আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বন্দী অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মিয়ানমারের সাবেক নেত্রী অং সান সু চি। চিকিৎসার সু চি কারাগারের বাইরের চিকিৎসক এর শরনাপন্ন হওয়ার আবেদন করলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে জান্তা সরকার।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৮ বছর বয়সী এই নোবেল বিজয়ী বর্তমানে কারাগারের চিকিৎসকের কাছেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র জানায়, অং সান সু চির মাড়ি বেশ ফুলে গেছে এবং এই কারণে তিনি ভালোভাবে খেতে পারছেন না। এছাড়া বমিও হচ্ছে এবং এর সঙ্গে মাথা ঘোরা ও সামান্য পরিসরে অজ্ঞান বা নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন। তিনি ঠিক মতো খেতে পারছেন না। মাথা ঘুরানো ও বমি ভাবও রয়েছে তার।
রয়টার্স বলছে, নোবেলজয়ী মিয়ানমারের এই নেত্রীর বর্তমান বয়স ৭৮ বছর এবং বাইরের চিকিৎসকের পরিবর্তে কারাগার বিভাগের ডাক্তার দিয়ে বর্তমানে সু চির চিকিৎসা করা হচ্ছে।
রয়টার্স বলছে, বিষয়টি বেশ সংবেদনশীল হওয়ায় গ্রেপ্তারের ভয়ে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ওই সূত্রটি। এছাড়া মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মুখপাত্রের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।
তবে এই বিষয়ে সামরিক জান্তার মুখপাত্রের কোনো মন্তব্য পায়নি রয়টার্স।
২০২১ সালের শুরুর দিকে সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ারমারের সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই কারাগারে বন্দি আছেন সু চিসহ অনেক নেতাকর্মী। এখনও দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলমান।
১৯টি মামলার রায়ে ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন সু চি। যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। চলতি বছর জুলাইয়ে নেপিদোর কারাগার থেকে গৃহবন্দী করা হয় সু চিকে।
১৯টি ফৌজদারি অপরাধে ২৭ বছরের সাজার সম্মুখীন হয়েছেন সু চি। উসকানি ও নির্বাচনী জালিয়াতি থেকে শুরু করে দুর্নীতি পর্যন্ত বহু অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। যদিও এসব অভিযোগ সু চি অস্বীকার করেছেন এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে আপিল করছেন।
মিয়ানমারের নির্বাসিত সরকারকে বলা হচ্ছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট। সামরিক জান্তা বিরোধী ও সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারের নেতা-কর্মী ও কর্মকতারা এই সরকারের অংশ। তাদের ছায়া সরকার হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ছায়া সরকারের মুখপাত্র কিয়াও জাও বলেন, আন্তর্জাতকি সম্প্রদায়ের উচিত সু চিসহ সব রাজনৈতিক বন্দিদের সু-চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে জান্তা সরকারকে চাপ দেওয়া।
ইতোমধ্যে অনেক সরকার সু চিসহ হাজারো রাজনৈতিক বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এরপর বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।
অং সান সু চিকে ইতোমধ্যেই ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অবশ্য মাসখানেক আগে সু চির ৫টি অপরাধ ক্ষমা করার ঘোষণা দেয় দেশটির জান্তা সরকার। এতে তার জেলের মেয়াদ ছয় বছর হ্রাস পায়। যদিও নিজের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগই অস্বীকার করেছেন সু চি।
তবে মিয়ানমারের জান্তা জোর দিয়ে বলেছে, সু চির বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ বৈধ এবং স্বাধীন আদালতের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সাজা দেওয়া হয়েছে।