Dhaka বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তালেবান শাসনে আফিম চাষ কমেছে ৯৫ শতাংশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গত বছর তালেবান প্রশাসন মাদকের চাষ নিষিদ্ধ করার পর থেকে আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন ৯৫ শতাংশ কমে গেছে। অথচ একসময়ে আফিম পপি সরবরাহে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ ছিল আফগানিস্তান।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে রোববার (৫ নভেম্বর) এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত দপ্তর (ইউএনওডিসি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, সারা দেশে আফিম চাষ ২ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর থেকে কমে ২০২৩ সালে ১০ হাজার ৮০০ হেক্টরেরও কম হয়েছে। আফিমের উৎপাদন আগের বছরের থেকে ৯৫ শতাংশ কমে ৩৩৩ টনে দাঁড়িয়েছে।

২০২২ সালের এপ্রিলে আফগানিস্তানে আফিম চাষের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তালেবান। আফগানিস্তানই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফিম উৎপাদনকারী। এখান থেকেই ইউরোপে ও এশিায়য় হেরোইন যেত।

জাতিসংঘের অফিস অফ ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম(ইউএনওডিসি) এই রিপোর্টটি তৈরি করেছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছরের তুলনায় আফিম চাষ ৯৫ শতাংশের বেশি কম হয়েছে। গত বছর দুই লাখ ৩৩ হাজার হেক্টরে আফিম চাষ হয়েছিল। এবার হয়েছে, ১০ হাজার ৮০০ হেক্টরে।

গতবছর আফিম উৎপাদন হয়েছিল ছয় হাজার দুইশ টন, এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ টন। এই বছর যে চাষ হয়েছে, তার থেকে ২৪ থেকে ৩৮ টন হেরোইন রফতানি করা যাবে। ২০২২ সালে রফতানি করা হয়েছিল ৩৫০ থেকে ৫৮০ টন। গত বছর আফিম চাষ করে কৃষকদের রোজগার হয়েছিল ১৩৬ কোটি ডলার। এবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ডলারে।

যুদ্ধ পরবর্তী আফগানিস্তানে কৃষকদের নাজুক অবস্থার ওপর আবার আফিম চাষে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছিল তাদের ওপর বাড়তি চাপ। কারণ আফগানিস্তানে বেশির ভাগ কৃষকই আফিম চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। আর অবৈধ আফিম রফতানিমূল্য একসময় অন্য সব পণ্যের রফতানিমূল্যকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের কৃষকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, যেখানে বেশিরভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল এবং পপি (আফিম/পোস্ত) রপ্তানির মূল্য কখনও কখনও সমস্ত আনুষ্ঠানিক রপ্তানি পণ্যের মূল্যকে ছাড়িয়ে গেছে। তালেবানের নীতিগত পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে দেশটির অর্থনীতিতে। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশর ইতিমধ্যেই মানবিক সহায়তার প্রয়োজন।

ইউএনওডিসি’র নির্বাহী পরিচালক ঘাডা ওয়ালি একটি বিবৃতিতে বলেছেন, আসন্ন মাসগুলোতে আফগানিস্তানের কৃষকদের আফিম থেকে দূরে থাকার সুযোগ দিতে টেকসই জীবিকার জন্য শক্তিশালী বিনিয়োগের প্রয়োজন। এটি অবৈধ আফিমের বাজারের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি বাস্তব সুযোগ উপস্থাপন করে।

তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা ২০২২ সালের এপ্রিলে মাদকের চাষ নিষিদ্ধ করেছিলেন। এর আগে ২০০০ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে তালেবান আফিম চাষ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আফিম চাষকে ‘অনৈসলামিক’ আখ্যা দিয়ে তৎকালীন তালেবান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর বলেন, কেউ পপি বীজ রোপণ করলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও তহবিল পাওযার কৌশল হিসেবে উদ্যোগ নিয়েছিল তারা।

একসময় আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে ঐতিহ্যগতভাবে দেশের অর্ধেকেরও বেশি আফিম চাষ হতো। কিন্তু, তালেবান নিষেধাজ্ঞার পর আফিম চাষ কমে গেছে। এখন গমকেও বিকল্প হিসাবে ধরা হচ্ছে। পপি চাষে পতনের ফলে একই অঞ্চলে গম চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু লাভের পরিমাণ কম হওয়ায় দরিদ্র কৃষকদের এটি গ্রহণ করার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

