Dhaka সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংস্কার করে শেখ হাসিনার বিচার শেষ করে যাবে বলার সুযোগ নেই : আমীর খসরু

নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি : 

‘সংস্কারের গল্প বলে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই’ উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘নতুন নতুন যেসব কথা শুনছি। কখনো বলে আনুপাতিক হারে নির্বাচন, কখনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন, এরপরে জাতীয় নির্বাচন। তারপর তারা সংস্কার করে যাবে, শেখ হাসিনার বিচার শেষ করে যাবে। এ সমস্ত কথা বলার সুযোগ নেই।’

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নোয়াখালী মাইজদীর জেলা জজকোর্ট সড়কে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়া থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হওয়া ছাড়া কারো কোনো অধিকার নেই এ দেশ পরিচালনা করার। দেশ পরিচালনা করতে হলে দেশের মানুষের মন-মেজাজ বুঝতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। দেশের মানুষের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে সেটি আমারা ধারণ করতে সক্ষম হয়েছি। আর বিএনপি এসব বিষয়ে মানুষের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। নতুন বাংলাদেশে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে।

আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনা পালিয় যাওয়ার পরে সবার সম্মতিক্রমে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। আমাদের সমর্থন ছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনতে একটা অন্তর্র্বতী সরকারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। তাদের কাজ হলো নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করা। এজন্য আমরা এ সরকার সমর্থন দিয়েছি। জনগণ ভোট দিয়ে নিজেদের সরকার গঠন করতে চায়। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করবে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে সরকার গঠন করবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ ঢুকে গেছে আপনাদের কথাবার্তায়, আপনাদের উপদেষ্টাদের কথাবার্তায়। মনে হয়, তারা কোনো এক দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। সেই সন্দেহের উদ্বেগ যদি হয় বাংলাদেশের জনগণের কাছে আপনাদের আর কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। এ দেশ পরিচালনা করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে।

আমীর খসরু বলেন, সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্যই নির্বাচনকে বিলম্ব করছে। যত দিন যাচ্ছে তত নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। এতে বর্তমান সরকার নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে তা সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। যদিও নির্বাচনের জন্য একটি অন্তবর্তী সরকার প্রয়োয়জন রয়েছে। এ জন্য আমরা সমর্থন দিয়েছি। উপদেষ্টাদের কথাবার্তায ও সোশ্যাল মিডিয়ায়র পোস্টের মাধ্যমে মনে হচ্ছে তারা কোন এক দিকে ঝুকে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় না পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়ে যায় নাই, এই সংগ্রাম চলমান রয়েছে। আমাদের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের গত ১৬ বছরে গুলি করে হত্যা করে, গুম ও নির্যাতন করে জেলে বন্দী করেছে। সরকারকে বলতে চাই এখনকার বিএনপি নেতাকর্মীরা আগের চেয়ে অনেক পরিক্ষিত এই বিএনপির সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা কারো নেই।

সমসাময়িক রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যারা দীর্ঘায়ত করে লাভবান হবেন, হচ্ছেন তাদেরকে বলছি আপনারা মনে করছেন আপনারা এ সরকারের একটা অংশ হয়ে গেছেন। এ সরকারকে যতদিন রাখা যাবে তত দিনই আপনারা লাভবান থাকবেন, সরকারের অংশ হয়ে থাকবেন, এটা হওয়া সম্ভব না। যারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকেছেন। তাদেরকে বলছি পরিষ্কার করে সেই যেই হোক তাদের সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মানুষ ১৬ বছর ত্যাগ স্বীকার করেছে।

তিনি আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশ এক এক দিন যাচ্ছে, এক এক দিন গণতন্ত্র বিহীন ভাবে অতিবাহিত হচ্ছে। এক এক দিন যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ক্ষমতা বাহিরে থেকে এক এক দিন যাচ্ছে। আমরা ভোট দিয়ে আমরা আমাদের সরকার দেখতে চাই। যাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকবে। গণতন্ত্রে জবাবদিহিতায় নির্বাচন ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।

আমীর খসরু বলেন, বিএনপি জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। বিএনপির রাজনীতি এ দেশের মানুষের ওপর নির্ভরশীল। তাদের একমাত্র দায়িত্ব আগামী দিনে দেশে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আর তাদের যদি সংস্কারের খুব বেশি ইচ্ছা থাকে, তাহলে তারা যে কমিশনের রিপোর্ট গুলো তৈরি করেছে সেগুলো আমরা আগামী নির্বাচন সংসদে পেশ করতে রাজি আছি। সংসদে আলোচনা করে সবাই মিলে যেখানে সংস্কার প্রয়োজন সেটা করবে। সব চেয়ে বড় কথা হলে আমরাতো আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব। আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। সংস্কারের ব্যাপারে কারো কোনো মাথা ব্যথার প্রয়োজন নেই।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো এবং সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপি সদস্য সচিব হারুনুর রশিদ আজাদ। এতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্ল্যাহ বুলু, চেয়ারপারসেনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম ও কাজী মফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ৫ দফা দাবিতে ১৫ দিনের আলটিমেটাম (ভিডিও)

