Dhaka শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৌম্যের নৈপুণ্যে গ্লোবাল লিগে চ্যাম্পিয়ন রংপুর

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ১২:৪৫:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ২০০ জন দেখেছেন

স্পোর্টস ডেস্ক : 

কয়েক ঘণ্টা আগেও ফাইনাল খেলা নিয়েই সংশয় ছিল রংপুর রাইডার্সের। দলের সেরা ব্যাটার সৌম্য সরকারকে যেভাবেই হোক ফাইনালে চেয়েছিল রংপুর। সব বাধা পেরিয়ে, শঙ্কা কাটিয়ে মাঠে নেমে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়ে তিনি দেখালেন, কেন দলটার তাকে ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তার তাণ্ডবীয় ইনিংসে রংপুরকে এনে দিলেন বিশাল স্কোর। আসর জুড়ে ভালো ছন্দে থাকা বোলাররা মাঝে কিছুটা চাপে পড়লেও সুনিপুন দক্ষতায় তা ডিফেন্ড করলেন। আর তাতে ভর করে গ্লোবাল সুপার লিগের (জিএসএল) প্রথম আসরের শিরোপা ঘরে তুলল নুরুল হাসান সোহানের দল।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে গায়ানায় গ্লোবাল সুপার লিগের ফাইনালে ভিক্টোরিয়াকে ৫৬ রানে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স। শুরুতে ব্যাট করে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭৮ রান করে রংপুর। ওই রান তাড়া করতে নেমে ১২২ রানে অলআউট হয় ভিক্টোরিয়া। ২০১৭ সালে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আবার শিরোপার স্বাদ পেল বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। এবার জিতেছে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হওয়া গ্লোবাল সুপার লিগের শিরোপা, পাঁচ দেশের পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজি অংশ নিয়েছে টুর্নামেন্টটিতে।

রান তাড়ায় ভিক্টোরিয়া যদিও শুরুতে একটু লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিল। উদ্বোধনী জুটিতে ২৭ রান আসে ৩.২ ওভারে। ব্লেক ম্যাকডোনাল্ড ১৫ বলে ১৬ করে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে ২৭ বলে ৩৮ রানের জুটি গড়েন জো ক্লার্ক ও সাঞ্জায় কৃষ্ণমুর্তি।

৭ ওভারে ভিক্টোরিয়ার রান ছিল ১ উইকেটে ৬৫। সাঞ্জায়কে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন হারমিত সিং। এরপর ক্রমে ভেঙে পড়ে ভিক্টোরিয়ার ইনিংসও। রিশাদ হোসেনকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন জোনাথান ওয়েলস, হারমিতকে চার মারার পরের বলে ছক্কার চেষ্টায় টেইলের দারুণ ক্যাচে ফেরেন স্কট এডওয়ার্ডস।

এরপর ক্লার্ক (২২ বলে ৪০) যখন স্টাম্পড হলেন শেখ মেহেদি হাসানের বলে, ভিক্টোরিয়ার শেষ আশাও তখন শেষ। দুই ওপেনার ছাড়া ভিক্টোরিয়ার আর কোনো ব্যাটসম্যন ১৫ রানও ছুঁতে পারেননি।

রংপুরের হয়ে হারমিত সিং নেন ১৯ রানে ৩ উইকেট। সাইফ হাসান ও শেখ মাহেদি হাসানও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ভিক্টোরিয়া শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে বড় ব্যবধানে জয় পায় রংপুর।

টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেই রংপুরের শুরুটা ছিল মন্থর। স্টিভেন টেইলরকে মেডেন ওভার করে ম্যাচ শুরু করেন ডমিনিক ড্রেকস। টেইলের ব্যাটেই ম্যাচের প্রথম বাউন্ডারি আসে তৃতীয় ওভারে। পঞ্চম ওভারে ম্যাক্স বার্থিসেলকে ছক্কা মারেন টেইলর। ষষ্ঠ ওভারে দুজনের ব্যাট থেকে আসে তিনটি চার।

তার পরও ৭ ওভার শেষে রান ছিল কেবল ৪৫। সৌম্য তখন খেলছেন ১৩ বলে ৮ রান করে, টেইলর ২৯ বলে ৩৩ রানে। এরপর সৌম্যর ব্যাট উত্তাল হয় ওঠে। চার-ছক্কার স্রোতে পঞ্চাশে পৌঁছে যান তিনি টেইলরের আগেই! ৩৩ বলে আসে তার ফিফটি। ওই ওভারে ছক্কায় ফিফটিতে পার রাখেন টেইলর ৪৪ বলে।

