। পাঁচ তারকা হোটেল ও রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে চোখের পলকে ব্যাগ, স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা চুরি করাই ছিল তার অভ্যাস। এভাবে গত ১২ বছরে ৮০০ মোবাইল ও ব্যাগ চুরি করেছেন। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য পরিবার থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে। তারপরও এমন কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেননি। অবশেষে শেষ রক্ষা হয়নি। ঢাকা ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে নারী চিকিৎসকের মোবাইল ও ব্যাগ চুরি করে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে জুবায়দাকে।

গত ৩ মার্চ ঢাকা ক্লাবে গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজিবিষয়ক এক সিমিনারে অংশগ্রহণ করে জুবাইদা চুরি করেন ডা. ফারহানা হকের মোবাইল, ব্যাগ ও গয়না। ডা. ফারহানা হক গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক। চুরির জিনিসপত্র বিক্রি করে দিলেও তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি নিজের মোবাইলে হস্তান্তর করে নেন জুবাইদা। সেই থেকে ডা. ফারহানা সেজে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে যাচ্ছিলেন বিভিন্ন রোগীদের এবং হাতিয়ে নিচ্ছিলেন মোটা অংকের টাকা।

এ বিষয়ে গত ১২ মার্চ রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা হওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তের এক পর্যায়ে শুক্রবার জুবাইদা সুলতানাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে নারীদের ১৬টি হ্যান্ডব্যাগ, ৪টি মোবাইল, ৫টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, অলংকার, বিভিন্ন সুপার শপের কার্ড, ৪টি পেনড্রাইভ জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, জুবাইদা সুলতানা গত ১২ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত ক্লাব ও হোটেলে চুরি করে আসছিলেন। এ পর্যন্ত প্রায় সাত থেকে আটশ মোবাইল, ল্যাপটপ ও দামি ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করেছেন অভিজাত এলাকা থেকে।

শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘জুবায়দার বাবা পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন। চুরি করার অভ্যাসের কারণে তার (জুবাইদা) বাবা তাকে বাসা থেকে বের করে দেন।’

হারুন অর রশীদ জানান, মূলত যেসব ক্লাবে কর্মজীবী নারীরা প্রোগ্রাম করেন জুবায়দা সেগুলোতে যান। এরপর সুযোগ বুঝে ব্যাগ, টাকা ও যা যা পায় নিয়ে যান। এসব জিনিসের কিছু নিজে ব্যবহার করেন, আবার কিছু তার দ্বিতীয় স্বামীর মাধ্যমে বিক্রি করতেন।

উইপুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঢাকা ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে জুবায়দা এক নারী চিকিৎসকের ফোন চুরি করেন। এরপর সেই ফোন থেকে ক্যান্সারের রোগীকে ফোন করে কাজ করে দেওয়ার কথা বলে দ্রুত টাকা পাঠাতে বলেন। ওই রোগীর স্বজনরা বিশ্বাস করে দ্রুত টাকা পাঠান। বিষয়টি জানতে পেরে ওই চিকিৎসক পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগে জুবাইদাকে শনাক্ত করতে একজন নারী কনস্টেবলকে নিযুক্ত করা হয়। তিনি নারী ক্যান্সার রোগী সেজে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তার কাছেও জুবায়দা টাকা চায়।’

হারুন অর রশীদ জানান, জুবায়দা ১২ বছরে ৮শ মোবাইল ফোন ও ব্যাগ চুরি করেছেন। তার টার্গেট হলো উত্তরা ক্লাব, শেরাটন হোটেল ও ঢাকা ক্লাবসহ অভিজাত ক্লাবে চুরি করা। তবে এসব ব্যাগ ও মোবাইলের অধিকাংশই তিনি বিক্রি করেছেন। আবার পছন্দের জিনিসগুলো ব্যবহার করতেন। ফলে তার পোশাক ও ব্যবহারকৃত জিনিস দেখে হয়তো অনেকে তাকে সন্দেহ করতেন না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, জুবায়দা কোন কোন হোটেল যান এবং কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া অভিজাত হোটেলের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তার কোনো সখ্যতা আছে কি না তাও তদন্ত ও যাচাই করা হবে। তাকে কারা সহায়তা করতো তাও খতিয়ে দেখা হবে।