সংস্কার করে শেখ হাসিনার বিচার শেষ করে যাবে বলার সুযোগ নেই : আমীর খসরু

প্রকাশের সময় : ১০:৩০:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি : 

‘সংস্কারের গল্প বলে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই’ উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘নতুন নতুন যেসব কথা শুনছি। কখনো বলে আনুপাতিক হারে নির্বাচন, কখনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন, এরপরে জাতীয় নির্বাচন। তারপর তারা সংস্কার করে যাবে, শেখ হাসিনার বিচার শেষ করে যাবে। এ সমস্ত কথা বলার সুযোগ নেই।’

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নোয়াখালী মাইজদীর জেলা জজকোর্ট সড়কে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়া থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হওয়া ছাড়া কারো কোনো অধিকার নেই এ দেশ পরিচালনা করার। দেশ পরিচালনা করতে হলে দেশের মানুষের মন-মেজাজ বুঝতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। দেশের মানুষের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে সেটি আমারা ধারণ করতে সক্ষম হয়েছি। আর বিএনপি এসব বিষয়ে মানুষের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। নতুন বাংলাদেশে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে।

আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনা পালিয় যাওয়ার পরে সবার সম্মতিক্রমে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। আমাদের সমর্থন ছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনতে একটা অন্তর্র্বতী সরকারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। তাদের কাজ হলো নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করা। এজন্য আমরা এ সরকার সমর্থন দিয়েছি। জনগণ ভোট দিয়ে নিজেদের সরকার গঠন করতে চায়। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করবে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে সরকার গঠন করবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ ঢুকে গেছে আপনাদের কথাবার্তায়, আপনাদের উপদেষ্টাদের কথাবার্তায়। মনে হয়, তারা কোনো এক দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। সেই সন্দেহের উদ্বেগ যদি হয় বাংলাদেশের জনগণের কাছে আপনাদের আর কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। এ দেশ পরিচালনা করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে।

আমীর খসরু বলেন, সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্যই নির্বাচনকে বিলম্ব করছে। যত দিন যাচ্ছে তত নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। এতে বর্তমান সরকার নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে তা সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। যদিও নির্বাচনের জন্য একটি অন্তবর্তী সরকার প্রয়োয়জন রয়েছে। এ জন্য আমরা সমর্থন দিয়েছি। উপদেষ্টাদের কথাবার্তায ও সোশ্যাল মিডিয়ায়র পোস্টের মাধ্যমে মনে হচ্ছে তারা কোন এক দিকে ঝুকে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় না পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়ে যায় নাই, এই সংগ্রাম চলমান রয়েছে। আমাদের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের গত ১৬ বছরে গুলি করে হত্যা করে, গুম ও নির্যাতন করে জেলে বন্দী করেছে। সরকারকে বলতে চাই এখনকার বিএনপি নেতাকর্মীরা আগের চেয়ে অনেক পরিক্ষিত এই বিএনপির সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা কারো নেই।

সমসাময়িক রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যারা দীর্ঘায়ত করে লাভবান হবেন, হচ্ছেন তাদেরকে বলছি আপনারা মনে করছেন আপনারা এ সরকারের একটা অংশ হয়ে গেছেন। এ সরকারকে যতদিন রাখা যাবে তত দিনই আপনারা লাভবান থাকবেন, সরকারের অংশ হয়ে থাকবেন, এটা হওয়া সম্ভব না। যারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকেছেন। তাদেরকে বলছি পরিষ্কার করে সেই যেই হোক তাদের সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মানুষ ১৬ বছর ত্যাগ স্বীকার করেছে।

তিনি আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশ এক এক দিন যাচ্ছে, এক এক দিন গণতন্ত্র বিহীন ভাবে অতিবাহিত হচ্ছে। এক এক দিন যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ক্ষমতা বাহিরে থেকে এক এক দিন যাচ্ছে। আমরা ভোট দিয়ে আমরা আমাদের সরকার দেখতে চাই। যাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকবে। গণতন্ত্রে জবাবদিহিতায় নির্বাচন ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।

আমীর খসরু বলেন, বিএনপি জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। বিএনপির রাজনীতি এ দেশের মানুষের ওপর নির্ভরশীল। তাদের একমাত্র দায়িত্ব আগামী দিনে দেশে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আর তাদের যদি সংস্কারের খুব বেশি ইচ্ছা থাকে, তাহলে তারা যে কমিশনের রিপোর্ট গুলো তৈরি করেছে সেগুলো আমরা আগামী নির্বাচন সংসদে পেশ করতে রাজি আছি। সংসদে আলোচনা করে সবাই মিলে যেখানে সংস্কার প্রয়োজন সেটা করবে। সব চেয়ে বড় কথা হলে আমরাতো আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব। আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। সংস্কারের ব্যাপারে কারো কোনো মাথা ব্যথার প্রয়োজন নেই।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো এবং সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপি সদস্য সচিব হারুনুর রশিদ আজাদ। এতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্ল্যাহ বুলু, চেয়ারপারসেনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম ও কাজী মফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।