নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭ নভেম্বর বিএনপির সেই জাতীয় সংহতি দিবসের কর্মসূচি তারা স্থগিত করেছে। তাদের নেতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিতে যায়নি। বিএনপি কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছে। এই কাপুরুষদের রাজনীতি করা মানায় না।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ৭ নভেম্বর এটা কাদের জাতীয় দিবস? এদিন বিএনপির জাতীয় দিবস, উত্থানের দিন। নিজেদের জাতীয় দিবসে যারা কর্মসূচি স্থগিত করে, তাদের মতো ভিতু ও কাপুরুষ হয়? এই কাপুরুষদের রাজনীতি মানায়? তাদের আন্দোলনের সাহস এখানেই তো দেখা গেলো। মানুষ কেন তাদের দল করবে? এত ভয় একটা রাজনৈতিক দলের। আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করছে। বিএনপি নিজেই নিজেদের নিশ্চিহ্ন করছে। বিএনপি একটা ভুয়া দল। তাদের আন্দোলন ভুয়া।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭ নভেম্বর আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যার দিন পালন করে। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ রক্তাক্ত কলঙ্কজনক দিনগুলোর একটি। এদিন সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের নামে কর্নেল তাহের ক্যান্টনমেন্টে বন্দি জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেন। ফলাফল, জিয়া কর্নেল তাহেরকে হত্যা করেন। কত সৈনিক, কত মুক্তিযোদ্ধা সৈনিককে হত্যা করেছেন জিয়াউর রহমান। তিনি সকালে নাশতা করতেন এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফাঁসির আদেশ দিতেন।
তিনি বলেন, আজ এরা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতির ওপর চেপে বসেতে চায়। জিয়াউর রহমানই এ দেশে হত্যা-কুর রাজনীতি শুরু করেছিলেন। সেই ধারা খালেদা জিয়া ধরে রেখেছেন। তারা এখনও হত্যার রাজনীতি করছে। জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরিরা আজও বাংলাদেশে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বহন করে চলেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিকে তারা কলুষিত করেছে। খালেদা জিয়া-তারেক রহমান আগুনসন্ত্রাসের সূচনা করেছে। রক্তের বন্যা তারা সারা বাংলাদেশে বইয়ে দিয়েছিল। এখন কোথায়? বাড়াবাড়ি কই গেলো?
তিনি বলেন, ২৮ তারিখ (অক্টোবর) চলে গেল। আ-হা-রে কত স্বপ্ন, আমীর খসরু ২৮ তারিখে কর্ণফুলীতে ফেলে দেবেন, সেই ২৮ তারিখেই শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে যাওয়া টানেল উদ্বোধন করেছেন। এখন কোথায়? সব পালিয়েছে। নয়াপল্টনে দাঁড়িয়ে তারা বলেন, আওয়ামী লীগ নাকি পালাচ্ছে, শেখ হাসিনা পালাচ্ছে। শেখ হাসিনা এখন সৌদি আরবে হজ করছেন। আপনারা কে, কোথায়? কেন আজ কারাগারে? যারা কারাগারে, তারা দায় অস্বীকার করতে পারবেন না।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সঙ্গে মারামারি বাধিয়ে, একজন পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা করে, পুলিশের ওপর হামলা করে…, সেই সময় মির্জা ফখরুল ভাবলেন, আরে ঘটনা তো খারাপ। তখনই মির্জা ফখরুল সাহেব লাফ দিয়ে নিচে নেমে গেলেন। এদিকে তাকান, ওদিকে তাকান; গয়েশ্বর বাবু নাই। ওদিকে তাকান, আমীর খসরু নাই। গেটের ভেতর যত নেতা, নোমান সাহেবও নাই। বেচারা দিশেহারা হয়ে দৌড় যে দিছে, ডেমরার সালাউদ্দিনের দৌড়ের চেয়েও দ্রুত। হ্যান্ড মাইকে কর্মসূচি ঘোষণা করলেন, তখন পুরো স্টেজ ফাঁকা। ২৮ তারিখ (অক্টোবর) শেখ হাসিনার পতন দেখলেন, আর আপনাদের স্টেজেরই পতন হয়ে গেল। খবর নাই, পালায় অলিগলিতে, ঢাকা শহরের কোনো গলি দিয়ে ঢুকা যায় না, তারা যেভাবে পালাচ্ছে। এখানে পালায়, ওখানে পালায়, যার ঘরে গিয়ে পালায় সে বলে আমি তো আওয়ামী লীগ করি। এ রকম ঘটনা অনেক ঘটেছে।
একটি বাস পোড়াতে পারলে তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হবে— বিএনপির এমন ঘোষণার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘আগুন দিয়ে ফোন দিলেই মোবাইলে তিন হাজার টাকা চলে যাবে। এখন আবার সেটা ডাবল হয়েছে। কারণ, বেশকিছু গাড়ি পুড়িয়েছে আবার ধরাও পড়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা করতে তাদের নেতারাই শিখিয়ে দিয়েছে।
গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি নিজেই বলেছেন যে, আমি খেয়াল রাখব। অপরাধী ছাড়া কোনো নিরীহ লোক যাতে ধরা না পড়ে। এতে বদনাম হয়। এ বদনাম আমরা ঘাড়ে নেব কেন? অপরাধী যারা তাদের শায়েস্তা করতে হবে।
কোন ইউনিয়ন, কোন দেশ বিবৃতি দিল তাতে কিছু আসে যায় না— উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার দেশের আইনে, আমার দেশের অপরাধীকে আমি বিচার করতে পারব না, এটা কোন গণতন্ত্র? কোথা থেকে এল এ আদেশ? আমার দেশের অপরাধী, আমার দেশের খুনি অথচ বিচার করতে পারব না, তাকে জেলে পাঠাতে পারব না…। আদালত আছে, সে নিরাপদ হলে আদালত থেকে মুক্তি নেবে। আমাদের স্বাধীন বিচারব্যবস্থা আছে।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বলেছিল, শেখ হাসিনা পালাচ্ছেন। অথচ আপনারা কে কোথায় এখন? কেউ কারাগারে। কেউ পালিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে হটাবেন? শেখ হাসিনাকে হটাতে গেলে আপনারাই হটে যাবেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।