নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারের উদ্দেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, পুলিশ আর র্যাবের প্রহরায় গুন্ডাবাহিনী দিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় পাহারা দেন। খুব বীরত্ব! আন্দোলন কীভাবে করতে হয়, আন্দোলন কীভাবে ঠেকাতে হয়, আওয়ামী লীগ জানে? পুলিশ ছাড়া আসেন না, রাস্তায় কয় মিনিট টেকেন দেশের মানুষ দেখবে।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সমস্ত রাষ্ট্র প্রশাসনে নিজেদের লোক বসিয়ে লুট পাটের ভাগ বাটোয়ারা দিয়ে পকেটে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ে মনে করেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে পারবেন। আপনারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। আপনারা যদি টিকতে পারেন ইতিহাস মিথ্যা হয়ে যাবে। আজ হোক কাল হোক আপনাদের ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।
কী করতে চায় সরকার আর কী করছে সেটা জনগণকে বুঝতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করল যাতে সমস্ত পুলিশ সদস্যকে জনগণের বিরুদ্ধে এবং বিরোধীদের দমনে কাজে লাগানো যায়। সাংবাদিকদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হলো যাতে পুরো সাংবাদিক সমাজকে বিরোধী দলের আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো যায়।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আজ পুনর্জাগরণের মধ্য দিয়ে আন্দোলন এগিয়ে চলছে। গত ২৮ তারিখ সরকার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নস্যাৎ করেছে। নিজেদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে একটি সমাবেশকে পণ্ড করে দিয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে সমাবেশে নিজেদের এজেন্টদের ঢুকিয়েছে। সেখানে প্রধান বিচারপতির বাড়ির ফটকে হামলা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা এবং পুলিশ হাসপাতালের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া– এসবগুলো সরকার তাদের এজেন্টদের দিয়ে করিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগেই বলে দিয়েছিলেন, বিএনপি ও বিরোধীদের সমাবেশের পরিণতি হবে শাপলা চত্বরের মতো। শামলা চত্বর বানানোর সমস্ত পরিকল্পনাকারী আওয়ামী লীগ সরকার।
তিনি আরও বলেন, কাজেই কি করতে চায় সরকার আর কি করছে সেটা বাংলাদেশের জনগণকে বুঝতে পারতে হবে। সরকার ভেবেছে আবার প্রতিদিন বাসে আগুন দিয়ে আগুন-সন্ত্রাসের লেভেল এঁটে বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করতে পারবে। এইবার বাংলাদেশের মানুষ সরকারের ছলচাতুরি ধরে ফেলেছে। কাজেই মানুষ আর এসব কথা বিশ্বাস করো না। মানুষ প্রস্তুত হচ্ছে গণজাগরণের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থান গড়ে তোলার জন্য।
সরকার পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তার সব দোষ বিরোধীদলের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সাকি বলেন, সর্বাত্মক দমন-নিপীড়ন চলছে। তারা এতটাই নির্লজ্জ যে এসব কাজ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে করছে। তারা ক্ষমতার নেশায় এতটাই মত্ত যে এখন আর কোনো কিছুতে রাখঢাক করে না।
সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের এমন দমন-নিপীড়নের পরও দেশবাসী হরতাল ও অবরোধ সফল করছে। তার জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই।
আওয়ামী লীগ তাদের পার্টি অফিসে পাহারা বসানোর লোক খুঁজে পাচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, গতকাল গণমাধ্যমে দেখলাম গত ১৫ বছরে হাজার-হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, সম্পদ গড়েছে সেটা রক্ষার জন্য ব্যস্ত আছে। তারা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস রক্ষার জন্য লোকজন জড়ো করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে পার্টি অফিস রক্ষার জন্য তেমন লোকজন পাচ্ছে না।
সাইফুল হক বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে জেলায় জেলায় শান্তি সমাবেশ শান্তি কমিটি গঠন করেছিল ঠিক সেইভাবে বর্তমান অবৈধ সরকার, ভোট ডাকাতের সরকার শান্তি সমাবেশ করছে এবং শান্তি কমিটি গঠন করছে নিজেদের রক্ষা করার জন্য। কিন্তু পাকিস্তানিরা শান্তি কমিটি করে নিজেদের শেষ রক্ষা করতে পারেনি। এ সরকার ও শান্তি সমাবেশ করে শান্তি কমিটি করে কোনোভাবে তাদের অবৈধ গদি রক্ষা করতে পারবে না।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সভাপতিত্বে এ সময় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু ও গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য আকবর খান।