আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাতে শুরু করেছে।
ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) আগামী নির্বাচনের তহবিল সংগ্রহের এক অনুষ্ঠানে দাতাদের সামনে দেওয়া বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন।
৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ শুরু পর বাইডেন দেশটির প্রতি অটল সমর্থন দিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের নিরাপত্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারে, কিন্তু এই মুহূর্তে দেশটির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি আছে। ইসরায়েলের ইউরোপীয় ইউনিয়ন আছে, ইউরোপ আছে, বিশ্বের বেশিরভাগই তাদের পক্ষে রয়েছে। ওয়াশিংটনে বাইডেন ২০২৪ সালের পুনর্র্নিবাচনের প্রচারে দাতাদের বলেছিলেন। কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন, ‘নির্বিচারে বোমা হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল সেই সমর্থন হারাতে শুরু করেছে।
বাইডেন অবশ্য বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ নেই এবং ইসরায়েলের সেটা নেওয়ার অধিকার রয়েছে।’ মার্কিন নেতা ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে লাগাম টেনে ধরার জন্য তার নিজের ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতর থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে রয়েছেন। জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তারাও ইসরায়েলের সামরিক প্রতিক্রিয়ায় ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সেক্রেটারি অফ স্টেট এন্টনি ব্লিঙ্কেন মাত্র কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবতার মধ্যে একটি ফাঁক রয়েছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল স্থল যুদ্ধের পাশাপাশি হামাসকে ধ্বংস এবং জিম্মি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘ওয়াশিংটন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ অবরুদ্ধ করে রেখেছে।’ তবে বাইডেনের মন্তব্য এই জুটির মতবিরোধের দিকে ইঙ্গিত করছে।
বাইডেন বলেছন, নেতানিয়াহুকে তাঁর সরকার পরিবর্তন করতে হবে, পাশাপাশি একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়ে অবস্থান নিতে হবে। যে বিষয়টি শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা যুদ্ধ পরবর্তী ব্যবস্থা হিসেবে দেখছেন। কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ব্যবস্থার পক্ষে।
বাইডেন আরো বলেন, ‘ইসরায়েলের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে রক্ষণশীল সরকার ( নেতানিয়াহুর সরকার)। তাঁর ( নেতানিয়াহু) জন্য ইসরায়েলের এই সরকার বিষয়টি কঠিন করে তুলছে। তারা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান চায় না।’ এদিকে গাজায় হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ১৮ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। হামাসের হামরায় মৃত্য হয়েছে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলির।
এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। বাংলাদেশের সময় বুধবার ভোরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রস্তাবটি পাস হয়। মানবিক দিক বিবেচনায় গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে মৌরিতানিয়া ও মিসর এই প্রস্তাব তুলেছিল। বাংলাদেশ ও ভারতসহ ১৫৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসহ ১০টি দেশ ভোট দিয়েছে বিপক্ষে। আর ভোটদানে বিরত ছিল ২৩টি দেশ। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান নৃসংশ হামলা থামানোর আহ্বান জানিয়ে গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তুলেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রস্তাবটিতে ভেটো দেয় নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র।
গাজায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটির ১৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও ২৩ লাখ বাসিন্দার ৮০ ভাগই উদ্বাস্তু হয়েছেন।