নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলছেন, সংস্কার আগে নিজের ভেতরে করতে হবে। তারপর স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে উদ্যোগ নিতে হবে, না হলে শুধু রাজা বদল হবে, অবস্থা বদলাবে না।
মঙ্গলবার (১৩ মে) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির (ওএসবি) ৫২তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, চক্ষু চিকিৎসকদের মধ্যে যারা ভালো কাজ করছেন তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। পেরিফেরিতে ভালো ডাক্তার নেই, কাজেই তাদেরকে যেখানে যেতে বলা হবে সেখানে থাকতে হবে। প্রয়োজনে বেতন বেশি দিতেও আমরা সম্মত। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, তাহলে চিকিৎসা খাতে আমরা ভালো করতে পারব। না হলে শুধু রাজা বদল হবে, অবস্থা বদলাবে না।
তিনি বলেন, ৭ হাজার চিকিৎসককে প্রমোশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চিকিৎসক, সার্জনদের বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে, দ্রুতই কার্যকর হবে বলে আশা করছি। তাই বলে বেতন না বাড়া পর্যন্ত কী চিকিৎসা বন্ধ থাকবে? চিকিৎসকরা সময়মত হাসপাতালে যাচ্ছেন না, রোগী ভর্তিসহ বেশিরভাগ কাজেই মানুষের জন্য সহজলভ্য না।
নূরজাহান বেগম বলেন, আমরা চিকিৎসকদের পেশাদারিত্ব ও আত্মত্যাগকে মূল্য দিই। দীর্ঘদিন ধরে অনেক চিকিৎসক তাদের ন্যায্য পদোন্নতি ও বেতন কাঠামোতে পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে সরকার বড় পরিসরে পদোন্নতির উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা চাই চিকিৎসকরা উৎসাহ নিয়ে দায়িত্ব পালন করুন, আর সেজন্য প্রয়োজন উপযুক্ত স্বীকৃতি ও প্রণোদনা।
চিকিৎসকদের এই কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের সামগ্রিক মানোন্নয়ন ঘটবে বলেও মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এ পদক্ষেপ চিকিৎসকদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করবে এবং সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে আরও আগ্রহী করে তুলবে।
গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসক সংকটের কথা উল্লেখ করে নূরজাহান বেগম বলেন, গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো ভালো চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। যারা অভিজ্ঞ, তাদেরই সেসব এলাকায় যেতে হবে। প্রয়োজনে বেতন বাড়িয়ে তাদের সেখানে পাঠাতে হবে। জনগণের দোরগোড়ায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।
এসময় আক্ষেপ প্রকাশ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, অনেক চিকিৎসক সময়মতো হাসপাতালে যান না, এটা খুবই দুঃখজনক। রোগীদের জন্য সহজ ও নির্বিচারে সেবা নিশ্চিত করতে হলে চিকিৎসকদের পেশাগত আচরণে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চক্ষু চিকিৎসকদের মধ্যে যারা ভালো কাজ করছেন, তাদের আরও দায়িত্ব নিতে হবে। সবার উচিত নিজের জায়গা থেকে এগিয়ে আসা।
নূরজাহান বেগম বলেন, সংস্কার আগে নিজের ভেতর থেকে শুরু করতে হবে, তারপরই স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানো সম্ভব হবে। না হলে শুধু রাজা বদল হবে, অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।
চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে নিজের ভাবনা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, রোবটিক্স ফিজিওথেরাপির মতো প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালু করতে চাই যাতে দেশের মানুষকে আর চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছুটতে না হয়। চিকিৎসকদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশা করছি। কিন্তু বেতন না বাড়া পর্যন্ত কি চিকিৎসা বন্ধ থাকবে?
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্যসচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. শাহাব উদ্দিন।