Dhaka সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি, দাবি পুলিশের

টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি : 

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি করা হলেও কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং এ দাবি করেন।

তিনি বলেন, ডাকাতির সময় বাসে থাকা দুই/তিনজন নারী যাত্রীর গলা থেকে চেইন এবং কান থেকে দুল নেওয়ার সময় তাদের শ্লীলতাহানি করে ডাকাতদলের সদস্যরা। তবে তাদের (ভিকটিম) সঙ্গে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।

তিনি আরো বলেন, নারীদের কাছ থেকে কিছু স্বর্ণ-রূপা লুণ্ঠিত হয়েছে। দুষ্কৃতকারী ডাকাত দল নাকফুল কানের দুল নেওয়ার সময় নারীদের টাচে গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি এটা আমরা জানতে পেরেছি। শ্লীলতাহানি বলা যেতে পরে।

তিনি বলেন, ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার দায়ে মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার আতিকুজ্জামানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিন ডাকাত হচ্ছেন- মানিকগঞ্জের দৌলতপুর সদর উপজেলার লাউতারা গ্রামের মো. বদর উদ্দিন শেখের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মুহিত (৩০), শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ (৩০) এবং ঢাকার সাভার উপজেলার টানগেন্ডা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মো. শরীফুজ্জামান (২৮)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত হওয়া ৩টি মোবাইল ফোন, ১টি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় সাভাবের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল, একটি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তথ্য প্রযুক্তি ও বিভিন্ন সোর্স ব্যবহার করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে মির্জাপুর থানার এএসআই আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত সোমবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে বাদী ওমর আলী ও তাঁর সঙ্গে থাকা সোহাগ হোসেন ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসে ওঠেন। ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আরও ১০-১২ যাত্রীকে ওঠান চালক। রাত ১টার দিকে গাজীপুরের চন্দ্রা বাইপাস এলাকায় এসে চা-বিরতির জন্য বাসটি দাঁড় করানো হয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর সেখান থেকে আরও তিন-চারজন নতুন যাত্রী উঠিয়ে বাসটি চলতে থাকে। দেড়টার দিকে গাজীপুর হাই-টেক সিটি পার্ক এলাকা অতিক্রমের সময় হঠাৎ ৮-৯ জন হাতে চাকু ও চাপাতি নিয়ে তাদের সিট থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে এবং চুপ থাকতে বলে।

এতে বলা হয়, কথা বললে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় ডাকাত দলের তিন সদস্য গিয়ে চালককে টেনেহিঁচড়ে সিট থেকে ফেলে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছয়-সাত ডাকাত চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোদের কাছে টাকা-পয়সা যা কিছু আছে সব দিয়ে দে।’ ডাকাতরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোনসেট, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিস কেড়ে নেয়। এ সময় দুই-তিন ডাকাত বাসে থাকা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। রাত আনুমানিক ৪টার দিকে ডাকাতরা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ টাকার মালপত্র ডাকাতি করে নন্দন পার্কের সামনে নেমে যায়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, যাত্রীরা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনা জানার পর পুলিশ তাদের মির্জাপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে যাত্রীরা মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসারের সঙ্গে দেখা করে ডাকাতির বিষয়ে আবহিত করেন। পুলিশ অপেক্ষা করতে বললে কয়েক মিনিট পর চলে যান তারা। নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌঁছার পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান যাত্রীরা। পুলিশ গিয়ে বাসের চালক, সুপারভাইজার এবং হেলপারকে আটক করে।

জানা গেছে, বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ বুধবার তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন দেন।

বাদী ওমর আলী বলেন, ‘ডাকাতরা অনেক যাত্রীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। যার কাছে যা ছিল, সব নিয়েছে। আমার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। বাসে ৪০ বছরের একজন ও ২০-২১ বছরের এক নারী ছিলেন। তাদের টেনেহিঁচড়ে সবকিছু নিয়েছে ডাকাতরা। এ ছাড়া তারা তাদের শরীরে হাত দিয়েছে।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বিমানের ফ্লাইটে ফের ত্রুটি, শারজাহ না গিয়ে ফিরে এলো ঢাকায়

চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি, দাবি পুলিশের

প্রকাশের সময় : ১০:০৯:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি : 

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি করা হলেও কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং এ দাবি করেন।

তিনি বলেন, ডাকাতির সময় বাসে থাকা দুই/তিনজন নারী যাত্রীর গলা থেকে চেইন এবং কান থেকে দুল নেওয়ার সময় তাদের শ্লীলতাহানি করে ডাকাতদলের সদস্যরা। তবে তাদের (ভিকটিম) সঙ্গে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।

তিনি আরো বলেন, নারীদের কাছ থেকে কিছু স্বর্ণ-রূপা লুণ্ঠিত হয়েছে। দুষ্কৃতকারী ডাকাত দল নাকফুল কানের দুল নেওয়ার সময় নারীদের টাচে গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি এটা আমরা জানতে পেরেছি। শ্লীলতাহানি বলা যেতে পরে।

তিনি বলেন, ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার দায়ে মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার আতিকুজ্জামানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিন ডাকাত হচ্ছেন- মানিকগঞ্জের দৌলতপুর সদর উপজেলার লাউতারা গ্রামের মো. বদর উদ্দিন শেখের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মুহিত (৩০), শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ (৩০) এবং ঢাকার সাভার উপজেলার টানগেন্ডা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মো. শরীফুজ্জামান (২৮)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত হওয়া ৩টি মোবাইল ফোন, ১টি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় সাভাবের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল, একটি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তথ্য প্রযুক্তি ও বিভিন্ন সোর্স ব্যবহার করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে মির্জাপুর থানার এএসআই আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত সোমবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে বাদী ওমর আলী ও তাঁর সঙ্গে থাকা সোহাগ হোসেন ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসে ওঠেন। ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আরও ১০-১২ যাত্রীকে ওঠান চালক। রাত ১টার দিকে গাজীপুরের চন্দ্রা বাইপাস এলাকায় এসে চা-বিরতির জন্য বাসটি দাঁড় করানো হয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর সেখান থেকে আরও তিন-চারজন নতুন যাত্রী উঠিয়ে বাসটি চলতে থাকে। দেড়টার দিকে গাজীপুর হাই-টেক সিটি পার্ক এলাকা অতিক্রমের সময় হঠাৎ ৮-৯ জন হাতে চাকু ও চাপাতি নিয়ে তাদের সিট থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে এবং চুপ থাকতে বলে।

এতে বলা হয়, কথা বললে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় ডাকাত দলের তিন সদস্য গিয়ে চালককে টেনেহিঁচড়ে সিট থেকে ফেলে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছয়-সাত ডাকাত চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোদের কাছে টাকা-পয়সা যা কিছু আছে সব দিয়ে দে।’ ডাকাতরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোনসেট, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিস কেড়ে নেয়। এ সময় দুই-তিন ডাকাত বাসে থাকা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। রাত আনুমানিক ৪টার দিকে ডাকাতরা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ টাকার মালপত্র ডাকাতি করে নন্দন পার্কের সামনে নেমে যায়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, যাত্রীরা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনা জানার পর পুলিশ তাদের মির্জাপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে যাত্রীরা মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসারের সঙ্গে দেখা করে ডাকাতির বিষয়ে আবহিত করেন। পুলিশ অপেক্ষা করতে বললে কয়েক মিনিট পর চলে যান তারা। নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌঁছার পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান যাত্রীরা। পুলিশ গিয়ে বাসের চালক, সুপারভাইজার এবং হেলপারকে আটক করে।

জানা গেছে, বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ বুধবার তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন দেন।

বাদী ওমর আলী বলেন, ‘ডাকাতরা অনেক যাত্রীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। যার কাছে যা ছিল, সব নিয়েছে। আমার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। বাসে ৪০ বছরের একজন ও ২০-২১ বছরের এক নারী ছিলেন। তাদের টেনেহিঁচড়ে সবকিছু নিয়েছে ডাকাতরা। এ ছাড়া তারা তাদের শরীরে হাত দিয়েছে।’