জাকসু নির্বাচনের দায়িত্ব ছাড়লেন বিএনপিপন্থি ৩ শিক্ষক

তালেবান শাসনে আফিম চাষ কমেছে ৯৫ শতাংশ

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৪:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গত বছর তালেবান প্রশাসন মাদকের চাষ নিষিদ্ধ করার পর থেকে আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন ৯৫ শতাংশ কমে গেছে। অথচ একসময়ে আফিম পপি সরবরাহে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ ছিল আফগানিস্তান।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে রোববার (৫ নভেম্বর) এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত দপ্তর (ইউএনওডিসি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, সারা দেশে আফিম চাষ ২ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর থেকে কমে ২০২৩ সালে ১০ হাজার ৮০০ হেক্টরেরও কম হয়েছে। আফিমের উৎপাদন আগের বছরের থেকে ৯৫ শতাংশ কমে ৩৩৩ টনে দাঁড়িয়েছে।

২০২২ সালের এপ্রিলে আফগানিস্তানে আফিম চাষের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তালেবান। আফগানিস্তানই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফিম উৎপাদনকারী। এখান থেকেই ইউরোপে ও এশিায়য় হেরোইন যেত।

জাতিসংঘের অফিস অফ ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম(ইউএনওডিসি) এই রিপোর্টটি তৈরি করেছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছরের তুলনায় আফিম চাষ ৯৫ শতাংশের বেশি কম হয়েছে। গত বছর দুই লাখ ৩৩ হাজার হেক্টরে আফিম চাষ হয়েছিল। এবার হয়েছে, ১০ হাজার ৮০০ হেক্টরে।

গতবছর আফিম উৎপাদন হয়েছিল ছয় হাজার দুইশ টন, এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ টন। এই বছর যে চাষ হয়েছে, তার থেকে ২৪ থেকে ৩৮ টন হেরোইন রফতানি করা যাবে। ২০২২ সালে রফতানি করা হয়েছিল ৩৫০ থেকে ৫৮০ টন। গত বছর আফিম চাষ করে কৃষকদের রোজগার হয়েছিল ১৩৬ কোটি ডলার। এবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ডলারে।

যুদ্ধ পরবর্তী আফগানিস্তানে কৃষকদের নাজুক অবস্থার ওপর আবার আফিম চাষে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছিল তাদের ওপর বাড়তি চাপ। কারণ আফগানিস্তানে বেশির ভাগ কৃষকই আফিম চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। আর অবৈধ আফিম রফতানিমূল্য একসময় অন্য সব পণ্যের রফতানিমূল্যকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের কৃষকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, যেখানে বেশিরভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল এবং পপি (আফিম/পোস্ত) রপ্তানির মূল্য কখনও কখনও সমস্ত আনুষ্ঠানিক রপ্তানি পণ্যের মূল্যকে ছাড়িয়ে গেছে। তালেবানের নীতিগত পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে দেশটির অর্থনীতিতে। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশর ইতিমধ্যেই মানবিক সহায়তার প্রয়োজন।

ইউএনওডিসি’র নির্বাহী পরিচালক ঘাডা ওয়ালি একটি বিবৃতিতে বলেছেন, আসন্ন মাসগুলোতে আফগানিস্তানের কৃষকদের আফিম থেকে দূরে থাকার সুযোগ দিতে টেকসই জীবিকার জন্য শক্তিশালী বিনিয়োগের প্রয়োজন। এটি অবৈধ আফিমের বাজারের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি বাস্তব সুযোগ উপস্থাপন করে।

তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা ২০২২ সালের এপ্রিলে মাদকের চাষ নিষিদ্ধ করেছিলেন। এর আগে ২০০০ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে তালেবান আফিম চাষ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আফিম চাষকে ‘অনৈসলামিক’ আখ্যা দিয়ে তৎকালীন তালেবান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর বলেন, কেউ পপি বীজ রোপণ করলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও তহবিল পাওযার কৌশল হিসেবে উদ্যোগ নিয়েছিল তারা।

একসময় আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে ঐতিহ্যগতভাবে দেশের অর্ধেকেরও বেশি আফিম চাষ হতো। কিন্তু, তালেবান নিষেধাজ্ঞার পর আফিম চাষ কমে গেছে। এখন গমকেও বিকল্প হিসাবে ধরা হচ্ছে। পপি চাষে পতনের ফলে একই অঞ্চলে গম চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু লাভের পরিমাণ কম হওয়ায় দরিদ্র কৃষকদের এটি গ্রহণ করার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে হয়।