আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ১৫০ বছরের পুরনো ট্রাম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। শহরে ট্রাম পরিষেবা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা চলছে। এরই জের ধরে কলকাতার রাস্তায় ট্রাম সেবা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ট্রাম সেবা। পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তীর এমন ঘোষণার পর কলকাতার ট্রাম প্রেমীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিষ চক্রবর্তী সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন, ট্রামের কারণে কলকাতায় জ্যামের সৃষ্টি হয়। কারণ এটি যোগাযোগের অন্যান্য বাহনের তুলনায় অনেকটাই ধীরগতির। এজন্য এটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তবে কলকাতায় বেড়াতে আসা মানুষরা যেন ট্রাম দেখতে পারেন এবং ভ্রমণ করতে পারেন সেজন্য ময়দান থেকে এসপ্লান্ডে পর্যন্ত ট্রাম চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পরিবহনমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর কলকাতার ট্রাম প্রেমীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তারা বলেছেন, ট্রামকে আধুনিকায়ন না করে কেন এটি বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদের ভাষ্য, পুরো ভারতে শুধুমাত্র কলকাতায় ট্রাম রয়েছে। তাই এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে।
ট্রাম নিয়ে কলকাতার হাইকোর্টে একটি রিট চলছে। গত বছরের ডিসেম্বরে আদালত নির্দেশ দেন কলকাতায় ট্রাম বন্ধ করা যাবে না। এটি সংস্কার করে চালু রাখতে হবে।
আদালতে চলা এই রিটের নতুন শুনানিতে ট্রাফিক জ্যামের বিষয় এবং একটি রুটে ট্রাম চলাচল চালু রাখার বিষয়টি জানানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিষ চক্রবর্তী।
তিনি আরও জানিয়েছেন, কলকাতার শহরটি যত জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে সেটির মাত্র ৬ শতাংশ হলো রাস্তা। যা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় প্রভাব ফেলেছে। তা সত্ত্বেও মানুষ যেন ঠিক সময়ে অফিসে-কাজে যেতে পারেন সেজন্য ট্রাফিক পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। কিন্তু ট্রামের কারণে তাদের এ প্রচেষ্টা ব্যহত হচ্ছে।
কলকাতার ট্রামের পরিধি আগেই কমে এসেছে। এক সময়ের জনপ্রিয় এ বাহনটি এখন ধুঁকে ধুঁকে চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি রুটে ট্রাম চলাচল অব্যাহত ছিল। যদি সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় তাহলে শুধুমাত্র একটি রুটেই দেখা যাবে এ বাহনটিকে।
কলকাতাবাসীর সঙ্গে অনেকটা নাড়ির টান রয়েছে ট্রামের। শহরে মাটির নিচের মেট্রোরেল আধুনিকতার প্রতীক হলে ট্রাম হলো ঐতিহ্যের প্রতীক। কলকাতায় ট্রাম প্রথম চালানোর চেষ্টা হয়েছিল সেই ব্রিটিশ আমলে।
১৮৭৩ সালে কলকাতার আর্মেনিয়ান ঘাট (বর্তমান বাবুঘাট) থেকে শিয়ালদহ ট্রাম পর্যন্ত চালানো হয়। সেসময় ট্রামে যথেষ্ট লোক উঠতো না বলে সাত বছর পর তখনকার ব্রিটিশ সরকার এই সেবা বন্ধ করে দেয়। তখন অবশ্য কলকাতায় ট্রাম টানতো ঘোড়ায়।
১৯০০ সালে ঘোড়ার বদলে প্রথম বিদুতের মাধ্যমে ট্রাম চালানোর পরিকল্পনা করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় ১৯০২ সালে। সে বছর ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চলে।
এরপর ধীরে ধীরে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতাজুড়ে শুরু হয় বিদ্যুৎচালিত ট্রামের যাত্রা। কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতার বাসিন্দা ছাড়াও শহরে আসা বিদেশি পর্যটকদেরও পছন্দের পরিবহন হয়ে ওঠে ট্রাম। কিন্তু আজ সেই ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে। কিছুদিন পর হয়তো আর ট্রামে চড়া হবে না। ট্রাম দেখতে হলে হয়তো জাদুঘরেই যেতে হবে মানুষদের।