নিজস্ব প্রতিবেদক :
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বড় সুযোগ কক্সবাজারের সম্মেলন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান।
রোববার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের ব্রিফ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
ড. খলিলুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন জাতিসংঘের উদ্যোগে ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কক্সবাজারের সম্মেলনটি জাতিসংঘের একটি বৃহত্তর সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশবিশেষ। এই সম্মেলনটি রোহিঙ্গাদের জন্য এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এই সমস্যার একটি স্থায়ী ও প্রকৃত সমাধান খুঁজে বের করার পথনির্দেশিকা দেওয়ার একটি বড় সুযোগ।
নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, এক সময় রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক আলোচনার এজেন্ডা থেকে প্রায় বাদ পড়ে যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের জন্য সকল সদস্য রাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই আহ্বানে তাৎক্ষণিকভাবে এবং সর্বসম্মতিক্রমে সাড়া পাওয়া যায় এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এই সম্মেলন আহ্বানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশ্বের ১০৬টি দেশ এই সম্মেলনকে স্পন্সর করেছে। এখন যথেষ্ট পরিমাণ আন্তর্জাতিক সমর্থন রয়েছে।
তিনি বলেন, এই সম্মেলন হলো রোহিঙ্গাদের জন্য এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য আশু সমাধানের পথ নির্দেশিকা দেওয়ার একটি স্থায়ী সুযোগ। আমরা সেই কারণে রোহিঙ্গাদের ভয়েস, তাদের কথা, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাদের স্বপ্ন, এসব আমরা সেখানে নিয়ে যেতে চাই।
নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো সম্মেলনে অংশ নেয়, তবে রোহিঙ্গারা আর সদস্য নয়। তবে কাউকে তাদের ভয়েসটা নিয়ে যেতে হবে। আমরা এ ধরনের প্রক্রিয়াতে সেই কাজটি করছি। আমরা আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি।
তিনি বলেন, সম্মেলনে যারা অংশ নেবেন, সেখান থেকে আপনারা দেখতে পাবেন, আমরা যে বার্তাটা নিয়ে যাব, রোহিঙ্গারা যে বার্তাটা পাঠাবেন, সেটা আগামী সেপ্টেম্বরে ইউএন কনফারেন্সের একটি বড় উপাদান।
আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো আমরা এই সমস্যার আশু ও স্থায়ী সমাধান চাই। আপনি আন্তর্জাতিক সাহায্য দিয়ে কতদিন রাখবেন, তাদের তো বাড়িঘরে ফিরতে হবে। সেটাই আসল কথা।
তিনি বলেন, সাহায্য কমে গেলে আমাদের হোস্ট কমিউনিটিতে তার প্রতিক্রিয়া পড়ে। সাহায্য যেন অব্যাহত থাকে, সেই প্রচেষ্টা তো করছি। কিছু কিছু দাতা দেশের উদ্যোগের নিশানা পাচ্ছি। তবে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো, তাদের ফেরত নেওয়া।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে ‘অংশীজন সংলাপ: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আলোচনার জন্য প্রাপ্ত বার্তা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে অনুষ্ঠিত হবে রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন। আর কাতারের দোহায় ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে রোহিঙ্গাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
রোহিঙ্গা ঢলের আট বছর পূর্তির দিন ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে পারেন।
সম্মেলনে কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রোহিঙ্গাবিষয়ক কয়েকজন আন্তর্জাতিক দূত, বিদেশে বাংলাদেশ মিশন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।