নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি নেতাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কোথায় বিএনপির নেতারা? ২৮ অক্টোবরের পর শেখ হাসিনার সরকার নাকি থাকবে না! কোথায় গেলেন গয়েশ্বর? রিজভী তো গুহায় গেছেন।
শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিতে এতো বীর পুরুষ! ২৮ তারিখের পর নাকি শেখ হাসিনা সরকারকে খুঁজে পাওয়া যাবে না! এখন তো তাদেরই খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন রিজভী গেছে গুহাতে! গুহা থেকে প্রেস কনফারেন্স করে!
তিনি বলেন, খেলা হবে। ঢাকায় খেলা হবে, চট্টগ্রামে খেলা হবে, সিলেটে খেলা হবে, খুলনায় খেলা হবে, রংপুরে খেলা হবে, বরিশালে খেলা হবে। প্রস্তুত…. সতর্ক পাহারায় আপনারা আছেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ, খেলা হবে। কোয়াটার ফাইনাল হয়ে গেছে, আমরা জিতে গেছি। সামনে সেমি ফাইনাল, তারপরে ফাইনাল হবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। ঠিক আছে? সব রেডি তো? বাংলার মানুষ ফাইনাল খেলার জন্য প্রস্তুত। কোথায় গেল তাদের (বিএনপি) লাফালাফি? তারা বলেছিল- ২৮ তারিখের পর শেখ হাসিনা থাকবে না। তিনি (শেখ হাসিনা) তো আগামীর বিজয় বার্তা নিয়ে বসে আছেন।
২৮ অক্টোবর ‘সরকার উচ্ছেদে বিএনপির আল্টিমেটাম’-এর প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোথায়… বাড়াবাড়ি, লাফালাফি কোথায়? ২৮ তারিখ, তারপরে ২৯, ৩০, ৩১। নভেম্বরের আজ ৪ তারিখ। শেখ হাসিনা নির্ধারিত সময়ে মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের শুভ উদ্বোধন করেছেন। তিনি আমাদের উপরে উন্নীত করছেন। ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ, এই ঢাকা সিটি আর ১৫ বছর পরের বাংলাদেশ, এই ঢাকা শহর দিনে-রাতেরর পার্থক্য।’
তিনি বলেন, আজকের এই সময়ে একটি বিপদে আমরা আছি; সেটা বিশ্ব সংকট। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এখন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ, সুদানে যুদ্ধ, আজকে সারা দুনিয়া এই বিপদসংকুল পরিস্থিতে— বাংলাদেশও কিছুটা সমস্যায় আছে। কিন্তু মনে রাখবেন, যেই নেতা বাংলাদেশে জনগণের জন্য রাতে ঘুমান না। ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার বেশি ঘুমান না। তিনি জনগণের কথা বলেন, চিন্তা করেন, কাজ করেন। বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনার মতো এত সৎ নেতা, এত জনপ্রিয় নেতা, এত দক্ষ নেতা, এত সফল নেতা আপনারা কি আর দেখেছেন? শেখ হাসিনার মতো জনদরোদী আরেকজন নেতা কি আমরা পেয়েছি?
বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। যারা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে তাদের হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়।
বিএনপিকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোথাকার এক পাগল এনে বাইডেনের উপদেষ্টা বানিয়েছে। তারা (বিএনপি) মানেই ভুয়া। শেখ হাসিনার উন্নয়ন দেখে তাদের এখন অন্তর জ্বালা হচ্ছে। শেখ হাসিনা আসল নেতা, আর ওরা ভুয়া। আগামী নির্বাচনে এই ভুয়া অপশক্তিকে পরাজিত করে আবার শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা আছে বলেই বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে উন্নত হচ্ছে। শেখ হাসিনা ১৫ বছরের আগের বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। আমরা এখন বিশ্বের ৩৩তম পরমাণু রাষ্ট্র হয়েছি। যাকে সারা দুনিয়া সম্মান করে, আমরা তাকে খাটো করি। তারা (বিএনপি) শেখ হাসিনাকে একবার ধন্যবাদও জানাতে পারেনি।
আগামী নির্বাচন পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকার আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। জাতির স্বার্থে নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করতে হবে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলার মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবাসে। তাই নেত্রীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে। আজকের দিনে এটাই আমাদের শপথ।
প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তাদের সঙ্গে আমাদের গ্যাপ ছিল। সেই গ্যাপ পূরণের জন্য উরসুলা ভন ডের লেইনের (ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট) দাওয়াতে নেত্রী ছুটে গেছেন। সেখানেও তিনি যা কিছু পেয়েছেন, সেটা আমার দেশের জনগণের জন্য।’
এ সময় বিদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে বারবার নির্বাচিত করবো। তিনি বাংলাদেশকে যেখানে নিয়ে গেছেন, বিশ্ব নেতারা প্রশংসা করেন। আর আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদী একটি দল, তাদের দোসররা শেখ হসিনাকে সম্মান করতে পারে না। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য এত কিছু করেছেন। একটা ধন্যবাদও এরা কোনও দিন দিতে পারেনি। দুর্ভাগ্য আমাদের। শেখ হাসিনা একা নির্বাচন করলে ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ (ভোট) পাবেন। এই জনপ্রিয়তা ওরা হিংসা করে, জ্বালায় মরে।’
বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে এই জঙ্গীবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে আবারও বিজয়ী করতে হবে। ঠিক আছেৃ বাংলাদেশের গণতন্ত্র এদের (বিএনপি-জামায়াত) হাতে নিরাপদ নয়। এরা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবে, রক্তের বন্যা বইয়ে দিবে, লাশের পাহাড় সৃষ্টি করবে। এই অপশক্তির হাতে আমরা বঙ্গবন্ধুর লাখো শহীদের বাংলাদেশকে তুলে দিতে পারি না। সে জন্য বাংলার মানুষ ফাইনাল খেলার জন্য প্রস্তুত। সারা বাংলায় খেলা হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন— আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
যৌথভাবে জনসভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ প্রমুখ।