নিজস্ব প্রতিবেদক :
পোশাক কারখানায় শ্রমিক আন্দোলনে স্পষ্টত বিএনপি ও এর দোসরদের কালো হাত আছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উসকানি ও গুজবে নিরীহ শ্রমিকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় এ আহ্বান জানান তিনি। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এ যৌথসভা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শ্রমিকদের অধিকাংশ দাবি সমাধান হয়ে গেছে। বাকিটা সমাধানে শ্রমিকেরা এগিয়ে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি মনিটরিং করছেন।
শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকরা নিজেদের ক্ষতি নিজেরা করবে না বলে আমরা আশা করি। শ্রমিকরা বিভ্রান্ত হলে ক্ষতিটা দেশের এবং শ্রমিকের নিজের হবে। গুজব রটনাকারীদের ক্ষতি হবে না।
পোশাক শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে বিএনপির উসকানি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইন্ধন তো আছেই। এখানে পরিষ্কারভাবে বিএনপি এবং তার দোসরদের কালো হাত বিস্তৃত হয়ে আছে। তারাই উসকানি দিচ্ছে, তারাই গুজব সৃষ্টি করছে। উসকানি আর গুজব সৃষ্টি করে তারা নিরীহ শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করছে। কোথায় ছিল শ্রমিকদের বেতন ৮০০ টাকা। আর সেই বেতন এখন ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এখন দেশের অবস্থাও বুঝতে হবে। নেত্রী গতকাল পরিষ্কার করে সেটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে বিজিএমই-এর দু’একজন নেতাও ছিলেন। তারা শুনেছেন। এ ব্যাপারে বেশিরভাগ সমাধান হয়ে গেছে। তবে কোনাবাড়ি ও আশুলিয়া, এই দুইটা জায়গায় কিছু সমস্যা আছে। আমরা মনে করি, আমাদের শ্রমিকরা বর্তমান বাস্তবতার বিষয়গুলো উপলব্ধি করে সমাধানে এগিয়ে আসবেন।
যৌথ সভায় সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধীদের চোরাগোপ্তা হামলা প্রতিরোধ করতে হবে এবং নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভিন্নমতের প্রতিকূল স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছি আমরা। আজকে বিভিন্নভাবে সরকারবিরোধী চক্রান্ত চলছে, দেশে-বিদেশে সরকারবিরোধী তৎপরতা চলছে। ২৮ তারিখে তাদের আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এখন স্বাভাবিক আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর তারা অস্বাভাবিক পথে চলতে শুরু করেছে। তাদের পুরোনো রাজনীতির অভ্যাস অগ্নি-সন্ত্রাসের উপাদান যুক্ত করেছে। এসব করে তারা শেখ হাসিনাকে হটানোর জন্য সবশেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে পারছে না, চোরাগোপ্তা হামলা করছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের আগুন সন্ত্রাস প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা তাদের পুরনো অভ্যাস ছাড়তে পারেনি। আজকে আবারও তারা গাড়ি পোড়ানো শুরু করেছে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সামনে কঠিন পথ। আপনাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে, যেসব জায়গায় তারা হামলা চালায়, সেসব জায়গায় আপনাদের উপস্থিতি জোরদার করতে হবে। প্রস্তুতি নিয়ে, জায়গা চিহ্নিত করে অবস্থান নিয়ে সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সামনে আরও কঠিন পথ আমাদের পাড়ি দিতে হবে। সেভাবে নিজেদের প্রস্তুত করুন। এটা শুধু নির্বাচনের জন্য না, এটা আদর্শের লড়াই। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে পক্ষের শক্তির লড়াই, আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। উন্নয়ন আর অর্জনের জন্য শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। এই যুদ্ধ জয়ের প্রতিজ্ঞা নিয়েই নেমেছে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা। এই সংকট আস্তে আস্তে কেটে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হাতে সময় একেবারেই কম। নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হলে আমাদের হাতে সময় একেবারেই কম। নির্বাচনের আগে আমাদের দুইটা কাজ। এর মধ্যে একটা হলো নির্বাচনের প্রস্তুতি। আরেকটা কাজ হলো বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলের আন্দোলনের নামে চোরাগোপ্তা হামলা মোকাবিলা এবং নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখা।
এ সময় ‘সামনের দিনগুলোতে আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে’ বলে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান থাকার কথা বলেন। যৌথসভায় ‘এ লড়াই আদর্শিক লড়াই। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। এ লড়াই আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। এ লড়াই আমাদের উন্নয়ন ও অর্জনের লড়াই। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বিশ্ব রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে সেতুমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বই আজ অগ্নিগর্ভ এক পরিস্থিতিতে রয়েছে। সেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। শেখ হাসিনার মতো একজন নেতা বাংলাদেশে আছেন বলেই আজ আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সাহস পাচ্ছি।
যৌথস ভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুরসহ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ।