নিজস্ব প্রতিবেদক :
ব্যাংকে রাখা গ্রাহকের আমানতের টাকা নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা। সবাই নিজ নিজ আমানতের টাকা ফেরত পাবেন বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী ও সাঈদা খানম।
হুসনে আরা শিখা বলেন, কিছু গ্রাহকের আমানতের টাকা উত্তোলনের প্রয়োজন হচ্ছে না। তবুও তারা টাকা তুলতে ব্যাংকে যাচ্ছেন। এতে সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। একসঙ্গে অনেকে টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংকই টাকা দিতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মুখপাত্র বলেন, ব্যাংকে গ্রাহকের আমানত নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। একযোগে অধিক গ্রাহক টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংকই টিকবে না, টাকা দিতে পারবে না। গ্রাহকদের উদ্দেশে বলবো, অহেতুক আতঙ্কের কিছু নেই। গণমাধ্যমকেও গ্রাহকদের আতঙ্ক কাটাতে এ বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৭টি ব্যাংককে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দিয়েছে ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
গঠিত টাস্কফোর্স কার্যকর কিছু করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, একটি টাস্কফোর্স ব্যাংকিং সংস্কারে কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে দ্বিতীয় টাস্কফোর্স কাজ করছে। তৃতীয়টা পাচার করা টাকা ফেরত আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এখানে বিভিন্ন দেশের আইনজীবী ও কনসালটেন্ট নিয়োগের কাজ চলছে।
পাচার করা অর্থ ফরমাল চ্যানেলে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করবে জানিয়ে হুসনে আরা শিখা বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হলে সেটা তদন্ত করা কঠিন। বিএফআইইউ এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তবে আইন অনুযায়ী এসব বিষয়ে বিএফআইইউ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য শেয়ার করে না।
বিভিন্ন ব্যাংকের অনিয়মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেকে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা বা আগামীতে হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ লাগে, কিন্তু এমন অভিযোগ এখনো আসেনি। যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নীতি সুদহার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, প্রথম পলিসি রেট বাড়ানোর পর মূল্যস্ফীতি কমে এসেছিল। আগামী ৬ মাস এই ধারাবাহিকতা থাকলে মূল্যস্ফীতি এক ডিজিটে নেমে আসবে। ইতোমধ্যে অনেক দেশে এটা কাজ করেছে। আমাদের দেশেও কাজ হবে।
সম্প্রতি সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসা সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। প্রবাসীদের বন্ডে বিনিয়োগ সহজ করা হয়েছে ফলে অনেক প্রবাসী রেমিট্যান্সের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করছে। এটা ভালো দিক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অভিযোগ আসে। আমাদের এইচআর (মানবসম্পদ) বিভাগ সেটা খতিয়ে দেখে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গর্ভনর বরাবর না এলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের অনিয়ম নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে সেটা তদন্ত করা হচ্ছে। এখন যেহুতু আবার বিষয়টি উঠেছে আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নেবো। আগামী সভায় আপনারা এ বিষয়ে জানতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমরা ১১টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করেছি। এগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমাদের মনোযোগ এখন ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর দিকে।