আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষ অবস্থান হারিয়েছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ও টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। এই তালিকায় শীর্ষে উঠেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সাইট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস।
সোমবার (৪ মার্চ) টেসলার শেয়ারের ৭ দশমিক ২ শতাংশ দরপতন হয়। ব্লুমবার্গের হিসাব অনুযায়ী, এর জেরে ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১৯৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে। অন্যদিকে গতকাল বেজোসের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ২০০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্সে সোমবার (৪ মার্চ) এই রদবদল হয়েছে। জানা গেছে, নয় মাসের বেশি সময় পর ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষ অবস্থান হারালেন ইলন মাস্ক। আর প্রথমবারের মতো এই তালিকায় সবার ওপরে বেজোসের নাম উঠল।
৯ মাসেরও বেশি সময় পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষ অবস্থান হারালেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সাইট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের কাছে। আর প্রথমবারের মতো এই তালিকায় সবার ওপরে উঠে এলো বেজোসের নাম।
২০২১ সাল থেকে ইলন মাস্ক বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ওপরের অবস্থানে ছিলেন। এই প্রথমবারের মতো অবস্থান হারালেন তিনি।
টেসলা, টুইটার ছাড়াও রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স ও নিউরালিংকের প্রধান হিসেবে রয়েছেন ইলন মাস্ক। নিউরালিংক স্টার্টআপ মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য অতি উচ্চ ব্যান্ডউইডথের ব্রেন মেশিন ইন্টারফেস তৈরি করছে।
বেজোসের নেতৃত্বে অ্যামাজন এখন ই-কমার্সের পাশাপাশি ক্লাউড কম্পিউটিং, অনলাইন বিজ্ঞাপন, ডিজিটাল স্ট্রিমিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবসাও পরিচালনা করছে। মহাকাশে মানুষবাহী রকেট পাঠানো প্রতিষ্ঠান ‘ব্লু অরিজিন’–এর প্রতিষ্ঠাতাও জেফ বেজোস।
এলভিএমএইচের সিইও আর্নল্ট গত চার দশক ধরে বিলাসবহুল ব্রান্ডের সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন। তার সংস্থার অধীনে রয়েছে লুই ভুতোঁ, ডিওর, সেফোরা ট্যাগ, ডোম পেরিনন, ফেন্ডি, টিফিন অ্যান্ড কোং, মার্ক জেকব, ফেন্ডি ও সেলিনের মতো ব্রান্ড। গত এপ্রিলেই এলভিএমএইচ প্রথম ইউরোপিয়ান কোম্পানি হয়ে উঠেছিল, যার মার্কেট ভ্যালু বা ৫০০ বিলিয়ন বা ৫০ হাজার কোটি ডলার পার করেছে।
এদিকে চলতি বছরের জানয়ারিতে এক প্রতিবেদনে বলা হয়,গত চার বছরে বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের মোট সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। অথচ একই সময়ে বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ আরও বেশি গরিব হয়েছে। আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অক্সফামের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
একই সময়ের মধ্যে, দরিদ্রতম চার ৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন বা ৪৭৭ কোটি মানুষের (বিশ্ব জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ) মোট সম্পদ ০ দশমিক ২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। মূল্যস্ফীতি, যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের কারণে তাদের দারিদ্র্য আরও বেড়েছে। অক্সফাম বলছে, এই দারিদ্র্য দূর করতে ২৩০ বছরের মতো সময় লেগে যাবে।
অক্সফাম জানিয়েছে, সামগ্রিকভাবে বিশ্বের সব বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এবং তাদের সম্পদ বৃদ্ধির হার বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি হারের চেয়েও তিন গুণ বেশি।
ইনইকুয়ালিটি ইনকরপোরেশনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের ১০টি বড় করপোরেশনের মধ্যে ৭টিরই বিলিয়নেয়ার সিইও কিংবা শেয়ারহোল্ডার রয়েছে। যদিও বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান স্থবির রয়েছে। বিশ্বের ৫২টি দেশে প্রায় ৮০ কোটি শ্রমিকের গড় প্রকৃত মজুরি কমেছে। এই শ্রমিকরা গত দুই বছরে সম্মিলিতভাবে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার হারিয়েছে।