নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারি টাকায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি তদন্ত করে দেখছে। এসব মসজিদ নির্মাণে সৌদি সরকারের কোনো অনুদান নেই। প্রতিটি মসজিদ নির্মাণে ১৭/১৮ কোটি টাকা করে খরচ করা হয়েছে। দুর্নীতি না হলে ৭/৮ কোটি টাকায় করা যেত।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, পতিত স্বৈরাচার ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করেছিল। খরচ হয়েছিল ১ বিলিয়ন ডলার। স্বৈরাচারের সমর্থকরা বলেছিল এটা সৌদির আরবের ফান্ডের। সৌদি আরব এখানে একটা টাকাও দেয়নি। এই মসজিদের অনেক অনিয়মের কথা উঠে এসেছে। অনেক ধরনের অনিয়ম। সেটা নিয়ে কেবিনেট মিটিংয়ে আলাপ হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় তদন্ত করার জন্য একটা কমিটি করে দিয়েছে।
‘প্রধান উপদেষ্টা কেবিনেট সচিবকে বলেছেন, সরকারি সংস্থাগুলোতে দ্রুত প্রচুর জনবল নিয়োগ করতে। যেসব ভেকেন্সি আছে। কেবিনেট সচিব আগামী মিটিংয়ে এটা উপস্থাপন করবেন যে, কোথায় কোথায় দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। খুব দ্রুত করা হবে।’
প্রেস সচিব বলেন, যেসব কোম্পানি বাংলাদেশের কাছে পাওনা ছিল আজকে একটি পর্যালোচনা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত এই ডিওগুলো ক্লিয়ার হবে। গ্রীষ্মকালে নেপাল থেকে আমাদের বিদ্যুৎ দিয়ে থাকেন। শীতকালে নেপালের বিদ্যুতের প্রচুর চাহিদা। তখন তখন আমাদের কিন্তু বিদ্যুৎ কম প্রয়োজন হয়। শীতকালে আমাদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেপালে কীভাবে পাঠানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্ষাকালে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা হয়। চট্টগ্রামের মানুষ খুবই ভোগান্তিতে পড়েন। এটা নিয়ে আজকে কেবিনেটে অনেক আলোচনা হয়েছে। জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য যেসব প্রজেক্ট নেওয়ার ছিল সেই বিষয়গুলো আজকে একটা রিভিউ হয়। মিটিংয়ে জানানো হয়, অনেকগুলো প্রজেক্ট এরই সন্তোষজনক। আমরা আশা করছি চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা আগামী বর্ষায় কমবে। পুরোপুরি যাবে কি না এ বিষয়ে আমরা এখনই বলতে পারছি না।
২০২৬ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) গ্র্যাজুয়েশন করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে কেবিনেট মিটিংয়ে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিজনেসের সক্ষমতা বাড়বে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের কারণের যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে সেগুলোর বিষয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এলডিসির উত্তরণের ফলে ওষুধ শিল্পে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কি না? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে সমস্ত ইন্ডাস্ট্রি আছে, প্রত্যেকটা ইন্ডাস্ট্রিতে কি পরিমাণ ইমপ্যাক্ট পড়তে পারে, আদৌ পড়বে কিনা, সবকিছু নিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চিন্তা ভাবনা করেছে। অভিজ্ঞদের মতামত নিয়েছে, কথা বলেছে। এরপর সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো ধরনের ইমপ্যাক্ট পড়লে আমরা আগের থেকেই প্রস্তুতি নেব। ২০২৬ সালে গ্রেজুয়েট করলেও আমরা যে বেনিফিট গুলো পাচ্ছিলাম সেটা আরো তিন বছর থাকবে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অনেক সক্ষমতা হয়েছে।
আদানির বকেয়া নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবের তিনি বলেন, অনেকগুলো কোম্পানির বকেয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা খুব অক্সিলারি ওয়েতে টাকাগুলো দিচ্ছি। এক হচ্ছে যে বিল দিচ্ছি এবং পূর্বের যে বিলগুলো জমা ছিল, পতিত স্বৈরাচার দেননি, টাকাগুলো তারা বিল্ডআপ করে রেখে গেছেন, সে টাকাগুলো আমরা দিচ্ছি। যাদের সঙ্গে বাংলাদেশ গভমেন্ট কাজ করছে, সন্তোষ জানিয়েছে।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার প্রসঙ্গে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না? তিনি বলেন, আমরা খুবই শোকাহত। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি মাগুরা শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আমাদের মিলিটারি চিকিৎসকরা চেষ্টা করেছেন। যারা এই ঘটনা অভিযুক্ত তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা অভিযুক্ত তাদের খুব দ্রুত বিচারে আওতায় আনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন।
‘আমাদের ইউনাইটেড ন্যাশনের সেক্রেটারি আসছেন। এটা আমাদের জন্য খুবই সম্মানের বিষয়। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সফর। তার সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলাপ হবে। এই ট্যুরকে সামনে রেখে শাহবাগে জমায়েতের বিষয়টা সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমেদ, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।