পরের ওভারে টানা দুটি ছক্কা মারার পর আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় আউট হয়ে যান টেইলর। এরপর রান বাড়ানোর কাজটি মূলত সৌম্যই করেন। রংপুরের পরের দিকর ব্যাটসম্যানরা কেউ সময়ের দাবি মেটাতে না পারায় আরও বাড়েনি দলের রান।

ক্লান্তির কারণে শেষ চার ওভারে সৌম্যও ততটা দ্রুততায় রান তুলতে পারেননি। ১৬ ওভার শেষে তার রান ছিল ৪৩ বলে ৭২। পরের ১১ বলে করতে পারেন মাত্র ১৪ রান। শেষ চার ওভারে রংপুর যোগ করে মোটে ২৭ রান।

সেটিও শেষ ওভারে সৌম্য দুটি চার মারতে পারায়। শেষ বলে তিন রান নিতে পারলে টি-টোয়েন্টি নিজের আগে সেরা ৮৮ রানকে ছাড়িয়ে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু স্লোয়ার ডেলিভারিটি লাগাতে পারেননি ব্যাটেই।

তবে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান তুলে দল তখন আত্মবিশ্বাসী। সেটির প্রতিফলনই পড়ে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে।

৫ দলের গ্লোবাল সুপার লিগে লিগ পর্বে চার ম্যাচের প্রথম দুটিতেই হেরেছিল রংপুর রাইডার্স। নুরুল হাসানের নেতৃত্বাধীন দলটিকে ভিক্টোরিয়াও হারিয়ে দিয়েছিল ১০ রানে। তবে শেষ দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স ও পাকিস্তানের লাহোর কালান্দার্সকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে শেষ পর্যন্ত ট্রফিতেই হাত রেখেছে রংপুর।

সৌম্য ফাইনালের ম্যাচ-সেরা তো বটেই, ১৪২.৪২ স্ট্রাইক রেটে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১৮৮ রান তুলে ম্যান অব দা টুর্নামেন্টও তিনিই।

প্রথম গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম শিরোপা জয়ের গৌরবের পাশাপাশি রংপুরের অর্থযোগও কম নয়। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ৫ লাখ ডলার প্রাইজমানি পেয়েছে তারা। প্রাথমিক পর্বের দুটি জয়ের জন্য আরও ৫০ হাজার ডলার তো আছেই।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান সিইসির

সৌম্যের নৈপুণ্যে গ্লোবাল লিগে চ্যাম্পিয়ন রংপুর

প্রকাশের সময় : ১২:৪৫:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

স্পোর্টস ডেস্ক : 

কয়েক ঘণ্টা আগেও ফাইনাল খেলা নিয়েই সংশয় ছিল রংপুর রাইডার্সের। দলের সেরা ব্যাটার সৌম্য সরকারকে যেভাবেই হোক ফাইনালে চেয়েছিল রংপুর। সব বাধা পেরিয়ে, শঙ্কা কাটিয়ে মাঠে নেমে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়ে তিনি দেখালেন, কেন দলটার তাকে ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তার তাণ্ডবীয় ইনিংসে রংপুরকে এনে দিলেন বিশাল স্কোর। আসর জুড়ে ভালো ছন্দে থাকা বোলাররা মাঝে কিছুটা চাপে পড়লেও সুনিপুন দক্ষতায় তা ডিফেন্ড করলেন। আর তাতে ভর করে গ্লোবাল সুপার লিগের (জিএসএল) প্রথম আসরের শিরোপা ঘরে তুলল নুরুল হাসান সোহানের দল।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে গায়ানায় গ্লোবাল সুপার লিগের ফাইনালে ভিক্টোরিয়াকে ৫৬ রানে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স। শুরুতে ব্যাট করে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭৮ রান করে রংপুর। ওই রান তাড়া করতে নেমে ১২২ রানে অলআউট হয় ভিক্টোরিয়া। ২০১৭ সালে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আবার শিরোপার স্বাদ পেল বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। এবার জিতেছে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হওয়া গ্লোবাল সুপার লিগের শিরোপা, পাঁচ দেশের পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজি অংশ নিয়েছে টুর্নামেন্টটিতে।

রান তাড়ায় ভিক্টোরিয়া যদিও শুরুতে একটু লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিল। উদ্বোধনী জুটিতে ২৭ রান আসে ৩.২ ওভারে। ব্লেক ম্যাকডোনাল্ড ১৫ বলে ১৬ করে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে ২৭ বলে ৩৮ রানের জুটি গড়েন জো ক্লার্ক ও সাঞ্জায় কৃষ্ণমুর্তি।

৭ ওভারে ভিক্টোরিয়ার রান ছিল ১ উইকেটে ৬৫। সাঞ্জায়কে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন হারমিত সিং। এরপর ক্রমে ভেঙে পড়ে ভিক্টোরিয়ার ইনিংসও। রিশাদ হোসেনকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন জোনাথান ওয়েলস, হারমিতকে চার মারার পরের বলে ছক্কার চেষ্টায় টেইলের দারুণ ক্যাচে ফেরেন স্কট এডওয়ার্ডস।

এরপর ক্লার্ক (২২ বলে ৪০) যখন স্টাম্পড হলেন শেখ মেহেদি হাসানের বলে, ভিক্টোরিয়ার শেষ আশাও তখন শেষ। দুই ওপেনার ছাড়া ভিক্টোরিয়ার আর কোনো ব্যাটসম্যন ১৫ রানও ছুঁতে পারেননি।

রংপুরের হয়ে হারমিত সিং নেন ১৯ রানে ৩ উইকেট। সাইফ হাসান ও শেখ মাহেদি হাসানও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ভিক্টোরিয়া শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে বড় ব্যবধানে জয় পায় রংপুর।

টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেই রংপুরের শুরুটা ছিল মন্থর। স্টিভেন টেইলরকে মেডেন ওভার করে ম্যাচ শুরু করেন ডমিনিক ড্রেকস। টেইলের ব্যাটেই ম্যাচের প্রথম বাউন্ডারি আসে তৃতীয় ওভারে। পঞ্চম ওভারে ম্যাক্স বার্থিসেলকে ছক্কা মারেন টেইলর। ষষ্ঠ ওভারে দুজনের ব্যাট থেকে আসে তিনটি চার।

তার পরও ৭ ওভার শেষে রান ছিল কেবল ৪৫। সৌম্য তখন খেলছেন ১৩ বলে ৮ রান করে, টেইলর ২৯ বলে ৩৩ রানে। এরপর সৌম্যর ব্যাট উত্তাল হয় ওঠে। চার-ছক্কার স্রোতে পঞ্চাশে পৌঁছে যান তিনি টেইলরের আগেই! ৩৩ বলে আসে তার ফিফটি। ওই ওভারে ছক্কায় ফিফটিতে পার রাখেন টেইলর ৪৪ বলে।

পরের ওভারে টানা দুটি ছক্কা মারার পর আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় আউট হয়ে যান টেইলর। এরপর রান বাড়ানোর কাজটি মূলত সৌম্যই করেন। রংপুরের পরের দিকর ব্যাটসম্যানরা কেউ সময়ের দাবি মেটাতে না পারায় আরও বাড়েনি দলের রান।

ক্লান্তির কারণে শেষ চার ওভারে সৌম্যও ততটা দ্রুততায় রান তুলতে পারেননি। ১৬ ওভার শেষে তার রান ছিল ৪৩ বলে ৭২। পরের ১১ বলে করতে পারেন মাত্র ১৪ রান। শেষ চার ওভারে রংপুর যোগ করে মোটে ২৭ রান।

সেটিও শেষ ওভারে সৌম্য দুটি চার মারতে পারায়। শেষ বলে তিন রান নিতে পারলে টি-টোয়েন্টি নিজের আগে সেরা ৮৮ রানকে ছাড়িয়ে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু স্লোয়ার ডেলিভারিটি লাগাতে পারেননি ব্যাটেই।

তবে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান তুলে দল তখন আত্মবিশ্বাসী। সেটির প্রতিফলনই পড়ে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে।

৫ দলের গ্লোবাল সুপার লিগে লিগ পর্বে চার ম্যাচের প্রথম দুটিতেই হেরেছিল রংপুর রাইডার্স। নুরুল হাসানের নেতৃত্বাধীন দলটিকে ভিক্টোরিয়াও হারিয়ে দিয়েছিল ১০ রানে। তবে শেষ দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স ও পাকিস্তানের লাহোর কালান্দার্সকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে শেষ পর্যন্ত ট্রফিতেই হাত রেখেছে রংপুর।

সৌম্য ফাইনালের ম্যাচ-সেরা তো বটেই, ১৪২.৪২ স্ট্রাইক রেটে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১৮৮ রান তুলে ম্যান অব দা টুর্নামেন্টও তিনিই।

প্রথম গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম শিরোপা জয়ের গৌরবের পাশাপাশি রংপুরের অর্থযোগও কম নয়। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ৫ লাখ ডলার প্রাইজমানি পেয়েছে তারা। প্রাথমিক পর্বের দুটি জয়ের জন্য আরও ৫০ হাজার ডলার তো আছেই।